অনেক সময় ঘরের চাবিটা কোথায় রেখেছি, সেটাই আমরা ভুলে যাই। বন্ধুর নামও ভুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে অনেকের। আবার ঘরে ঢুকে ভুলে যাই কী করতে ঘরে ঢুকেছি! ঘটনাগুলো আমাদের সবার পরিচিত। অনেকেই মনে করেন, এই স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া বয়স বেড়ে যাওয়ার একটা অংশ; এর থেকে রেহাই মিলবে না। তবে কয়েকটি বিষয় নিয়মিত চর্চা করলে এই স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া খানিকটা ঠেকানো সম্ভব—
নতুন নতুন ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করুন
সকালে উঠে যে ঘ্রাণ আপনি পান, তা আপনার মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। রোজ সকালে চা কিংবা কফির স্বাদ না নিয়ে পাউরুটি বা কেকও খেতে পারেন। কিংবা চাইলে কোনো ফুলের বাগানে গিয়ে রংবেরঙের নানান জাতের ফুলের ঘ্রাণও বুকভরে নিয়ে আসতে পারেন। এসব কাজ মস্তিষ্ককে স্নায়বিকভাবে সক্রিয় করে তোলে।
সব্যসাচী হওয়ার চেষ্টা করুন
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ডান হাতে কাজ করতে পারদর্শী। আবার কেউ বাঁহাতি। কলম ধরে লেখা, দাঁত ব্রাশ করা, খাবার খাওয়া কিংবা চুল আঁচড়ানো—এ ধরনের কাজগুলো মূলত শক্তিশালী হাতটি দিয়েই করা হয়। আপনি যদি ডানহাতি হন, তাহলে ঠিক ওই কাজই একটু কষ্ট হলেও বাঁ হাতে করুন। বাঁহাতিরা ঠিক এর উল্টোটা করুন। এককথায় দৈনন্দিন কাজগুলো সব্যসাচী হয়ে করার চেষ্টা করুন। সব্যসাচী হয়ে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করলে আমাদের মস্তিষ্ক স্নায়বিক ও প্রতিবর্তী কাজে দক্ষতা অর্জন করে।
চোখ বন্ধ করে কাজ করার চেষ্টা করুন
কিছু কিছু কাজ চোখ বন্ধ করে করার চেষ্টা করতে পারেন। গোসল করা, কাপড় পরা, দরজা খোলা কিংবা ড্রয়ারে চাবি খোঁজার মতো কাজগুলো চোখ বন্ধ করে আন্দাজে করার চেষ্টা করুন। এভাবে না দেখে কাজ করলে মস্তিষ্কের যে অংশ সচরাচর নিষ্ক্রিয় থাকে, তা সক্রিয় হয়; সেই সঙ্গে স্পর্শানুভূতি বৃদ্ধি পায় এতে।
উল্টো করে দেখার চেষ্টা করুন
না, আপনাকে উল্টো হতে হবে না। ঘরের ক্যালেন্ডার, ফ্রেমে বাঁধানো যেকোনো ছবি, শিল্পকর্ম, ঘড়ি কিংবা ফ্রিজের গায়ে সেঁটে রাখা কাগজের নোট—এসব উল্টো করে রাখুন। এতে আমাদের ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সকে (মস্তিষ্কের সেরিব্রাল কর্টেক্সের একটি এলাকা, যা ভিজ্যুয়াল তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে) বেশ পরিশ্রম করতে হয় এবং থ্যালামাসকে (মধ্যমস্তিষ্ক এবং মস্তিষ্কের বাইরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত একটি দ্বিপ্রতিসম কাঠামো) মস্তিষ্কের সঠিক জায়গায় সিগন্যাল পাঠাতে নির্দেশ দেয়। এটি মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকার বয়ে আনে।
সকালের কাজগুলোয় পরিবর্তন আনুন
সকালে ঘুম থেকে উঠে আগে হাতমুখ ধুয়ে বা গোসল সেরে নাশতা করেন অনেকে। এই নিয়মে একটু পরিবর্তন আনুন। ঘুম থেকে উঠে আগে নাশতা করুন। পরে তৈরি হয়ে বাইরে বেরিয়ে পড়ুন। চাইলে নাশতার মেনুতেও পরিবর্তন আনতে পারেন। রোজকার জীবনের ছন্দে এই কিঞ্চিৎ পরিবর্তন মস্তিষ্ককে একটি জাগরণী বার্তা দেয়।
নতুন শখের চর্চা করুন
একাধিক ইন্দ্রিয় নিয়োজিত থাকে—এমন শখের কাজের চর্চা আপনার মস্তিষ্কের জন্য বেশ উপকার বয়ে আনে। সৃজনশীল লেখালেখি করা কিংবা বই পড়া এ ধরনের কাজের ভালো উদাহরণ।
ঘুরে বেড়ান
ঘরের বাইরে যত পারুন ঘুরে বেড়ান। শহরের কোনো পার্কে, দর্শনীয় কোনো স্থানে কিংবা অজপাড়াগাঁয়ের কোনো এক গ্রামে গিয়ে ঘুরে আসুন। যেখানেই যান না কেন, সেখানকার পরিবেশ-প্রকৃতির চারপাশ থেকে পুরোটা গ্রহণ করুন। পারলে কোথাও গিয়ে শান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে বুকভরে শ্বাস নিন। চোখ বাদে বাকি ইন্দ্রিয় দিয়ে বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার চারপাশে কী কী ঘটছে।
নতুন ভাষা শিখুন
সন্ধ্যাকালীন কোর্স করে কিংবা ডুওলিঙ্গোর মতো অ্যাপে নতুন ভাষা শিখে নিতে পারেন। নতুন ভাষা শেখার এই প্রক্রিয়া মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
নিজের দিগন্ত বিস্তৃত করুন
নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণে গেলে অচেনা জায়গা সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। নতুন জায়গার ঘ্রাণ, শব্দ, দৃশ্য গ্রহণ করতে আপনার মস্তিষ্কে কোনো চাপ তৈরি হলে বুঝবেন, এতে আপনার উপকারই হচ্ছে।
নতুন স্বাদ গ্রহণ করুন
প্রতি মাসে অন্তত একবার ভিনদেশি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। সকালের নাশতা বা রাতের খাবারে নতুন কোনো মেনু রাখুন। উপকরণগুলো ভিন্ন ভিন্ন দোকান থেকে কিনুন। এভাবে প্রচলিত ধারার থেকে বিচ্যুতি আপনার মস্তিষ্ককে আরও প্রাণবন্ত করবে।