বাজারে অ্যাংকর ডালের পাশাপাশি অন্যান্য ডালের দামও এখন চড়া। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি বেড়েছে মুগ ডালের দাম। বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন থামছেই না। এক পণ্যের দাম সামান্য কমলে অন্য আরেক পণ্যের দাম বাড়ে লাফিয়ে। নতুন করে এবার বাড়ল অ্যাংকর ডালের দাম। বাজারে এ ডাল নিম্ন আয় বা গরিব মানুষের ডাল হিসেবে পরিচিত। কম খরচের হোটেল-রেস্তোরাঁয় এই ডালের ব্যবহার বেশি। পেঁয়াজু ও বেগুনির উপকরণ বেসন তৈরিতেও এই ডাল ব্যবহৃত হয়। মূল্যবৃদ্ধির পর এখনো এটিই বাজারের সবচেয়ে কম দামের ডাল। বুটের ডালের মতো দেখতে অ্যাংকর ডালের বড় অংশই আমদানিনির্ভর।
বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে অ্যাংকর ডালের চাহিদা কিছুটা কমেছে। তাতে কমেছে আমদানিও। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে অ্যাংকর ডাল (মোটর ডাল) আমদানি হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার টন। এর আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৭৫ হাজার টন। এর মানে গত ছয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬১ হাজার টন অ্যাংকর ডাল কম আমদানি হয়েছে। আমদানি কমার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তাতে গত এক মাসে পণ্যটির দাম বেড়েছে। সামনে পবিত্র রমজান মাস। এই মাসে বেসনের চাহিদা বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে।
বাংলাদেশ পাইকারি ডাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শফি মাহমুদ সম্প্রতি বলেন, মটর ডালের বড় উৎস ইউক্রেন থেকে ডাল আমদানি এখন প্রায় বন্ধই বলা যায়। অস্ট্রেলিয়া থেকে আনার সুযোগ থাকলেও ডলার-সংকটের কারণে ছোট আমদানিকারকেরা এলসি (ঋণপত্র) খুলতে পারছেন না। তাতে আমদানি কমে গেছে। এর প্রভাব পড়ছে বাজারে। পর্যাপ্ত এলসি খোলা গেলে বাজারে সংকট থাকবে না। তখন দাম কমে আসবে বলে মনে করেন তিনি। ঢাকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল মঙ্গলবারের বাজারদর অনুযায়ী, খুচরা বাজারে গত এক মাসে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডালের দাম ৫ টাকা বেড়েছে। টিসিবির হিসাবে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খুচরায় মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল বর্তমানে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে এ দাম ছিল ৬৫-৭৫ টাকা। সেই হিসাবে গত এক মাসে অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশের বেশি।
পুরান ঢাকাভিত্তিক ডাল আমদানিকারক জাহিদ হোসেন বলেন, বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭২ টাকা। বাজারে সব ডালের দাম এখন বাড়তির দিকে। দাম বেড়ে যাওয়ায় অ্যাংকরের মতো অন্যান্য ডালের বেচাকেনাও কমে গেছে। চাহিদানুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় দেশে বছরে ১৩-১৪ লাখ টন বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি করতে হয়। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নেপাল থেকে দেশে বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি হচ্ছে। সম্প্রতি ভারত থেকেও ডাল আমদানি শুরু হয়েছে। করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর আগপর্যন্ত বাজারে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডালের দাম ছিল ৫০ টাকার নিচে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি। অ্যাংকর ডাল কখনো এত দামে বিক্রি হতে দেখা যায়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের পর থেকে বাজারে অবশ্য সব ধরনের ডালের দামই কমবেশি বেড়েছে।
তবে অন্য ডালগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে বেশি বেড়েছে মুগ ডালের দাম। টিসিবির হিসাবে, মানভেদে প্রতি কেজি মুগ ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৭০ টাকায়। এক মাস আগেও এ দাম ছিল ৯৫ থেকে ১৩৫ টাকা। অর্থাৎ গত এক মাসে মুগ ডালের দাম বেড়েছে ২৮ শতাংশের বেশি। গত এক মাসে মানভেদে ছোলার দাম বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশের মতো। আর মোটা, মাঝারি ও সরু দানার মসুর ডাল বেশ কয়েক মাস ধরেই উচ্চ মূল্যে স্থিতিশীল রয়েছে। রাজধানীর মগবাজার-বাংলামোটর রোডের ফুটপাতে খাবার বিক্রেতা ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার এখানে ক্রেতারা মূলত ভ্যান ও রিকশাচালকের মতো স্বল্প আয়ের মানুষ। তাঁদের জন্য তাই কম দামের অ্যাংকর ডাল রান্না করি। আগে এক বাটি ডাল বিক্রি করতাম ৫ টাকা। দাম বেড়ে যাওয়ায় সেটা এখন ১০ টাকা রাখি। অবশ্য পরিমাণে আগের থেকে একটু বেশি দিই।’