কথায় বলে, কথায় কথা বাড়ে। রোজ কথার পিঠে কত-না কথা বলি আমরা। কিন্তু একটা কথার প্রভাব কত দূর গড়াতে পারে, অনেক সময়ই তা আমরা ভেবে দেখি না। অথচ কথা, কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গির ইতিবাচকতা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে আপনি মা-বাবা, জীবনসঙ্গী, সন্তান, আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু কিংবা একেবারে অচেনা মানুষ—যাঁর সঙ্গেই কথা বলুন না কেন! কথা দিয়েই আপনি মানুষের মন জয় করতে পারেন, এমনকি কেবল কথার কারণে আপনি অনেক ক্ষেত্রে পেতে পারেন বাড়তি সুবিধাও। জীবনকে সহজ করতে আলাপচারিতার এই নিয়মগুলো মেনে চলতে পারেন।
‘ইগো’ মুছে এগিয়ে যান
বয়সে বা মর্যাদায় আপনি হয়তো ‘বড়’, তাতে কী? সবার সঙ্গে সহজভাবে কথা বলুন। নিজে থেকে সম্ভাষণ জানান। অতিরিক্ত ভারিক্কি কথাবার্তা থেকে খুব ভালো কিছু হয় না। সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলার চর্চা করুন। অফিসের বড় কর্মকর্তার সঙ্গেই হোক কিংবা হোক একজন রিকশাচালক, নিজের কথার ধরন একেবারে উল্টে ফেলবেন না। অপর পক্ষের মানুষটা বদলালেও আপনি কিন্তু ‘আপনি’ই থাকছেন।
আগ্রহের জায়গা খুঁজে বের করুন, প্রশংসা করুন
যাঁর সঙ্গে বেশ লম্বা একটা সময় আলাপ করতে হবে, তাঁর আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন। তাঁর প্রশংসা করুন। নিজের ভালো শুনতে কে না পছন্দ করে! অন্যের প্রশংসা করলে কথা এগিয়ে নিতে আপনার সুবিধা হবে। কাজের কথাটা বলতেও পারবেন সহজে। প্রাসঙ্গিক কোনো মজার গল্পও বলতে পারেন। বলিউড তারকা ক্যাটরিনা কাইফ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে প্রায়ই একটা কথা বলেন। বলেন, ‘আপনি যেটা বলবেন, সেটা শুনে যদি কেউ কষ্ট পায়, তাহলে কথাটা শেষ মুহূর্তে হলেও ফিরিয়ে নিন। ভালো কথা বলুন, তা না হলে মুখ বন্ধ রাখুন।’
শব্দচয়নে সতর্ক হোন
একই কথা নানান শব্দ দিয়ে বলতে পারেন। কোন শব্দটা বাছাই করবেন, তার ওপরই নির্ভর করছে কী হতে পারে এর প্রতিক্রিয়া। ধরা যাক, কেউ কোনো মন্দ কাজ করেছেন। আপনি যদি চট করে বলে বসেন, ‘এ–ই তোমার শিক্ষা–দীক্ষা!’ তাহলে কিন্তু আপনি তাঁর ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ার চেয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে ফেললেন বেশি! বরং কোমল স্বরে বলুন, তাঁর ঠিক কোন কাজটার কারণে কার কোন অসুবিধাটা হচ্ছে।
মেকি ভাব ফেলে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন
কথা বলার সময় এদিক-ওদিক তাকাবেন না। যাঁর সঙ্গে কথা হচ্ছে, তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। তাঁর প্রতি মনোযোগ দিন। এমন যেন মনে না হয় যে আপনি কেবল কথা বলার জন্যই বলছেন। যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, তিনি যেন নিজেকে গুরুত্বহীন মনে না করেন। সহজ-স্বাভাবিক রাখুন আপনার দেহভঙ্গি।
কথার প্রস্তুতি
কথা বলার প্রস্তুতি নেওয়াটাও অনেক জরুরি। কী বলবেন, কীভাবে বলবেন, অপর পক্ষের সঙ্গে মতানৈক্য হলে কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবেন, গুরুত্বপূর্ণ কথোপকথনের আগে এসব বিষয় ভেবে রাখুন। দরকারে ওই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পড়াশোনা করে রাখুন।
বিশ্বাসভঙ্গ করবেন না
ছোট–বড় কারও বিশ্বাসভঙ্গ করবেন না। মিথ্যা বলবেন না। একজনের সম্পর্কে অন্যজনের কাছে খারাপ কথা বলবেন না। বিশ্বাস যদি একবার ভেঙে যায়, তাহলেই মুশকিল।
ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখুন
‘বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচ্যগ্র মেদিনী’—এমন মনোভাব পরিত্যাগ করুন। আপনার সহকর্মী হয়তো পারিবারিক সমস্যায় আছেন। নিজেই খানিকটা বাড়তি চাপ নিয়ে তাঁকে সাহায্য করতে পারেন। আপনার এই এগিয়ে যাওয়া কিংবা ‘আমি সামলে নিচ্ছি এদিকটা’—এমন একটা আশ্বাসবাণীতে আপনার কাজের পরিবেশ সুন্দর থাকবে।
আবেগের অবমূল্যায়ন করবেন না
কেউ দুঃখের মধ্য দিয়ে গেলে চট করে বলে বসবেন না, ‘আমি বুঝতে পারছি তোমার কেমন লাগছে’। বরং বলতে পারেন, ‘এটা তো ভীষণ কষ্টদায়ক’। কারণ, অন্যের অনুভূতি কিন্তু আপনি তাঁর জায়গা থেকে অনুভব করতে পারবেন না। আপনি কেবল ধারণা করতে পারেন।