Skip to content

বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না সরকারি কর্তারা

    বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না সরকারি কর্তারাprothomasha.com

    বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তবু সরকারি কর্মকর্তারা এ প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছেন না। কোনো কোনো দপ্তর থেকে বিদেশ ভ্রমণ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। এমন ঘটনা ঘটেছে ‘বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন’ প্রকল্পে। এর ফলে এ প্রকল্পে শুধু ব্যয়ই বাড়বে না, মেয়াদও বাড়বে। তবে এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশন। ব্যয় বাড়ানো তো দূরের কথা, আগের বরাদ্দসহ বিদেশ সফরের পুরো বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রকল্পের কেনাকাটা সরকারি বিধি অনুযায়ী করতে ৩ সদস্যের বাজারদর নির্ধারণ কমিটি গঠনের সুপারিশ দেওয়া হবে। ২ ডিসেম্বর প্রস্তাবটি নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। সেখানে নানা খাতের ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে প্রশ্নের মুখে পড়বেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। খবর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রের।

    এদিকে শেষ সময়ে এসে আলোচ্য প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনীতে ২ বছর মেয়াদ এবং ২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। এর ফলে তিন বছরের বাস্তবায়নে লক্ষ্য থাকলেও এখন এতে যাবে ৯ বছর।

    সেই সঙ্গে খরচ বাড়বে মোট ৮৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যদিও ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি নেই প্রকল্পটিতে।

    এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য ও পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ভূমি জরিপের মতো একটি প্রকল্পে কী কারণে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ লাগবে সেটিই বড় প্রশ্ন। এছাড়া প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত যে কর্মকর্তারা এখনো সরকারের মনোভাব এবং বিদ্যমান অর্থনৈতিক অবস্থা অনুধাবন করতে পারছেন না তাদের কঠোরভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু বরাদ্দ বাদ দিলেই হবে না, এ ধরনের প্রস্তাবের জন্য জবাবদিহিতাও নিশ্চিত করা উচিত।

    সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৪০ জন কর্মকর্তার বৈদেশিক প্রশিক্ষণের জন্য বরাদ্দ ধরা ছিল ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। জুন পর্যন্ত এ খাতে এক টাকাও খরচ হয়নি। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীতে এসে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা একই থাকলেও এ খাতে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন বলছে, অর্থ বিভাগের জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী বৈদেশিক প্রশিক্ষণের সুযোগ নেই। তাই এটি বাদ দেওয়া প্রয়োজন। পিইসি সভায় এমন সুপারিশ দিতে যাচ্ছে কমিশন। এছাড়া আরও যেসব খাতের ব্যয় প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে সেগুলো হলো-প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীতে অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ খাতে ১৪০ জনের বিপরীতে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এখন দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবে ১২ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৭৭ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি (প্রতিষ্ঠান) কেনা বাবদ ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৭৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। এসব খাতে ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়।

    পরিকল্পনা কমিশনের শিক্ষা উইংয়ের মতে, প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনীর ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কার্যকর কোনো এক্সিট প্ল্যান নেই। প্রকল্পের কার্যক্রম টেকসই ও কার্যকর করার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলমান রাখার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা বা বছরভিত্তিক পরিকল্পনা নেই। পাশাপাশি ১২ শতাংশ ডিসকাউন্ট রেট ধরে প্রকল্পের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ নির্ধারিত অনুচ্ছেদে দেওয়া হয়নি।

    এসব বিষয়েও পিইসি সভায় সুপারিশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। ২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পিইসি সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষে বলা হবে যে, প্রকল্পে সব পণ্য, কাজ ও সেবা কেনার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসরণ করে ক্রয় পরিকল্পনা গঠন করতে হবে। সেই সঙ্গে ৩ সদস্যের একটি বাজারদর নির্ধারণ কমিটি গঠন এবং এর প্রমাণ সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে যুক্ত করতে হবে।

    প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ ভূমি জরিপ শিক্ষার উন্নয়ন’ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ৩৪০ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এখন দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে আবারও ২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রকল্পের মূল মেয়াদ ছিল ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৩ বছর। পরে দুই দফায় ৪ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। এখন নতুন করে আবারও ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকে জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের ২৯ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।

    প্রকল্পের আওতায় মূল কার্যক্রম হচ্ছে-ভূমি অধিগ্রহণ, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ এবং মালটিপারপাস ভবন তৈরি করা। এছাড়া ছাত্রাবাস তৈরি, ছাত্রীনিবাস নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মচারীদের ডরমেটরি নির্মাণ, বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি, প্রকৌশল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং আসবাবপত্র কেনা হবে।