Skip to content

কেন গুম করা হয়েছিল— জানেন না সালাহউদ্দিনপুত্র হুম্মাম

    কেন গুম করা হয়েছিল— জানেন না সালাহউদ্দিনপুত্র হুম্মামprothomasha.com

    বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী সাত মাস আয়নাঘরে ছিলেন। সেখানে থাকাবস্থায় লোমহর্ষক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। মানসিক পীড়া, খাবারের কষ্টে অনেক সময় আত্মহত্যার কথায় চিন্তা করতেন হুম্মাম। তাকে কেন গুম করা হয়েছিল তা আজও জানেন না এই তরুণ নেতা।  তিনি আশা করেন, আয়ানাঘরকে যেন পলিটিক্যাল টুলস হিসেবে ব্যবহার করা না হয়। যুগান্তর মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাকারে তিনি এসব কথা বলেন।

    আয়নাঘরের সেই দিনগুলোর দুঃস্মৃতি সামনে এনে হুম্মাম কাদের বলেন, গুমের পুরো জিনিসটা কিন্তু পূর্বপরিকল্পিত। একটা অপারেশন ছিল—আমি তো তখন জানতাম না। আমাকে প্রথম গায়েব করা হলো। আমার পরপরই জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ছেলে মীর আরমান এবং গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমীকে গুম করা হলো। আমাদের সবার কানেকশন একটাই— আমাদের বাবারা সবাই সিনিয়র রাজনীতিবিদ ছিলেন এবং আমি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। আযমী ভাই সাবেক আর্মি সদস্য এবং আরমান রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এই জিনিসটি নিয়ে আমরা কনফিউশনে ছিলাম— আমাদের তিনজনকে কেন গুম করা হলো। এখন বুঝতে পারছি— তারা চাচ্ছিল যে পরিবারের লিডারদের হত্যা করা হয়েছে; পরবর্তী প্রজন্ম যেন প্রতিবাদ করার সাহস না করে। তারা চাচ্ছিল যে, পরিবারগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হোক। ছাড়া পেয়েছি আল্লাহর অনেক রহমত, মায়ের দোয়া, মানুষজনের দোয়ায়। এমন কোনো বাড়ি ছিল না যেখানে আম্মা যাননি। আমার মনে হয় যে, আমাদের আত্মীয়স্বজন যারা আর্মিতে আছেন, রাজনীতিতে আছেন— সবার কাছে আম্মা গিয়ে গিয়ে খোঁজ নিতে চেষ্টা করেছিলেন। জানি না কার তদবিরে বা কার কথায় আমার গুমের পিরিয়ডটা সাত মাস ছিল। বাকিদের আপনারা দেখেছেন আট বছর পর ছাড়া পেয়েছিলেন। আমি এখন পর্যন্ত জানি না আমাদের কেন গুম করা হলো আমাকে কেন তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হলো, তাদের কেন আট বছর পর ছাড়া হলো— এখন পর্যন্তর কোনো তথ্য জানি না।

    হুম্মাম বলেন, এই গুম কমিশন যারা কাজ শুরু করেছে- আশা করছি তাদের মাধ্যমে আমরা কিছু জবাব পেতে পারি আমরা রহস্যটা কী ছিল।

    তিনি বলেন, আমাকে যে সেলের মধ্যে রাখা হয়েছিল – আমিই প্রথম না; সেখানে অনেক মানুষকে রাখা হয়েছিল। আমি দেখতে পেরেছিলাম- সেখানে দেয়ালে খুদাই করে করে লেখা বাংলায় লেখা ছিল— একজন লিখেছিলেন ‘আপনাকে এখানে কতদিন রাখা হবে কেউ বলবে না’।  সেই লেখা দেখে ভয় পেতাম আমি। পরবর্তীতে মারধর থেকে শুরু করে মেন্টাল টর্চার যেটা ওটা সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল- আপনাকে এসে নিয়ে যাবে মেরে ফেলার জন্য।

    বিএনপির নির্বাহী কমিটির এই সদস্য বলেন, অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে- অনেক সময় চিন্তা করতাম মরে গেলেই হয়তো ভালো। সময় কীভাবে করে কাটতো- অনেক দিন আমি বসে বসে পরিকল্পনা করতাম-কীভাবে নিজে নিজের জীবন নিয়ে ফেলব। আমার সেখানে একটা গামছা ছিল।  সেই গামছার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চিন্তা করতাম- সেই গামছাকে ফাঁসির রশি বানিয়ে নিজেকে ফাঁসি দিয়ে দেই। যদি আমাকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া যায় সেখানে গ্লাস আছে- সেই গ্লাস দিয়ে নিজে গলা কেটে ফেলি বা হাত কেটে ফেলি। এভাবে যদি নিজেকে মেরে ফেলি। কারণ আর সহ্য হচ্ছিল না।

    আয়নাঘরের খাবার নিয়ে তিনি বলেন, সকালবেলা একটা রুটির পিস দেওয়া হতো। মাঝে মধ্যে একটা ডিম দেওয়া হতো। দুপুরে এক পাহাড় ভাত, কিছু সবজি আর এক টুকরা মাছ বা মুরগি বা এরকম কিছু একটা দিত— ওই এক টুকরাই দিত।  তবে ভাতের পরিমানটা অনেক বেশি। ওটা দিয়েই আপনার পেট ভরে রাখতে হবে।  আমি খেতে পারতাম না।

    হুম্মাম বলেন, আমার জীবনের একটা মাত্র গোল- বাংলাদেশে আর কোনো দিন আয়নাঘরের মতো আর কোনো ঘর না বানানো হয়। এই জিনিসটা আমার জীবনে লাইফ গোল হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনীতিতে যতদিন থাকব আমার লক্ষ্য শুধু একটাই থাকবে- রাজনীতি যেন এতো নোংরা না হয়ে যায় যে, এখানের আয়ানাঘরে মতো জঘন্য জিনিসকে পলিটিক্যাল টুলস হিসেবে ব্যবহার করবেন।