Skip to content

কেমন পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো

    কেমন পানীয় স্বাস্থ্যের জন্য ভালো prothomasha.com

    সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করা ভালো অভ্যাস। আর তৃষ্ণা পেলেই পানি পান করবেন। তবে খাবার খাওয়ার সময় পানি পান করবেন না। তাতে হজমপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। খাবার খাওয়ার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগে এবং খাবার শেষ করার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পর পানি পান করতে পারেন। আর খেয়াল রাখতে হবে, কোনো বেলায়ই একসঙ্গে অতিরিক্ত পরিমাণ পানি পান করা ঠিক নয়। আবার, দীর্ঘ সময় পানি পান না করেও থাকা উচিত নয়। কেউ কেউ ওজন কমাতে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে থাকেন। অর্থাৎ, ২৪ ঘণ্টার ভেতর বেশ লম্বা একটা সময় খাবার না খেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও কিন্তু যে সময় খাবার খাওয়া হচ্ছে না, সে সময় পানি খেতে হবে।

    পানি পান করা কেন এত জরুরি? কারণ, রক্তের একটা বিরাট অংশই পানি। আমাদের দৃষ্টির অগোচরে দেহের বিভিন্ন কোষে চলমান থাকে নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়া। সেসবের জন্য চাই পানি। তাই শরীরে পানি ও লবণের ভারসাম্য বজায় থাকা জরুরি। নইলে বাধে বিপত্তি। পানির ভারসাম্যের সঙ্গে সোডিয়ামের ভারসাম্যও জড়িত। পানি কিংবা লবণের ঘাটতি যেমন শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি এগুলোর আধিক্যেও শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই অতিরিক্ত পানি বা অতিরিক্ত লবণ গ্রহণও ঠিক নয়। এমনটাই জানান রাজধানীর গভর্নমেন্ট কলেজ আব অ্যাপ্লায়েড হিউম্যান সায়েন্সের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেহানা বেগম।

    জীবাণুমুক্ত, নিরাপদ পানি

    একজন প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ব্যক্তির রোজ আড়াই থেকে তিন লিটার পানি খাওয়া প্রয়োজন। আর সেই পানি হতে হবে নিরাপদ। অর্থাৎ, জীবাণুমুক্ত। পানি ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করা যায়। সঠিকভাবে ফিল্টার করা পানিও নিরাপদ। পানির মাধ্যমে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড কিংবা জন্ডিসের জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। এ ধরনের মারাত্মক রোগ এড়াতে সব সময়ই সতর্ক থাকা আবশ্যক। বন্যাদুর্গত এলাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা ফিটকিরি দিয়ে পানি জীবাণুমুক্ত করে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

    লেবু-পানি

    নিরাপদ পানি দিয়ে তৈরি স্বাস্থ্যকর পানীয় থেকেও পানির চাহিদার কিছু অংশ পূরণ করা যায়। পানির বিকল্প হিসেবে লেবু-পানি বেশ জনপ্রিয়। লেবু-পানি যেমন সহজেই তৈরি করা যায়, তেমনি তা সুস্বাদুও বটে। লেবুর খোসায় রয়েছে ভিটামিন সি। তাই খোসাসহ লেবুর টুকরা দিয়ে ডিটক্স পানি তৈরি করতে পারেন।

    আরও যত ডিটক্স পানি

    হালের জনপ্রিয় পানীয় ডিটক্স পানি। ডিটক্স পানি স্বাস্থ্যকরও বটে। একেক দিন একেক ধরনের উপকরণ দিয়ে ডিটক্স পানীয় তৈরি করতে পারেন। কোনো দিন কাঁচা হলুদ, কোনো দিন আদা দিয়ে তৈরি করতে পারেন এই বিশেষ পানীয়। আদা, লেবু আর ধনেপাতা দিয়েও হতে পারে দারুণ কোনো ডিটক্স পানি। কচি লাউয়ের ছোট একটি টুকরা আর এক ইঞ্চি আদা দিয়েও বানানো যায় ডিটক্স পানি, সপ্তাহে দুই দিন খেতে পারেন এই পানীয়।

    ডাবের পানি

    ডাবের পানি পটাশিয়ামের দারুণ উৎস। স্বাদেও অতুলনীয়। ঝাঁ ঝাঁ রোদ্দুরের দিনে ডাবের পানিতে যেমন প্রশান্তি মেলে, তেমনি বছরের অন্যান্য সময়ও খাওয়া যেতে পারে এই পানীয়। তবে ডাবের পানি পানের ক্ষেত্রে ব্যক্তির ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদি প্রসঙ্গ মাথায় রাখতে হবে।

    ফলের রস ও অন্যান্য

    পানির বিকল্প হিসেবে রোজ কোনো একটি ফলের রস খেতে পারেন। ফলেও থাকে পটাশিয়াম। টক, মিষ্টি, পানসে—বেছে নিতে পারেন যেকোনো ফল। বিটরুটের রসও খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে, টক ফল কাটার পর বা রস করার পর দীর্ঘ সময় ফেলে রাখতে নেই।

    ওরস্যালাইন

    ডায়রিয়া কিংবা বমির সমস্যায় ওরস্যালাইন দারুণ কার্যকর। অনেক বেশি ঘাম হলেও ওরস্যালাইন খাওয়া ভালো। তবে প্রয়োজন ছাড়া ইচ্ছেমতো ওরস্যালাইন খাওয়া ঠিক নয়।

    যেসব পানীয় খাওয়া বারণ

    • পানীয় তৈরির উপকরণে মাছি বা পোকামাকড় বসার সুযোগ পেলে জীবাণু ছড়ানোর ভয় থাকে। পানীয় তৈরির পরিবেশ ও পরিবেশনের পাত্র হতে হবে পরিষ্কার। তাই রাস্তার ধারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি পানীয় এড়িয়ে চলুন।

    • বাড়িতে পানীয় তৈরি করলেও লবণ বা চিনি যোগ করা থেকে বিরত থাকুন। বাড়তি লবণ বা চিনি কোনোটিই স্বাস্থ্যের পক্ষে কল্যাণকর নয়।

    • প্যাকেট বা বোতলজাত জুস এড়িয়ে চলুন। প্যাকেটে বা বোতলে পানীয়টি ভালো রাখতে প্রিজারভেটিভ যোগ করা হয়, থাকে বাড়তি চিনিও।

    • কোমল পানীয় বর্জনীয়। এগুলো উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন, কিন্তু এগুলো থেকে তেমন কোনো পুষ্টিই পাবেন না। কোমল পানীয় গ্রহণ করলে পানির উপকার যতটুকু পাওয়া যায়, তার চেয়ে বহুগুণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শরীর।