Skip to content

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল, ফলের প্রক্রিয়া কী

    এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা বাতিল, ফলের প্রক্রিয়া কী prothomasha.com

    এইচএসসি ও সমমানের স্থগিত পরীক্ষাগুলো আর নেওয়া হবে না। পরীক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বাকি পরীক্ষাগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মূল্যায়ন পদ্ধতি কী হবে, তা এখনো জানানো হয়নি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তবে শিক্ষার্থীরা সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন।

    পরীক্ষার্থীরা নতুন করে আর পরীক্ষা না নিয়ে এরই মধ্যে নেওয়া পরীক্ষা ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ফল প্রকাশ করার দাবিতে চার দিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। গতকাল দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারী পরীক্ষার্থীরা জিরো পয়েন্টের দিকের গেট দিয়ে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সচিবালয়ে ঢুকে পড়েন। তারা সচিবালয়ে ঢুকে ৬ ও ১১ নম্বর ভবনের মাঝামাঝি জায়গায় বসে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দাবি পূরণে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। এক ঘণ্টা পার হলে বিকাল ৪টার কিছু আগে পরীক্ষার্থীরা সবাই একযোগে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের ২০ তলায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।

    এরপর শিক্ষার্থীদের পক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাসহশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আব্দুর রশীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণায় পরীক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এরপর তারা সচিবালয় ত্যাগ করতে থাকেন।

    ২০২৪ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয় গত ৩০ জুন থেকে। এর মধ্যেই ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাতটি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বোর্ডের বেশ কয়েকটি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। এর পরই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথমে গত ১৮ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তারপর একসঙ্গে ২১, ২৩ ও ২৫ জুলাইয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এরপর ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু পরে জানানো হয়, ১১ আগস্ট পরীক্ষা হচ্ছে না

    শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র বলেছিল, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বিভিন্ন এলাকায় থানায় হওয়া হামলায় প্রশ্নপত্র রাখা ট্রাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য ১১ আগস্ট থেকে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছিল। সর্বশেষ আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। সেটি অনুমোদনও করা হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় বসতে নারাজ, স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত সোমবার থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এর মধ্যে যে কয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে, তার ভিত্তিতে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। শিক্ষার্থীদের দাবির পর গতকাল সকালে স্থগিত পরীক্ষাগুলো অর্ধেক নম্বরে এবং আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা-ও মানতে চান না। আন্দোলনের মুখে স্থগিত পরীক্ষাগুলো বাতিল করতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

    শিক্ষার্থীরা জানান, তারা মাত্র সাতটি পরীক্ষা দিতে পেরেছেন। নতুন করে রুটিন প্রকাশ করলে পরীক্ষা শেষ করতে আরও অনেক সময় লেগে যাবে। তখন তারা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মোটেও সময় পাবেন না। তাদের অনেক সহপাঠী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহত হয়ে এখনো হাসপাতালে। এখন পরীক্ষা নিলে তারা পরীক্ষায় অংশও নিতে পারবেন না। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বিকল্প উপায়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে মূল্যায়ন করার কথা বলছেন।

    ম্যাপিং পদ্ধতি : এর আগেও ২০২০ সালে বিশেষ পরিস্থিতিতে করোনা মহামারীর সময় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। তখন সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে মূল্যায়ন করে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করেছিল শিক্ষা বোর্ডগুলো। এ পদ্ধতিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের আগের অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলের গড় করে এইচএসসির ফল নির্ধারণ করা হয়েছিল। জেএসসি-জেডিসির ফলকে ২৫ এবং এসএসসির ফলকে ৭৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষিত হয়।

    সাধারণভাবে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার আবশ্যিক বিষয় বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমানের আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসিতে বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল। বিভাগ (গ্রুপ) পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত বা জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়।

    ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষায় বিভাগের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। মানবিক ও অন্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি বা সমমান পরীক্ষার গণিত এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ের প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি বা সমমান পরীক্ষার বিভাগভিত্তিক তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে এইচএসসির মানবিক ও অন্য বিভাগের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছিল।