ফেনীর মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি চলাকালে গুলিতে অটোরিকশাচালক সবুজ নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলায় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নিহতের ভাই মো. ইউসুফ বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ তিন থেকে চারশজনকে আসামি করে মামলাটি করেন।নিহত সবুজ লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার দক্ষিণ টুমচর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি ফেনী পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ চাড়িপুর সার্কিট হাউজের জামেয়া হাফসা মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায় থাকতেন।
মামলার আসামিদের মধ্যে ভারত পালানোর সময় আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট থেকে গ্রেপ্তার হওয়া নিজাম হাজারীর পিএস ও জেলা যুবলীগের সহ-সম্পাদক ফরিদ মানিক ওরফে পিএস মানিকও রয়েছেন। পাশাপাশি অপর আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ফেনী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী, দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন, ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন মজুমদার এবং ছাগলনাইয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল রয়েছেন।এ ছাড়া মামলায় সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান করিম উল্যাহ বিকম, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন, পরশুরাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী সাজেল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রশিদ মিলন, শর্শদী ইউপি চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঞা, ফাজিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপন, পাঁচগাছিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক লিটন, ধলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার আহমেদ মুন্সী, লেমুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ উদ্দিন নাসিম, ধর্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাকা, কাজিরবাগ ইউপি চেয়ারম্যান কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ, কালিদহ ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ডালিম, মোটবী ইউপি চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদকে আসামি করা হয়েছে।মামলার আসামিদের মধ্যে মাতুভূঞা ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদল, পৌরসভার কাউন্সিলর জয়নাল আবদীন লিটন হাজারী, আশরাফুল আলম গীটার, লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী, আমির হোসেন বাহার, কহিনুর আলম রানা, গোলাম মেহেদী আলম চৌধুরী রুবেল, হারুন উর রশিদ মজুমদার, বাহার উদ্দিন বাহার, আবুল কালাম, সাহাব উদ্দিন, সাবেক কাউন্সিলর মজিবুর রহমান ভূঞা, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল আদর, জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জিয়াউল আলম মিস্টার, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শরীফ উল্যাহর নাম রয়েছে।মামলার এজাহারে নিহতের ভাই ইউসুফ উল্লেখ করেন, গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তার ভাই সবুজ অংশ নেয়। ওইদিন দুপুর ২টার দিকে ফেনীর ট্রাংক রোড থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গুলি করলে সবুজ সার্কিট হাউস রোডের দিকে চলে যায়। সেখানে স্বপন মিয়াজী, জানে আলম, মাহবুবুল হক লিটন ও অর্নবের গুলিতে সবুজ লুটিয়ে পড়লে অপর আসামিরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে সবুজের মরদেহ ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে পুনরায় হামলার আশঙ্কায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি নিয়ে দাফন করা হয়।ফেনী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমীন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ফেনীর মহিপালে গুলিতে অটোরিকশাচালক সবুজ নিহতের ঘটনায় তার ভাই মো. ইউসুফ বাদী হয়ে থানায় ৬৫ জনের নাম উল্লেখসহ তিন থেকে চারশজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় তদন্তপূর্বক আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।