Skip to content

আছাদুজ্জামানের অবৈধ দখলে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ

    আছাদুজ্জামানের অবৈধ দখলে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ prothomasha.com

    ঘুষ-দুর্নীতিতে আলোচিত ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধভাবে দখল করা জমিতে তৈরি মার্কেট ভেঙে ফেলা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে জমির প্রকৃত মালিক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন আহমেদ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক মিয়ার উত্তরসূরিরা ভেকু দিয়ে মার্কেট গুড়িয়ে দিয়ে জমিটি উদ্ধার করেন। এ সময় তাদের সহায়তা করেন স্থানীয়রা। আছাদুজ্জামানের দখলমুক্ত হওয়ায় এলাকার বাসিন্দারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা এটিএম নাসির উদ্দিন আহমেদ ওরফে আব্দুর রাজ্জাক মিয়া। তারই ১৫ শতাংশ জমি ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ২০১৭ সালে দখল করে রেখেছিলেন আছাদুজ্জামান মিয়া। রাতারাতি তৈরি করেছিলেন মার্কেট। স্থানীয়রা জানান, আছাদুজ্জামান যখন ডিএমপি কমিশনার ছিলেন তখন থেকেই তার গ্রামের এলাকায় বিভিন্ন মানুষের জমি দখল শুরু করেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা হওয়ায় কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পেত না।বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক মিয়ার জমিটির পাশে আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামান আল্পনার নামে জমি রয়েছে। সেই সুবাদে রাজ্জাকের ১৫ শতাংশ জমি দখল করেন তিনি। একপর্যায়ে রাতারাতি জমিটি দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাক মিয়ার ছোট ছেলে মো. রেজওয়ান জানান, ক্রয়সূত্রে তারা ১৫ শতাংশ জমি কেনেন, যা ১৯৯৭ সাল থেকেই তারা ভোগদখল করছিলেন। তবে সেই জমি দখলে নিতে মিথ্যা মামলা দেয় আছাদের স্ত্রী আল্পনা। ২০১০ সালে আদালতের রায় আসে তাদের পক্ষে। এরপর থেকে জমিটি অবৈধ দখল নিতে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন আছাদুজ্জামান।রেজওয়ান আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আছাদুজ্জামান মিয়া ডিএমপি কমিশনার হওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের জমিটি দখল করে নেয়। পাশাপাশি নানা ধরনের মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের পুলিশি হয়রানি করে। আজ সাত বছর পর স্থানীয়দের সহায়তায় আছাদের অবৈধ দখল থেকে জমিটি আমরা উদ্ধার করেছি।’গোপালপুর বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, এই আছাদুজ্জামান এলাকায় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অনেক অপকর্ম করেছে। এতদিন ভয়ে চুপ থাকলেও এখন একে একে সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছে। এখন আছাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা সোচ্চার।স্থানীয়রা জানান, আছাদ তার ভাগ্নে ইবরাহিম শেখ কলমের মাধ্যমে পুলিশে চাকরি দেওয়ার কথা বলে স্থানীয় অনেক যুবকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। কারও চাকরি তো হয়নি, উল্টো টাকা ফেরত চাইলে ভুক্তভোগীরা হয়রানি-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ক্ষমতার প্রভাবে আছাদুজ্জামান নিজের এলাকার মানুষকে যেমন মানুষ মনে করেনি, তেমনি শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ দাস হয়ে অনেক খারাপ কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতিসহ গুম-খুনের অভিযোগের শেষ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার আজ্ঞাবহ পুলিশ কর্মকর্তা আছাদকে পুরস্কৃতও করেন। অবসরে যাওয়ার পর তাকে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।আছাদ ডিএমপি কমিশনার থাকার সময় ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশ হেফাজতে থাকা খিলগাঁও থানা ছাত্রদল নেতা মো. নুরুজ্জামান জনিকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা হয়। এ ঘটনায় জনির বাবা মো. ইয়াকুব মামলা করেন। মামলায় আসামি করা হয় আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ১৫ পুলিশ কর্মকর্তাকে। কথিত বন্দুকযুদ্ধে জনিকে হত্যার কথা প্রকাশ্যে এলেও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদের বিরুদ্ধে এমন আরও গুম-খুনের অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের পরিবার এখন সেসব অভিযোগ প্রকাশ্যে আনতে পারে।সম্প্রতি আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ নিয়ে দেশের প্রায়সব সংবাদমাধ্যমে খবর আসে। গত জুনে দুদকে অভিযোগও জমা পড়ে। তবে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি রহস্যজনক কারণে দুর্নীতির নথিপত্র পেয়েও আছাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করেনি।দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর আছাদুজ্জামান মিয়াকে এলাকার মানুষ প্রকাশ্যে দেখেনি। ঢাকার নিকুঞ্জে নাবালক ছেলের নামে গড়া শতকোটি টাকা দামের বাড়িতে ছিলেন বলে জানা যায়। তবে ছাত্র আন্দোলন থেকে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক দফা দাবি ওঠার পর সুচতুর আছাদ সপরিবার আত্মগোপনে চলে যান।শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা দুর্নীতিবাজ আছাদুজ্জামানের নিকুঞ্জের বাড়িতে হামলা-চালান। তারা আছাদকে ‘পুলিশের কলঙ্ক’ ‘জাতির কলঙ্ক’ অভিহিত করে আছাদুজ্জামানের বিচার দাবি করেন।