Skip to content

বৃক্ষমেলার ৩৯ দোকানের ৩৮টিতে ফুচকা-কসমেটিকস, একটিতে গাছ

    বৃক্ষমেলার ৩৯ দোকানের ৩৮টিতে ফুচকা-কসমেটিকস, একটিতে গাছ prothomasha.com

    শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে ‘বন বিভাগের আয়োজনে’ চলছে ১৫ দিনব্যাপী বৃক্ষমেলা। মেলায় ফুসকা, চটপটি, কসমেটিকসসহ হরেক রকমের দোকান থাকলেও গাছের চারা বিক্রির দোকান রয়েছে মাত্র একটি। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

    গতকাল শনিবার সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই মাসের প্রথম দিন থেকে শরীয়তপুর বন বিভাগের আয়োজনে ও গোসাইরহাট উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন শহীদ মিনার মাঠে বৃক্ষমেলা চলছে। তবে মেলার ৩৯টি স্টলের মধ্যে ৩৮টি বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, ফুসকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনী ও শিশুদের খেলনা ও রাইড দিয়ে সাজানো।শিশুদের বিনোদনের জন্য মেলার একপাশে রয়েছে ভূতের বাড়ি। অন্যপাশে রয়েছে একটি মাত্র চারা গাছের দোকান।

    এদিকে মেলা থেকে স্টল প্রতি সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা ভাড়া তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্টল মালিকরা। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রশাসন বলছে, মেলায় আসা কোনো স্টলকে ভাড়া দিতে হবে না। অন্যদিকে, মেলার মূলফটকে ‘বন বিভাগ, শরীয়তপুর’ নাম লেখা থাকলেও গোসাইরহাটে এমন কোনো বৃক্ষমেলা বন বিভাগ আয়োজন করেনি বলে জানিয়েছে শরীয়তপুর বন বিভাগ। উপজেলা প্রশাসন বলছে, মেলাটির আয়োজক বন বিভাগ, সার্বিক সহযোগিতা করেছে উপজেলা প্রশাসন।

    স্থানীয়রা জানান, এই মেলা দিয়ে উপজেলায় বৃক্ষরোপণের কোনো উপকার হবে না। বরং মানুষ গাছের চারা রোপণ করার জন্য যে টাকা বরাদ্ধ রেখেছিল, সেই টাকায় বৃক্ষমেলা থেকে কসমেটিকস, প্রসাধনী কিনে আঁচার-ফুসকা খেয়ে বাড়ি যাবে।মেলায় আসা কয়েকজন জানান, গতকালও মেলায় এসেছিলেন তারা। মনে করেছিলেন বিভিন্ন ধরনের গাছ পাওয়া যাবে। কিন্তু কেনার মতো কোনো গাছ পাননি। তাদের মনে হয়েছে, বাণিজ্য মেলায় এসেছেন।

    গোসাইরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন শিকদার বলেন, ‘বৃক্ষমেলাটি কি আনন্দ মেলায় রূপান্তর হলো? এ প্রশ্ন আমার। আসলে যে উদ্দেশ্যে এখানে বৃক্ষমেলাটি আয়োজন করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। এটা নামে মাত্র বৃক্ষ মেলা বলেই আমি মনে করি। মেলার মাঠ ঘুরে আমি যা দেখলাম, এটা কখনো বৃক্ষ মেলা হতে পারে না। বৃক্ষমেলা যেন, বৃক্ষ মেলাই হয়, এই দাবি রাখছি।’

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্টলমালিক জানান, মেলায় বৃষ্টির কারণে তেমন বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে মেলা আয়োজক কমিটিকে।মেলার একমাত্র গাছের চারা বিক্রির স্টলের কর্মচারী রবিউল বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষ মেলার নৌকা ও নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ করে, গাছ কিনে না। আজ শুক্রবার তেমন বিক্রি হয়নি। গতকাল পর্যন্ত ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি।’

    গোসাইরহাট উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ঢালী বলেন, ‘আমি গত ৩০ জুন দায়িত্ব শেষ করেছি। আমার শেষ অফিসের দিন দেখেছি, ইউএনও মহোদয় মাঠে মেলার জন্য দোকান নির্মাণ করছেন। কিন্তু আমি জানতাম না, এখানে কিসের মেলা হবে। বৃক্ষমেলায় সাধারণত গাছের চারা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু মেলায় মাত্র একটি নার্সারির দোকান থাকবে, এ কেমন বৃক্ষমেলা? এটা কখনোই বৃক্ষমেলা হতে পারে না।’

    শরীয়তপুর বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘মূল ফটকে কী লেখা রয়েছে তা আমি জানি না। গোসাইরহাটে মেলা করার জন্য বন বিভাগের কোনো বরাদ্দ নেই। কোনো আয়োজনও বন বিভাগ করেনি। গোসাইরহাটের বৃক্ষমেলাটির আয়োজন হয়ত উপজেলা প্রশাসন করেছে। আয়োজকের স্থলে বন বিভাগের নাম তারা হয়ত ভুলে লিখেছে।’

    গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, ‘মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে, তা ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন। আর ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। কারণ সরকারি মাঠে মেলা করতে আবার কিসের ভাড়া?’ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া তিনি আর কোনো প্রশ্ন শুনতে বা বক্তব্য দিতে রাজি হননি।