Skip to content

সরকার ভারতের কাছে সেবাদাসে পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল

    সরকার ভারতের কাছে সেবাদাসে পরিণত হয়েছে: মির্জা ফখরুল prothom asha.com

    ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কাছে সেবাদাসে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে নানা চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষর করা প্রসঙ্গ টেনে আজ রবিবার নয়াপল্টনে এক দোয়া-মাহফিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান।রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে নিবিড়পর্যবেক্ষণে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আরোগ্যকামনায় দেশব্যাপী এ দোয়া-মাহফিলের আয়োজন করেছে বিএনপি।শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন,‘তথাকথিত প্রধানমন্ত্রী তিনি নির্বাচিত নন। ভারতে গিয়ে চুক্তি করেছেন। দুই দিন থেকে ১০টি চুক্তি করেছেন। চুক্তিগুলো আমরা দেখলাম- বেশিগুলো বলা হচ্ছে মেমোরান্ডাম পার্টনারশিপ সই করেছেন, অনেকগুলো করবেন… কারিগরি… দল পাঠাবেন ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের যে সমস্যাগুলো আমরা যে তিস্তা নদীর পানির যে ন্যায্য হিৎসা তা পাচ্ছি না, সেই ব্যাপারে কোনো চুক্তি হয়নি। উপরন্ত কী হয়েছে- তিস্তা প্রকল্পের যে প্রস্তাব তারা দিয়েছেন, সেই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবার জন্য অর্থাৎ বিনিয়োগ করার জন্য ভারতবর্ষ প্রস্তাব দিয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার। আমরা সবার আগে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য বন্টন চাই এবং অভিন্ন যে নদীগুলো আছে প্রত্যেকটি নদীর ন্যায্য হিৎসাটা চাই-এটা আমাদের অধিকার। আন্তর্জাতিক আইনের অধিকার। এই কথাগুলো বলতে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। আজকে ভারতের কাছে তারা সেবাদাসে পরিণত হয়েছে।’মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু ভারত নয়; আশেপাশের সমগ্র প্রতিবেশি দেশগুলোর কাছে তারা মাথা নিচু করে নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে চলছে। মিয়ানমার থেকে গুলি আসে, কিন্তু জবাব তারা দিতে পারে না। এই একটা অথর্ব নতজানু শাসকগোষ্ঠি আমাদের ওপর চেপে বসে আছে।’

    বক্তব্যের একপর্যায়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে নিবিড়পর্যবেক্ষণে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে উল্লেখ করতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আপনারা এখানে অনেক কষ্টে আছেন বুঝি। এর চেয়েও জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তারা জন্য সবাই দোয়া করুন।’ এ সময় তার চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের গণতন্ত্রের প্রতীক, যিনি স্বৈরাচার থেকে মুক্ত করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করার জন্য সংসদীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছিলেন, যিনি কেয়ারটেকার গভমেন্টকে সংবিধানের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন, যিনি দেশের মানুষের আর্থিক মুক্তির জন্য কাজ করেছেন- সে সময় বিদেশি পত্রিকাগুলোতে লেখা হতো ইমাজিং টাইগার- অর্থনৈতিক দিক দিয়ে একটা বাঘ বেড়িয়ে আসছে বাংলাদেশ। কী দুর্ভাগ্য সেই নেত্রী আজ বিনা চিকিৎসায় বন্দি অবস্থায় মৃত্যুশয্যায়। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন এই প্রিয় নেত্রীর প্রাণভিক্ষা দেন। আমরা যেন তার নেতৃত্বে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে জ্বলে উঠতে পারি। যে ভয়াবহ দানব রাষ্ট্রযন্ত্রকে শেষ করে দিচ্ছে, তাকে যেন পরাজিত করতে পারি। যেন আমরা আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। শুধুমাত্র দোয়া নয়; তার চিকিৎসার জন্য আমাদের যা যা করা প্রয়োজন সেই চেষ্টাই আমাদের করতে হবে।’মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে, তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া থেকে বঞ্চিত করছেন।’  

    সরকারের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দাবি করে তারা নির্বাচিত সরকার। কিন্তু আমরা বারবার দেখছি, তারা কোনো মতেই নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে না; যখনই ক্ষমতায় আসে জোর করে প্রহসনের নির্বাচন করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে। এরা এখনও জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলো একে একে খুন করেছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়েছে, বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে দিয়েছে, মানুষের কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এমনকি মানুষের বেঁচে থাকার যে ন্যুনতম অধিকার, সেগুলো তারা কেড়ে নিয়েছে। এই সরকার অবৈধ, তারা পুরো দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েছে।’পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ, কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়াসহ কয়েকজনের দুর্নীতি সংক্রান্ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার দুর্নীতির কাহিনী সম্প্রতি বেরিয়ে আসছে। পুলিশের অ্যাসোসিয়েশন থেকে হুমকি দিয়ে একটা স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে যে, এই সত্য প্রকাশ করা যাবে না; এতে নাকি তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। কিছু পুলিশ কর্মকর্তা সম্পর্কে দেশের মানুষসহ সারা পৃথিবী জানে কিভাবে তারা এই অবৈধ সরকারের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা বিত্ত-বৈভব দুর্নীতি পাহাড় গড়ে তুলেছে। শুধুমাত্র তাই নয়; তারা রাষ্ট্র ষড়যন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে-এর দায় তাদেরকে নিতে হবে।’কেন্দ্রীয় এ কর্মসূচিতে প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় দোয়া মাহফিলে আরও অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।