Skip to content

দেশীয় ও পাশ্চাত্যের ফিউশন হচ্ছে ‘সারা’

    দেশীয় ও পাশ্চাত্যের ফিউশন হচ্ছে ‘সারা’ prothomasha.com

    দেশের পোশাক শিল্প ‘সারা লাইফস্টাইল খুব অল্প সময়ে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গুণগতমান ধরে রেখে ক্রেতাদের সাধ্যের মধ্যে সেরা পণ্য এনে দিয়েছে এই ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি। সময়োপযোগী ফ্যাশন, নকশায় বৈচিত্র্য আর সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে ‘সারা’র জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। এবার পাশ্চাত্য ঘরনার পোশাক নিয়ে হাজির হয়েছে ‘সারা’র সাব ব্র্যান্ড ‘ঢেউ’।

    যাত্রা শুরু, অল্প সময়ে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জনপ্রিয়তার পাওয়ার পেছনে সবচয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে ‘সারা’ লাইফস্টাইল পরিচালক শরীফুন রেবার। তার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় উঠে আসে সারার এত সাড়া পাওয়ার পেছনের কারণ, আগামীর পরিকল্পনাসহ নানান দিক। 

    • কত বছর পার করল সারা?

    শরীফুন রেবা: ২০১৮ সালে মে মাসে সারার পথচলা। ফ্যাশন ব্র্যান্ডটি ছয় বছর পার করেছে।

    • আপনি সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করেছেন, কর্মজীবনও শুরু করেছেন সাংবাদিকতায়। কিন্তু সাংবাদিকতা থেকে পোশাক নিয়ে কাজ করার ভাবনা এল কীভাবে?

    শরীফুন রেবা: বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময়ই অনেক পত্রিকায় কন্ট্রিবিউশন করতাম। এরপর পত্রিকায় কাজও করি। চার-পাঁচ বছর পর কোলে সন্তান (মেয়ে) আসার পর বিরতি নিই। এরপর আর সাংবাকিতায় ফেরা হয়নি। এরপর আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্সের পাশাপাশি দেশীয় একটি ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করার ভাবনা আসে। সে ভাবনা থেকেই আজকের ‘সারা লাইফস্টাইল’।

    • পোশাকের ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতার কাহিনী জানতে চাই?

    শরীফুন রেবা : দেশীয় পোশাক শিল্পে ‘সারা’ একদম নতুন। আগে খুচরা ব্যবসায় সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাদের স্নোটেক্স- মূলত ‘এক্সপোর্টেড বিজনেজ’। সেখানকার অভিজ্ঞতার গল্পটা আলাদা। দেশীয় পোশাক শিল্পে পথচলার আগে, এই ব্যবসায় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করি। যেমন- দেশীয় সংস্কৃতি, আবহাওয়া, পরিবেশ, মানসম্মত পোশাক এবং গ্রাহক চাহিদা ও সস্তুষ্টি বিবেচনা করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। সবমিলিয়ে এটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। যদিও আমরা এখনো শিখছি।

    • সারা ক্রেতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, এই জনপ্রিয়তার কারণ কী? 

    শরীফুন রেবা: জনপ্রিয়তার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে কম মূল্যে ক্রেতাদের হাতে ভালো মানের পণ্য তুলে দিতে পারা। সারার যাত্রার শুরু থেকে আমাদের লক্ষ্য ছিল, ভালো পণ্য যেন কম মূল্যে আমরা ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে পারি। যাতে ক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু পণ্যের দাম কমালেও গুণগত মানে আমরা কোনো ছাড় দেইনি।

    • সারার সাব ব্র্যান্ড ‘ঢেউ’য়ের চিন্তা কেন করলেন?

    শরীফুন রেবা: তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পাশ্চাত্যের প্রভাব অনেক বেশি। আমরা তাদের টার্গেট করে কিছু করার চিন্তা করেছিলাম। সারাতে আগে থেকেই তরুণদের জন্য কিছু পাশ্চত্য পোশাক হচ্ছিল। আমরা ভাবছিলাম এটিকে আলাদা সাব ব্র্যান্ড করে বড় পরিসরে কিছু করার। আমার মেয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। সেও এই চিন্তায় যুক্ত হয়। তরুণদের কমফোর্ট, তারা কী ধরনের ডিজাইন পছন্দ করছে– সর্বোপরি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পোশাক কতটা মানানসই– এসব স্টাডি করে আমরা কাজ শুরু করি। কিছু পোশাক তৈরি করা হচ্ছে ট্র্যাডিশনাল আর পাশ্চাত্যের পোশাকের সমন্বয়ে ফিউশন করে, আবার কিছু করা হয় পাশ্চাত্যের ডিজাইন ফলো করে।

    • দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে সারা লাইফস্টাইলে’র পরিকল্পনা আছে?

    শরীফুন রেবা: পরিকল্পনা তো আছেই। আন্তর্জাতিক বাজারে ‘সারা লাইফস্টাইলে’র পোশাক অবশ্যই আনবো। তবে আমরা সময় নিচ্ছি। এখনো অনেক কাজ বাকি। দেশের অভ্যন্তরে গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করে তবেই দেশের বাইরে পা রাখবে ‘সারা লাইফস্টাইল’।

    • ক্রেতাদের কাছে সারার শীতের পোশাকের ব্যাপক প্রশংসা রয়েছে। আসন্ন শীতে সারা এবং ঢেউ ক্রেতাদের জন্য কী নতুনত্ব নিয়ে আসছে?

    শরীফুন রেবা: শীত আসতে তো এখনো বেশ কয়েক মাস বাকি আছে। তারপরও আমরা এবার ঢাকার বাইরে একটু ভারি জ্যাকেট রাখার পরিকল্পনা রেখেছি। কারণ ঢাকার বাইরে শীত বেশি পড়ে। এছাড়া আরও নতুন কি করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছি। তবে প্রতি বছরই আমরা শীতে নতুন নতুন ডিজাইনের, নানা রঙের শীতের পোশাক নিয়ে আসি। প্রায় এক-দেড়শ স্টাইলের জ্যাকেট থাকে। কালার ভেরিয়েশন থাকে ৩০০-৪০০ রকমের। ডেনিমের কুর্তি, শাল থাকে। আশা করি, এবারও আমরা এসবের পাশাপাশি নতুন কিছু নিয়ে আসব।

    • মার্কেটে সারার পোশাকেরও জনপ্রিয়তা কম নয়। পোশাক ছাড়া সারায় আর কি ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে? 

    শরীফুন রেবা: আমরা পোশাকের পাশাপাশি লেদারের কিছু পণ্য, যেমন- ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট ক্রেতাদের জন্য এরই মধ্যে নিয়ে এসেছি। সামনে আমাদের আরও পণ্য নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করছি ।

    • সমপর্যায়ের অন্যান্য ব্র্যান্ডের পোশাকের তুলনায় সারার পণ্য অনেকটাই ক্রেতার নাগালে থাকে। এটি কীভাবে সম্ভব? 

    শরীফুন রেবা: শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল ভালো ও মানসম্মত পণ্য আমরা কম মূল্যে ক্রেতাদের কাছে দেব। সেভাবেই আমরা কাজ করছি। আমরা আমাদের পণ্যের মূল্য সব সময় কম রাখার চেষ্টা করি। এবারের ঈদেও ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে কম দামে পণ্য দেওয়ার পরিকল্পনা আমরা করেছি। যার অংশ হিসেবে কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সবগুলো আউটলেটে নতুন-পুরাতন সব পণ্যে আমরা ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। ক্রেতাদের সারার প্রতি আকৃষ্ট করতে এবং সারার পণ্য সবার কাছে পৌঁছে দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

    • এবার ঈদে সারার আয়োজন কেমন?

    শরীফুন রেবা : এবার ঈদে আমাদের মূল আকর্ষণ হচ্ছে সারা, ঢেউয়ের সব প্রোডাক্টে ঈদ উপলক্ষ্যে আমরা ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। সারার যতগুলো আউটলেট আছে যতগুলো প্রোডাক্ট আছে সব প্রোডাক্টে এই ৩০ শতাংশ ছাড় চলবে। ঈদ উপলক্ষে এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অফার। সারার গুণগত মানসম্পন্ন সব প্রোডাক্টের তুলনামূলক দাম কম। তারপরও আমরা কাস্টমারদের কথা বিবেচনা করে, আমাদের প্রতি কাস্টমারদের যে প্রত্যাশা সেটাকে মাথায় রেখে আমরা প্রতিটা প্রোডাক্টে ৩০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছি। এটা একটা বিশাল বড় অফার।

    • প্রতি উৎসব আয়োজনেই সারায় নতুন আয়োজন থাকে। সেক্ষেত্রে পণ্যের ডিজাইনে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে?

    শরীফুন রেবা : ফ্যাশনের ক্ষেত্রে যখন যেই উৎসব আয়োজন থাকে, সেই সময়টার ট্রেন্ড আমরা ধরতে চেষ্টা করি। সেই ট্রেন্ডকে কাজে লাগিয়ে পোশাক বা অন্যান্য প্রোডাক্টের নিত্যনতুন ডিজাইন আমরা নিয়ে আসি। ফ্যাশন ট্রেন্ড প্রতিনিয়ত চেঞ্জ হয়, আমরা সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখেই সারার কাস্টমারদের সবচেয়ে নতুন, সবচেয়ে আধুনিক ও সবচেয়ে কম দামে প্রোডাক্ট হাতে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করি। এটাই আমাদের থিম, এটাই আমাদের ব্যবসায়িক কৌশল। পোশাকের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক ট্রেন্ড, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ট্রেন্ড, আমাদের নিজস্ব ট্রেন্ড সব বিষয়কে মাথায় রেখে নিত্যনতুন আধুনিক পোশাকগুলো প্রোভাইড করাই আমাদের উদ্দেশ্য।

    • আগামীতে সারা নিয়ে আর কী ধরনের পরিকল্পনা আছে?

    শরীফুন রেবা : সারাকে আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বর্তমানে আমাদের সারার ১৪টি আউটলেট রয়েছে, তার মধ্যে ঢাকাতে ৮টি আর ঢাকার বাইরে রয়েছে ৬টি। এ বছরের মধ্যে আরও ৪/৫টি আউটলেট আমরা ওপেন করব, সে অনুযায়ী আমাদের কাজ চলছে। চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার ভেতরে আরও বেশ কয়েকটি, ঢাকার বাইরেও আরও বেশ কিছু আউটলেট এই মুহূর্তে আমাদের দরকার। এটা সরাসরি কাস্টমারদের চাহিদা। তাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমরা আউটলেটগুলো নতুন করে ওপেন করব। এগুলোর কাজ করার পর আমাদের লক্ষ্য আছে, আমরা স্বপ্ন দেখি, সারাকে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেখতে চাই।

    • সারা-ঢেউকে আগামীতে কোথায় দেখতে চান?

    শরীফুন রেবা : আমরা দেখতে চাই সারা ও ঢেউ আন্তর্জাতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করেছে। সবখানে ফ্যাশনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, ক্রেতারা আরও বেশি আস্থাশীল হয়ে উঠেছে এই ব্র্যান্ডে। এর আগে আমরা আরও কাজ করতে চাই, দেশের সব প্রান্তে যেন সারার আউটলেট থাকে, কাস্টমারদের দোরগোড়ায় যেন পৌঁছে যায় সারা। সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা আগে প্রস্তুত হতে চাই।