Skip to content

কনকচাঁপার শৈশব আর লাল জুতার গল্প

    কনকচাঁপার শৈশব আর লাল জুতার গল্প prothomasha.com

    মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠের জাদুকর কনকচাঁপা। হৃদয় রাঙানো হাজারো গান ভক্তদের উপহার দিয়েছেন তিনি। সিনেমার গান থেকে অডিও অ্যালবাম, সবখানেই তার সুরেলা কণ্ঠ মোহ ছড়িয়েছেন। অসংখ্য কালজয়ী গানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও হয়ে উঠেছেন একজন কিংবদন্তি শিল্পী।

    এখন আর ঢাকায় থাকেন না এই গায়িকা। চলে গেছেন নিজ গ্রামে, প্রয়োজনে আসেন ঢাকায়। গ্রামে থাকলেও গান, লেখালেখিতে আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব তিনি। নিজের কাজ আর সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে প্রায়ই কথা বলেন ফেসবুকে। তারই ধারাবাহিকতায় কনকচাঁপা ‘এক জোড়া লাল জুতা, একটি বোকা মেয়ে ও সোনার শৈশব’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন।তার লেখায় উঠে এসেছে শিল্পীর ছোটবেলার ঈদ, প্রিয় রঙের জুতা ও পরিবারের সঙ্গে কাটানো স্মৃতি। দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন’র পাঠকদের জন্য তার কথাগুলো তুলে ধরা হল-

    ‘বাবার খুব লাল রঙ পছন্দ ছিল। তার আঁকা ছবিতে লাল রঙের আধিক্য থাকত প্রচ্ছন্ন ভাবে। আমি অনেক পরে বুঝেছি লাল রঙ আমারও খুব পছন্দ। আমি অবশ্য অনেক কিছুই অনেক পরে টের পাই। আমি বেশি ভাগ ব্যাপারেই একটু বোকা কিসিমের। ইদানীং অবশ্য অনেকে স্পষ্টতই বলে আমি উচ্চমানের বোকা। যাক জীবন তো এভাবেই পার হয়ে গেছে, বোকা উপাধিতে আমার কোনো অসুবিধা নাই। এবার সেই গল্পটি বলি। কোনো এক ঈদে একজোড়া জুতা পাওয়ার ভাগ্য হলো। ঈদের জামা রোজবছরে পেলেও জুতা পাওয়া বিরল ভাগ্য ছিল আমাদের মত মধ্যবিত্ত (নিম্ন মধ্যবিত্ত কারণ সৎ কর্মকর্তার সংসার কখনই সচ্ছল হওয়ার কথা না) পরিবারের সন্তানদের জন্য।’তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সময় বাটার জয়জয়কার ছিল। বাটা কোম্পানি একবার একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল যে বাটার জুতা সবচেয়ে ভালো এমন গল্পের ছবি আঁকলে উপহার হিসেবে অনেক জুতা পাওয়া যাবে। সেবার কতই না ছবি আঁকলাম! বলাই বাহুল্য সে ছবিগুলো আর বাটা কোম্পানি পর্যন্ত পৌঁছায়নি।’

    সেসময় নিজেকে ধনী কন্যা মনে করেছিলেন কনকচাঁপা। তার কথায়, ‘তো দোকানে গেছি জুতা কিনতে, আব্বা-আম্মা ঘুরেফিরে সেই লাল একজোড়া জুতা পছন্দ করলেন। আমার পায়ে যে জুতা লাগছে ঠিকঠাক তারচেয়ে বড় একজোড়া জুতা। সুন্দর ফুলতোলা বকলস ওয়ালা পেছনে একটু শক্ত উঁচু ব্লকহিলের মত। চকচকে অপূর্ব সে জুতা। বাড়ি বয়ে এনে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত তা বিছানার বালিশের পাশে রেখে ঘুমালাম। ঈদের দিন পায়ে দেওয়ার সময় আব্বা জুতার ডগায় তুলা গুঁজে দিলেন। কি সুন্দর অনুভূতিই না হচ্ছিল! মনে হচ্ছিল আমি যেন পৃথিবীর সবচাইতে ধনী মানুষের কন্যা।’

    দীর্ঘদিন জুতা জোড়া তিনি ব্যবহার করেছেন সে কথা উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘সারাদিন জুতা পরে পায়ে ফোসকা পড়ল। ঈদ গেল। জুতা ধীরে ধীরে নরম হল। বছর পার হল। জুতার ডগায় তুলা দেওয়া বন্ধ হল। ওই এক জুতা পরেই স্কুল, বেড়ানো, গানের অনুষ্ঠানে যাওয়া। কখনওই মনে হয়নি মাত্র এক জোড়া জুতা! যখনি পরেছি তখনই নিজেকে গর্বিত মনে হয়েছে। বছর পার হলেও আলনার পাদানীতে জুতার বাক্স ও গোছানো থাকত।’তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর পর জুতায় পায়ের আঙ্গুল আর আঁটছিল না। আঙ্গুল মুচড়ে তবুও ওই জুতা পায়ে দেই। একদিন মা বললেন, অনেক হইসে ওই জুতা আর কাউকে দিয়ে দাও। কারণ, জুতা তখনও ভালো ছিল! আম্মার সিদ্ধান্তে আমি শোকে নিমজ্জিত হই।’

    কনকচাঁপা বলেন, ‘কয়েকদিনের ভাবনায় বুদ্ধি বের করে ঘরের পাশের ছোট্ট পুকুরে জুতা জোড়া ডুবিয়ে দেই আর চোখের জলে ভাসি! আহা! কি কচি কচি কিন্তু দুঃখ আমার! আমার লাল জুতা! তাকে আমি ভুলতেই পারি না! কিছুদিন পর দেখি পুকুরের যে পাশে জুতা ফেলেছিলাম ওই পাশেই চাঁদমালা ফুলে ভরে গেছে। আমি ভাবি আমার লাল জুতা ফুল হয়ে ফুটে উঠেছে কিন্তু ফুল তো লাল হওয়ার কথা, ফুল সাদা কেন?’

    সবশেষে নিজেকে বোকা দাবি করে এই গায়িকা লিখেছেন, ‘অথচ ওই জুতা যে পরের দিনই ভেসে উঠেছে আর আম্মা ও রত্না আপা পুরো গল্প বুঝে গেছেন এবং তা পাশের বাড়ির ইয়াসমিনকে দিয়ে দিয়েছেন। আমি তা একদমই বুঝিনি! আমি আসলেই বোকা! তখনও ছিলাম এখনো আছি। এ নিয়ে দুঃখ নেই কিন্তু দুঃখ এই যে এখন এমন হাজার জুতা কিনলেও তা পরার মত পা আমার নেই। নেই আমার সোনার শৈশব! আমি চালাক হতে চাই না।