ড. অ্যামি ম্যারিস একজন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ। তিনি ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর অধীন লেসলি ড্যান ফার্মাসি অনুষদ থেকে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করেন। ভাগ্যের কী পরিহাস, ২০১৬ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি স্টেজ থ্রি জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এরপর ক্যানসার বিষয়ে মানুষকে ইনস্টাগ্রামে ভিডিও তৈরি করে সচেতন করা শুরু করেন।
ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া ও সেরে ওঠার অভিজ্ঞতার ভিডিওটি ম্যারিসন ইনস্টাগ্রামে পিন করে রেখেছেন। সেখান থেকেই সংক্ষেপে তাঁর ভাষায় জেনে নেওয়া যাক—‘ছোটবেলা থেকে যতদূর মনে পড়ে, আমি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে ভালোবাসি। আমার পরিবারে কোনো ক্যানসারের ইতিহাস নেই। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত। শিক্ষার্থী হিসেবেও খুব ভালো ছিলাম। ডাক্তার হবার পাশাপাশি আমি একজন অ্যাথলেটও! আমার যে কোনো দিন ক্যানসার হতে পারে, এটা আমি ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করিনি। এমনকি ডাক্তার নিশ্চিত হবার পরও আমি নিশ্চিত হতে পারছিলাম না।
‘লেখাপড়া শেষ করে পেশাগত জীবনেও ভালো করছিলাম। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমিককে বিয়ে করি। আমরা ইতালি আর গ্রিসে হানিমুনে যাই। সপ্তাহখানিকের ছুটিতে। বোঝেন তো, পেশায় ডাক্তার। ছুটি মেলা কঠিন। আমরা খুব আনন্দ করি। ফিরে এসে দেখলাম, খানিকটা ওজন বেড়েছে। তারপর আমি আবার আবার পুরোনো জীবনে ফিরলাম। স্বাস্থ্যকর খাওয়া–দাওয়া, ব্যায়াম, ক্লিনিক, ঘুম ইত্যাদি। দেখা গেল, কিছুতেই আমার বাড়তি ওজন কমে না। ওই মাসে পিরিয়ড বন্ধ হলো। আর ঘনঘন প্রশ্রাব হচ্ছিল। আমার ডাক্তার একটা পরীক্ষার পর জানালেন, “মনে হচ্ছে গর্ভবতী, তবে নিশ্চিত না।” আমাকে গাইনোকোলজিস্টের কাছে পাঠালেন। আলট্রাসাউন্ড করা হলো।
ফাইব্রয়েডস ধরা পড়ল। তিনি আরেকজনের কাছে পাঠালেন। দেখলাম, যাঁর কাছে পাঠালেন, তিনি ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ। তিনি দুইটা সিটি স্ক্যান করলেন। সেদিন শুক্রবার। বিকেল সাড়ে চারটা। ফোন বেজে উঠল। বললেন, “তুমি কীভাবে কিছুই টের পাওনি। তোমার একটা ওভারিতে ২১ সেন্টিমিটার ব্যাসের একটি টিউমার। আমি খুবই দুঃখিত ম্যারিস, তুমি যা ভাবছ, সেটাই। স্টেজ থ্রি ক্যানসার। তব এখান থেকেও প্রায় পুরোপুরি সেরে ওঠা সম্ভব”।এরপর অস্ত্রোপচার করে টিউমারটি বের করা হলো। তারপর শুরু হলো কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন। আর মুখে খাওয়ার ওষুধ, থেরাপি—এগুলো তো ছিলই। তারপর কেমো দেওয়ার পর শরীরের সেসব ক্ষতি হয়েছে, সেগুলো পূরণ করা শুরু হলো।
সম্পূর্ণ চিকিৎসা শেষেও ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি ছিল। একসময় ডাক্তার আমাকে ক্যানসারমুক্ত ঘোষণা করলেন। আমি মানুষ হিসেবে আর বিশেষ করে ক্যানসার চিকিৎসক হিসেবে আরও পরিণত হলাম। কেননা, আপনি যতই পড়াশোনা বা গবেষণা করেন না কেন, আপনি যদি “ক্যানসার সারভাইভার” না হন, আপনি যদি জীবন–মৃত্যুর মাঝখানের ওই সময় আর ঝুঁকির ভেতর দিয়ে না যান, আপনি কখনোই বুঝবেন না, ক্যানসার কী! তাই আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, আমি আরও ভালো ক্যানসার–বিশেষজ্ঞ হয়েছি। (হাসতে হাসতে) হয়তো এটা আমার পেশাগত জীবনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ “প্রাকটিক্যাল কোর্স” ছিল। আর আমি জীবন বাজি রেখে, জীবন বাঁচিয়ে পাস করে গেছি।’ড. অ্যামি ম্যারিস ‘হানড্রেড সিম্পল ক্যানসার রিকভারি রেসিপিস ফর ফিমেল’ শিরোনামে একটি বইও লেখেন। জানান, তিনটা খাবার তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হবার পর এই আট বছরে কোনো দিন কেনেননি। সেগুলো হলো—
১. প্রক্রিয়াজাত মাংস
নিয়মিত প্রক্রিয়াজাত মাংস আপনার ক্যানসার ফিরে আসার আশঙ্কা ৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। এটা অনেক বড় ঝুঁকি। কেননা, ক্যানসারের ক্ষেত্রে ১–ও অনেক বড় সংখ্যা। অনেক দোকানেও প্রসেসড মাংস দিয়ে তৈরি নানা সুস্বাদু খাবার বানায়। ফলে এসব ঝুঁকি এড়াতে আপনি বাড়িতেই চিকেন গ্রিল বা রোস্ট বানিয়ে খেতে পারেন।
২. অ্যালকোহল
ক্যানসার ফিরে আসার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ খাবারগুলোর ভেতরে অত্যন্ত জনপ্রিয় এটি। আপনি আগেও অনেকবার শুনেছেন। তবে অ্যালকোহল আপনি যতই গ্রহণ করবেন, আপনার ক্যানসার ফিরে আসার ঝুঁকি বাড়বে। ওয়াইন, বিয়ার, ককটেল—সবকিছুরই সমান ক্ষতিকর প্রভাব।
৩. কোমল পানীয়, চিনি মেশানো মিষ্টি তরল
যে সমস্ত খাবারে ‘এম্পটি ক্যালরি’, সেগুলো এড়িয়ে চলুন। ফাঁকা ক্যালরির মানে হলো, সেগুলোতে ক্যালরির বাইরে তেমন কোনো পুষ্টিকর উপাদান নেই বললেই চলে। বিশেষ করে সোডা, কোমল পানীয়, জুস ইত্যাদি। ভাবছেন, এই তালিকায় জুস কেন? ফল ব্লেন্ড করে ছেঁকে খাওয়া আর চিনি–পানি খাওয়া অনেকটা একই বিষয়। জুসে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ প্রায় থাকে না বললেই চলে। থাকে কেবল ফ্রুকটোজ। আর কেনা জুসে ক্ষতিকর প্রিজারভেটিভসহ যে কী কী থাকে, সেটা আমরা জানিই না!
ম্যারিস বলেন, ‘কিছু খাবার আছে, যেগুলো একবার যাঁরা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা, ক্যানসারের জন্য এই খাবারগুলো যতটা দায়ী, ক্যানসার ফিরে আসার জন্য অনেক বেশি দায়ী। তাই একবার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পর ক্যানসার ফ্রি জীবনযাপনের জন্য খাদ্যতালিকায় স্বাস্থ্যকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করার চেয়ে এই খাবারগুলো বাদ দেওয়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’