ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন উপকূলীয় দ্বীপ হাতিয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রিমালের তাণ্ডবে ৩৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাঁচ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া দুই হাজারের বেশি গবাদিপশু জোয়ারে ভেসে গেছে। হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিনাজ উদ্দিন জানান, দ্বীপের প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। শতাধিক পুকুর ও মাছের ঘেরের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। সাড়ে তিন হাজারের বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে অসংখ্য বনের হরিণ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঢালচরের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। চর ঘাসিয়ার ১৭ হাজার পরিবার ও চানন্দি ইউনিয়নের চার হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়া হরনী, সুখচর, নলচিরা, চরকিং, চরইশ্বর, তমরুদ্দি, সোনাদিয়া, বুড়িরচর ও জাহাজমারা ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসরত হাজার হাজার পরিবার রয়েছে পানিবন্দি। অনেকের বাড়িঘর-দোকানপাট তীব্র জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে। হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিষ চাকমা বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে হাতিয়ার বিভিন্ন এলাকার ৩৩ হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আট হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। দুই হাজর ১৩টি গবাদিপশু জোয়ারের পানিতে ভেসে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে।
নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনের এমপি মোহাম্মদ আলী বলেছেন, হাতিয়ার অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়েছে। জোয়ারে ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। সোমবার (২৭ মে) দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী বরাবর এক চিঠিতে ঘূর্ণিঝড় রিমালে হাতিয়া উপজেলার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে অবহিত করি। এমপি মোহাম্মদ আলী বলেন, নোয়াখালীর একমাত্র দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্বাভাবিকের চেয়ে সাত-আট ফুট উচ্চতার জোয়ারে নিম্মাঞ্চলে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকায় নিঝুম দ্বীপ, ঢালচর ও চর খাসিয়া সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গোপসাগরের মুখে অবস্থিত হাতিয়ার সর্ব দক্ষিণের জনপদ নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রবল জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়েছে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কাঁচা ঘর সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। রাস্তার প্রায় ৬০ ভাগই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শতাধিক পুকুরের মাছ ও অসংখ্য গবাদিপশু পানিতে ভেসে গেছে। জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়েছে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও চাল মজুত রাখা আছে। জরুরি সহায়তা হিসেবে ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা, ৩১৯ টন চাল, ৬৬৩ প্যাকেট শিশু খাদ্য ও আট হাজার ২২০ কেজি গোখাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।