জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থীর তিনজনই আওয়ামী লীগের নেতা। দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় উপজেলাটিতে নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতাদের দিয়ে ‘স্বতন্ত্র ফর্মুলায়’ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করানোয় স্থানীয়ভাবে দলের মধ্যে বিভেদ আরও বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।
প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে জয়পুরহাট-২ আসনের সংসদীয় এলাকার আক্কেলপুর, কালাই ও ক্ষেতলাল উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোস্তাকিম মণ্ডল, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য তাইফুল ইসলাম তালুকদার ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল মিয়া সরদার। এ ছাড়া নাজ্জাসী ইসলাম নামের এক তরুণও প্রার্থী হয়েছেন। তবে তাঁর দলীয় পরিচয় নেই।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ক্ষেতলালে এবারের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াই হবে। এ জন্য উপজেলা, পৌর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তিন পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। দলীয় নেতাদের নিয়ে স্বতন্ত্র ফর্মুলায় উপজেলার নির্বাচন মাঠপর্যায়ে দলীয় কোন্দল আরও প্রকট হচ্ছ বলে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন। উপজেলার ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দুজন সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দলের তিন নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁদের সবার কমবেশি কর্মী-সমর্থক আছেন। ফলে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তিন পক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের তিন নেতার যে কেউ হয়তো জিতবেন। কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীদের কোন্দল কমবে না, বরং আরও বাড়বে।
নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী তাইফুল ইসলাম তালুকদারের ভাতিজা আনোয়ারুজ্জামান তালুকদার ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। তিনি তাঁর চাচা তাইফুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া মামুদপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান, ক্ষেতলাল পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলর ও পাঁচটি ইউপির বেশির ভাগ ইউপি সদস্যরা তাইফুল তালুকদারের পক্ষে নির্বাচন করছেন। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল মিয়া সরদারের পক্ষ বড়তারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন, মামুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু রাশেদ আলমগীর, ক্ষেতলাল পৌরসভার সাবেক মেয়র সিরাজুল ইসলাম, ওয়ার্ড কাউন্সিলর জুলফিকার চৌধুরী কাজ করছেন। অন্যদিকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তাকিম মণ্ডলের পক্ষে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল মজিদ মোল্লা, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী কাজ করছেন।
মামুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রতন চৌধুরী বলেন, ‘আমি দুলাল মিয়া সরদারের নির্বাচন করছি। ইতিমধ্যে আমাদের ইউনিয়নে দুই প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তিন প্রার্থীর পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। নির্বাচনে দলাদলি থাকাটায় স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনের পর এমন দলাদলি থাকলে দলের ভেতর কোন্দল বাড়বে।’ ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ক্ষেতলাল পৌরসভার মেয়র সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কোনো প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে পারবেন না বলে দলীয় নির্দেশনা রয়েছে। দলের তিনজন নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। তিন নেতার পক্ষের দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করছেন। হয়তো কারও পক্ষে একটু বেশি আবার কারও পক্ষে কম নেতা-কর্মী গেছেন। তিনি কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেননি, করবেনও না বলে জানিয়েছেন।