Skip to content

ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাত চক্রটি, দিত জরিমানা আদায়ের রসিদ

    ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালাত চক্রটি, দিত জরিমানা আদায়ের রসিদ prothomasha.com

    পঞ্চগড়ে মাইক্রোবাসে করে বিভিন্ন গ্রামের হাটবাজারে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আসছিল একটি চক্র। বাংলাদেশ কনজ্যুমার রাইটস সোসাইটির নামে একটি কথিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভুয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেজে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দোকানিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত চক্রটি। এমনকি জরিমানা আদায়ের রসিদও দিত তারা। বিষয়টি জানতে পেরে মঙ্গলবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেওয়া একজনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন পঞ্চগড়ের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা। পঞ্চগড় জেলা শহরের লিচুতলা এলাকার একটি ভবনে বাংলাদেশ কনজ্যুমার রাইটস সোসাইটি নামে কথিত প্রতিষ্ঠানটির ভাড়া নেওয়া দপ্তর থেকে থেকে ওই তিনজনকে আটক করা হয়।

    এ ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে নুর আলম নামের একজন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বাদী হয়ে পঞ্চগড় সদর থানায় আটক তিনজনসহ মোট পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে করে একটি মামলা করেন। সেই মামলায় আটক তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন কথিত প্রতিষ্ঠানটির পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি মফিজুল ইসলাম (৫২), সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম (৪৬) ও সাধারণ সম্পাদক সাদেকুল ইসলাম ওরফে বাবু (৪৪)। গ্রেপ্তার মফিজুল ইসলাম বাড়ি বোদা উপজেলার আমতলা কাজীপাড়া এলাকায়, আমিনুল ইসলাম পঞ্চগড় সদর উপজেলার ঝাকুয়াকালি এলাকার বাসিন্দা ও সাদেকুল ইসলামের বাড়ি পঞ্চগড় পৌরসভার মসজিদ পাড়া এলাকায়। এই তিনজনের মধ্যে আমিনুল ইসলাম ম্যাজিস্ট্রেটের ভূমিকা পালন করতেন। চক্রটির অপর দুই সদস্য পলাতক আছেন।

    পুলিশ, ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ কনজ্যুমার রাইটস সোসাইটি নামের কথিত প্রতিষ্ঠানটির প্যাডে জরিমানা আদায়ের রসিদ বই নিয়ে বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম এলাকার খাবারের হোটেল ও দোকানে অভিযান পরিচালনা করছিল চক্রটি। গত সোমবার পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের গোয়ালঝাড় বাজারে দুটি খাবারের হোটেলে দু্ই হাজার টাকা করে মোট চার হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন তারা। পরে একটি খাবারের হোটেল ব্যবসায়ীকে জরিমানা করার রসিদ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই পুলিশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সংগঠনটির বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে। গতকাল দুপুরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর পঞ্চগড়ের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী জেলা শহরের লিচুতলা এলাকায় একটি ভবনে চক্রটির ভাড়া নেওয়া দপ্তরে খুঁজে পান। পরে সেখান থেকে তিনজনকে আটক করে পঞ্চগড় সদর থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এ সময় কথিত কনজ্যুমার রাইটস সোসাইটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহারের স্বাক্ষর করা ১০ সদস্যবিশিষ্ট পঞ্চগড় জেলা কমিটির কাগজপত্র জব্দ করা হয়। ওই চক্র গত সোমবার পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন জরিমানা করে টাকা আদায় করে।

    মামলার বাদী ও খাবারের হোটেল ব্যবসায়ী নুর আলম বলেন, ‘সোমবার একটি মাইক্রোবাসে করে চারজন আমার ও একই বাজারের তরিকুল ইসলামের হোটেলে আসেন। এ সময় তাঁদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট বলে আমাদের জানান। তাঁরা জানান, তাঁদের অনেক টাকা জরিমানা করার ক্ষমতা আছে। পরে তাঁরা আমাদের দুটি হোটেলে দুই হাজার টাকা করে মোট চার হাজার টাকা জরিমানা করেন। তাঁরা আমাদের একটি করে রসিদ দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান। পরে জানতে পারি, এটি প্রতারণা চক্র।’ পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ বুধবার আদালতে হাজির করা হবে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।