জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার তখন ৫৮ রান, হাতে মাত্র ৪ উইকেট। স্বীকৃত ব্যাটার বলতে আছেন শুধু মুশফিকুর রহিম। সেখান থেকে চার-ছক্কার ঝড় তুলে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটের জয় এনে দেন রিশাদ হোসেন। মাত্র ১৮ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত থাকেন রিশাদ। ম্যাচ জয়ের সঙ্গে সিরিজও ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
২৩৬ রানের লক্ষ্যে এদিন ওপেনিংয়ে নামেন বিজয় ও তামিম। ইনজুরিতে পড়া সৌম্য সরকারের কনকাশন সাব হিসেবে মাঠে নামেন তিনি। প্রথম ৩ ওভারে রয়েসয়ে খেললেও তামিম তার রূদ্ররুপ দেখান ম্যাচের চতুর্থ ওভারে। এরপর আর থামেনি তার ব্যাট। ৭ ওভার ৫ বলেই দলীয় অর্ধশতক পূর্ণ করে বাংলাদেশ। ৫০ রানের মাথায় বিজয়কে (১২) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন লাহিরু কুমারা। কিছুক্ষণ পর এই কুমারার বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শান্ত। এরপর হৃদয়কে নিয়ে জুটি গড়েন তামিম। ব্যক্তিগত ৫১ বলে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অর্ধশতক পূর্ণ করেন তিনি।
১০৫ রানের মাথায় কুমারার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন হৃদয়। শেষ হয় ৩৬ বলে তার ২২ রানের ইনিংস। মাহমদুউল্লাহ উইকেটেই থিতু হতে পারেননি। কুমারার গতিতে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর মাঠে নামেন মুশফিক। দলের বিপদ বাড়িয়ে ১৩০ রানের মাথায় থামেন তামিম। শেষ হয় ৮১ বলে তার ৮৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। ৯টি চার ও ৪ ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান তিনি। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে ভালোই খেলছিলেন মুশফিক। ৪৮ রানের জুটি গড়ে দলকে উদ্ধার করেন সমূহ বিপদ থেকে। ১৭৮ রানের মাথায় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি।
দল যখন জয় থেকে ৫৮ রান দূরে তখন নামেন রিশাদ হোসেন, হাতে ৪ উইকেট। সেখান থেকে বাংলাদেশকে সহজ জয় এনে দেন রিশাদ। একাই করেন ৪৮ রান। ১৮ বলের ইনিংসে ৫টি চারের পাশাপাশি ৪টি ছক্কা মারেন তিনি। ঝড় বইয়ে দেন লংকানদের সেরা বোলার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ওপর দিয়ে। আরেক পাশে ৪০ বলে ২৫ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। তাতে ৪ উইকেটের জয়ের সঙ্গে সিরিজও নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হারের পর একই ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
এদিন প্রথমে ব্যাট করা লংকানরা জানিথ লিয়ানাগের অপরাজিত সেঞ্চুরির সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান করে। আজ সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় শুরু হয় ম্যাচ। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লংকান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। শুরুতেই লংকান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন তাসকিন আহমেদ। দলীয় দ্বিতীয় ওভারের তৃতীয় বলে পাথুম নিশাঙ্কাকে (১) এলবির ফাঁদে ফেলেন এই ফাস্ট বোলার। নিজের পরের ওভারে আভিস্কা ফার্নান্দোকে (৪) উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিমের ক্যাচে ফেরান।
একাদশে ফিরেই সাফল্য পেয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। নিজের প্রথম ওভারেই ১৪ রানে থাকা সাদিরা সামারাবিক্রমাকে উইকেটকিপার মুশফিকের ক্যাচে বিদায় করেন তিনি। ৪১ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে লংকানরা। দলীয় ১৮তম ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনারের বল খোঁচা দিতে গিয়ে দলীয় ৭৪ রানের মাথায় উইকেটকিপার মুশফিকের ক্যাচে পরিণত হন লংকান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। তিনি ৫১ বলে ২৯ রান করেছেন। ১১৭ রানের মাথায় পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ফেরেন চারিথ আসালাঙ্কা। ৩৭ বলে ৪৬ রান আসে তার ব্যাটে।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি দুনিথ ভেলালাগে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাও। জোড়া আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ১৫৪ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারানো শ্রীলংকা তখন দুইশর নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায়। তবে অন্যদের আসা-যাওয়ার মিছিয়ে একপ্রান্ত আগলে রাখেন ছয়ে নামা লিয়ানাগে। অষ্টম উইকেট জুটিতে মহেশ থিকশানার সঙ্গে ৭৮ বলে মূল্যবান ৬০ রানের পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। অবশেষে জুটি ভাঙেন সৌম্য সরকার, থিকশানাকে ১৫ রানে ফেরান তিনি। তবে অসাধারণ ব্যাট করা ডানহাতি লিয়ানাগে নিজের নবম ওয়ানডেতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন। তিনি শেষ পর্যন্ত ১০২ বলে ১১টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০১ রানে অপরাজিত থাকেন। তাতে ২৩৫ রানের পুঁজি পায় লংকানরা। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট পান তাসকিন আহমেদ। এছাড়া ২টি করে উইকেট দখল করেন মোস্তাফিজ ও মিরাজ।