শীতের শেষে, গরম চলে এসেছে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হওয়াতে এ সময়টায় ভ্যাপসা গরম ও কড়া রোদের কারণে অস্বস্তিকর এক আবহাওয়া বিরাজ করে। এ সময় কম বেশি সবার ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। বিশেষ করে যাদের ত্বকের ধরন তৈলাক্ত, গরমে যেন তাদের সমস্যা একটু বেশিই বেড়ে যায়।
তৈলাক্ত ত্বকে তুলনামূলক বেশি তেল উৎপাদন হয়ে থাকে। সেই সাথে ঘাম, বাইরের ধুলা-ময়লার কারণে ত্বকের সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। এতে ত্বক সেনসিটিভ হয়ে র্যাশ, ব্রণ, ইরিটেশন, লালচে ভাব ইত্যাদি দেখা যায়। তাই এ সময় সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।গরমে তৈলাক্ত ত্বক সুন্দর রাখতে যা করতে পারেন-
সঠিক ক্লিনজার বাছাই করুন
গরম আবহাওয়ার ফলে ত্বকে একটা মলিন ভাব দেখা যায়। সারাদিনের ক্লান্তি, ময়লা ও অতিরিক্ত সেবাম দূর করার জন্য প্রয়োজন ত্বকের সঙ্গে মানানসই ক্লিনজার। এটি ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করে ফ্রেশনেস ধরে রাখে। সেই সাথে ত্বকের অতিরিক্ত অয়েল প্রোডাকশনকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তাই তৈলাক্ত ত্বকের সাথে মানানসই এমন ভালো মানের ক্লিনজার রাখুন আপনার স্কিনকেয়ার রুটিনে।
অতিরিক্ত ক্লিনজার ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন
অনেকেই দিনে-রাতে বেশ কয়েকবার ক্লিনজার ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যায়।কিন্তু অতিরিক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করলে তা ত্বকের ন্যাচারাল অয়েলকে ওয়াশ আউট করে ত্বকের ব্যারিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। তাই গরমে অতিরিক্ত ক্লিনজার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। ত্বক ঘেমে গেলে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন অথবা টিস্যু, কাপড় ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
স্কিন কেয়ার রুটিন সহজ রাখুন
স্কিন কেয়ার রুটিন যতটা সম্ভব সিম্পল রাখতে হবে। বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলুন। প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করা এ সময় এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ, ত্বকের ওপর যত বেশি প্রোডাক্টের লেয়ার থাকবে, তত বেশি ঘাম ও চিটচিটে ভাব তৈরি হবে।
ত্বক এক্সফোলিয়েট করুন
সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন ত্বক এক্সফোলিয়েট করা উচিত। এক্ষেত্রে অবশ্যই কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করুন। এটি ব্যবহার করলে ত্বকের ডেড সেলগুলো রিমুভ হয়ে ত্বক ডিপলি ক্লিন হয়। তাই ত্বকের জন্য মানানসই সঠিক এক্সফোলিয়েটর বেছে নিন।
সঠিক ময়েশ্চারাইজার বাছাই করুন
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হিউমেকট্যান্ট সমৃদ্ধ লাইটওয়েইট ময়েশ্চারাইজার বেশি মানানসই। এটি ত্বককে পর্যাপ্ত হাইড্রেশন দেবে এবং অয়েল কন্ট্রোল করবে। যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারে ত্বক অতিরিক্ত ভারি অনুভূত হয় বা অতিরিক্ত ঘাম হয় তা এড়িয়ে চলুন।
ত্বকের ধরন বুঝে সানস্ক্রিন বাছাই করুন
ত্বক পরিচর্যায় সানস্ক্রিন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ত্বকের ধরন বুঝে বাছাই করতে হবে। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীদের জন্য ওয়াটার বেইজড ও লাইটওয়েইট সানস্ক্রিন বেছে নিতে পারেন। অন্তত এসপিএফ ৩০ আছে এমন সানস্ক্রিন বেছে নিন। শুধু ব্যবহার করলেই হবে না, সেই সঙ্গে ৩ ঘণ্টা পরপর এটি রিঅ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না। গ্রীষ্মের কড়া রোদ থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সানস্ক্রিনের পাশাপাশি ছাতা, হ্যাট, স্কার্ফ ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
সুদিং জেল ব্যবহার করুন
গ্রীষ্মে ত্বকের ইরিটেশন কমাতে একটি ভালো উপাদান হচ্ছে সুদিং জেল। এতে বিভিন্ন ইনগ্রেডিয়েন্টের এক্সট্র্যাক্ট থাকে, তবে তা পরিমাণে কম। সুদিং জেলে মূলত পানির পরিমাণই বেশি থাকে। কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করলে খুবই রিফ্রেশড ফিল হয়। এটি ত্বকের লালচে ভাব, রোদে পড়া ভাব কমাতেও সাহায্য করে। তবে এটি কিন্তু ত্বকে দীর্ঘক্ষণ লাগিয়ে রাখা যাবেনা ৷ কারণ এটি একটি ওয়াশ অফ প্রোডাক্ট। তাই ত্বকে লাগিয়ে সর্বোচ্চ ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
শিট মাস্ক ব্যবহার করুন
মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের ভালো মানের হাইড্রেটিং ও সুদিং শিট মাস্ক পাওয়া যায়। এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারি হয়ে থাকে। এগুলোতে বিভিন্ন ইনগ্রেডিয়েন্টের এক্সট্র্যাক্ট থাকে। এটি ত্বকে সুদিং ও কামিং ইফেক্ট দেওয়ার পাশাপাশি ত্বক হাইড্রেট করতেও সাহায্য করে। তাছাড়াও এটি ত্বককে ইনস্ট্যান্টলি হেলদি ও ব্রাইট দেখাতেও সাহায্য করে থাকে। গরমে শিট মাস্ক ফ্রিজের নরমালে রেখে ব্যবহার করতে পারেন।
পানি পান করুন
গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ পানি বের হয়। যার ফলে ত্বকসহ পুরো শরীরই ডিহাইড্রেটেড হয়ে যায়। পানির ঘাটতি ত্বক ও শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। তাই এ সময় প্রচুর পানি পান করতে হবে। এতে শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় থাকবে।তৈলাক্ত খাবার বর্জন করুন
উপরের কাজগুলো করার পাশাপাশি নিজের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। গরম আবহাওয়ায় অতিরিক্ত তেল মশলাযুক্ত খাবার সহজে হজম হয় না। এতে শরীরে অস্বস্তি সৃষ্টি করে ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে। সুতরাং এ ধরনের খাবার এড়িয়ে চলাই উত্তম। শাক সবজি, অল্প মশলায় রান্না খাবার, তরল খাবার, মৌসুমি ফল ইত্যাদি খেতে হবে বেশি। তাহলে ত্বক ভেতর থেকে ভালো থাকবে।