গতকাল বহুদিন পর থিয়েটার অব ড্রিমসে দেখা মিলেছিল রেড ডেভিলদের। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের আমলে ম্যাচের যোগ করা সময়ে বহু স্মরণীয় জয় পেয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। এর একটি আলাদা নামও ছিল—‘ফার্গি টাইম।’লিভারপুলের বিপক্ষে এফএ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে দুবার পিছিয়ে পড়েও সমতা ফিরিয়েছে ইউনাইটেড। ১২০ মিনিটের খেলা শেষে টাইব্রেকারের ক্ষণগণনা যখন শুরু হচ্ছিল, তখনই আমাদ দিয়ালোর চমক। রোজা রেখে খেলতে নামা এই আইভরিয়ান ১২১ মিনিটে গোল করে উদ্যাপন করতে জার্সি খুলেছেন। তাতে দ্বিতীয় হলুদ কার্ডটি দেখায় মাঠ থেকেই বেড়িয়ে যেতে হয় তাঁকে! অবশ্য ইউনাইটেডের তাতে কিছু যায় আসেনি, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ৪-৩ ব্যবধানে হারিয়ে তারা চলে গেছে সেমিফাইনালে।
প্রাক ম্যাচ আলোচনায় লিভারপুল ফেবারিট হলেও গতকাল শুরুতে এগিয়ে গেছে ইউনাইটেডই। ১০ মিনিটে গারনাচোর শট লিভারপুল কিপার ঠেকালেও ফিরতি বল চলে যায় স্কট ম্যাকটমিনির কাছে। গোল থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরে থাকা এই মিডফিল্ডার কোনো ভুল করেনি।গোলের পর ঘুম ভাঙে লিভারপুলের। বলের দখল ও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় তারা। তবু গোল পাওয়া হচ্ছিল না আক্রমণের তিনজনের ব্যর্থতায়। তবে বিরতির ঠিক আগমুহূর্তে সে হতাশা দূর হয়। ৪৪ মিনিটে দারউইন নুনিয়েসের কাছ থেকে বল পেয়ে দূর থেকে শট নেন ম্যাকঅ্যালিস্টার। আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডারের শট মাইনুর গায়ে লেগে দিক বদলে জালে চলে যায়।যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে ইউনাইটেডের প্রথম গোলের পুনরাবৃত্তি তবে অন্য প্রান্তে। নুনিয়েসের শট ইউনাইটেড গোলকিপার ঠেকিয়ে দিলে ফিরতি বল পান মো সালাহ। লিভারপুলকে এগিয়ে দিয়ে বিরতিতে যান মিসরীয় ফরোয়ার্ড।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে কিছুটা প্রাধান্য ছিল ইউনাইটেডের। কিন্তু সুযোগগুলো কাজে লাগাতে না পারায় আবার লিভারপুল বলের দখল নিয়ে নেয়। এরপর বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল লিভারপুল। কিন্তু সালাহ-দিয়াজদের সিদ্ধান্তহীনতা ভুগিয়েছে লিভারপুলকে। সালাহকে তুলে নেওয়ার পরও সুযোগ নষ্ট থামেনি। ৮০ মিনিটের দিকে একটি প্রতি আক্রমণে বক্সের আশপাশে পাঁচজন লিভারপুলের খেলোয়াড় ছিল, আর ইউনাইটেডের ছিল মাত্র দুজন। এমন অবস্থাতেও শট নিতে ব্যর্থ হয়েছিল লিভারপুল।
৮৭ মিনিটে এর দায় মেটাতে হয়। প্রথম গোলের মতো এই গোলেও গারনাচোর অবদান আছে। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকলেও বল নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাঁর। তবে ইউনাইটেডের ভাগ্য ভালো, বল পান আন্তনি। গোল করতে ভুলে যাওয়া এই ফরোয়ার্ড দুর্বল ডান পায়ে যে শট নেন, সেটাই পোস্ট ঘেঁষে জালে ঢোকার জন্য যথেষ্ট ছিল। ৯৪ মিনিটে ম্যাচ শেষ করার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিলেন রাশফোর্ড। কিন্তু অফসাইডের ফাঁদ ভেঙ্গে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কাজগুলো দারুণভাবে করলেও বল পোস্টে রাখতে পারেননি ইউনাইটেডের ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে আবার এগিয়ে যায় লিভারপুল। ১০৫ মিনিটে এলিয়টের শট এরিকসনের গায়ে লেগে চলে যায় জালে। কিন্তু ১১২ মিনিটে বোকামি করে বসেন সিমিকাস। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে ম্যাকটমিনির গায়ে মারেন। তাঁর কাছ থেকে বল পেয়ে সমতা ফেরান রাশফোর্ড।১২১ মিনিটের গোলেও লিভারপুলের ভুল ছিল। এলিয়টের কাছ থেকে বল কেড়ে নেন দিয়ালো। সে বল পেয়ে লিভারপুল রক্ষণকে পাত্তা না দিয়ে এক ছুটে মাঠের অন্যপ্রান্তে চলে যান গারনাচো। বক্সের কাছে এসে বল দেন দিয়ালোকে। গোল করেই আত্মহারা দিয়ালো জার্সি খুলে হলুদ কার্ড দেখেন।
একটু আগেই হলুদ কার্ড দেখায়, দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পরিণত হয় লাল কার্ডে। এ নিয়ে হতাশা থাকলেও দলকে জেতাতে পেরেই খুশি তরুণ ফরোয়ার্ড, ‘আমি প্রথম হলুদ কার্ডের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। এ নিয়ে খুব হতাশ, লাল কার্ড। কিন্তু আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো জয় পাওয়া এবং লিভারপুলের মতো বড় দলের বিপক্ষে এমন জয় আমার জন্য অনেক, অনেক বড় মুহূর্ত।’ কদিন আগেই রোজার জন্য ইনস্টাগ্রাম আনইনস্টল করেছেন দিয়ালো। দিনের বেলায় ম্যাচ বলে কাল খেলেছেনও রোজা রেখে। এ ব্যাপারে ম্যাচ শেষে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘কাজটা সহজ না। রোজা রেখে খেলা সহজ না। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখতে হয়। আমি এটা খোদার জন্য করি। আমি রোজা রাখতে পেরে খুশি। এবং মাঠে থাকলে দলের জন্যও লড়তে চাই।’