Skip to content

আর্থিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে কর্মসংস্থানের সঙ্গে বাড়বে পরোক্ষ কর

    আর্থিক খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে কর্মসংস্থানের সঙ্গে বাড়বে পরোক্ষ কর prothomasha.com

    দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নারীরা পিছিয়ে। আর্থিক সেবা খাতেও নারীর অংশগ্রহণ কম। আর্থিক কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়বে, সেটি পরোক্ষ কর আদায়ে সহায়ক হবে। আর্থিক খাতে নারীর অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে কর নীতি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। এ ছাড়া সম্পত্তির মালিকানায় নারীদের সম্পৃক্ত করতে কর নীতিতে জোর দিতে হবে। আয়কর বিভাগের নারী কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার স্কাই সিটি হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশন।

    অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, নারীর বড় দুর্বলতা হচ্ছে সে নিজেকে দুর্বল ভাবে। তাই নারীদের নিজেকে সবল ভেবে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের সমস্যা খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এখনো সমাজে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সামাজিক কারণে এবং সংসারের চাপে এরপর আর নারীর অগ্রগতি হয় না।

    বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এনবিআরের কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ বলেন, নিজের শক্তি ও নিজের উন্নতি ছাড়া কোনো স্বপ্নই সম্ভব না। কেউ কারও জন্য জায়গা ছেড়ে দিতে চায় না। ভবিষ্যতে তারাই নেতৃত্ব দেবে, যারা মস্তিষ্কের যুদ্ধে জয়ী হবে। অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম নারী কর কমিশনার ফেরদৌস আরা বেগম বলেন, চ্যালেঞ্জিং পেশাগুলোতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য কর বিভাগে ওয়ান–স্টপ সেবা চালুর আহ্বান জানান সাবেক এই কর কমিশনার।

    অনুষ্ঠানে ‘কর এবং আর্থিক সক্ষমতার জন্য নারীর অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি: বাংলাদেশ পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) গবেষণা পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, নারীদের আরও বেশি আর্থিক খাতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারলে কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। যেসব নারী আর্থিক খাতে খুব বেশি গতিশীল না, তাদের ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে ব্যয়ের সুযোগ দিলে পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে তা সহায়ক হবে। আর্থিক কাঠামোয় নারীকে যুক্ত করতে পারলে সংসারে নারীর জোরালো কণ্ঠস্বর তৈরি হয় এবং লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে তারা।

    মূল প্রবন্ধে বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের তথ্য তুলে ধরে সায়মা হক বলেন, আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবা খাতে ৬৮ শতাংশ নারীর কোনো অভিগম্যতা নেই। ব্যাংক হিসাব, ইন্টারনেট ব্যবহার, ব্যাংকে সঞ্চয়, ব্যবসার ঋণ গ্রহণ, ডেবিট কার্ডধারী, মুঠোফোনে আর্থিক সেবাসহ বিভিন্ন আর্থিক সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরাও এখনো বেশ পিছিয়ে রয়েছে। মুঠোফোনে আর্থিক সেবা গ্রহণে নারীদের জন্য কিছু প্রতিকূলতার কথা তুলে ধরেন প্রবন্ধকার। তিনি বলেন, অনেক নারীরই নিজের কোনো মুঠোফোন নেই। আবার মুঠোফোনের ইংরেজি ভাষা, জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা, সাক্ষরতার হার কম থাকাও এ খাতে নারী অংশগ্রহণ কম থাকার অন্যতম কারণ।

    এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো, নারী গ্রাহকদের (উদ্যোক্তা) ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য আলাদা ডেস্ক রাখা, নারীর জন্য আলাদা প্যাকেজ, সহজলভ্য স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানোর কথা বলা হয় মূল প্রবন্ধে। এ ছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নারীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কর রেয়াত প্রদান, নারীদের আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড, সম্পত্তির মালিকানায় নারীদের সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (ট্যাকসেশন) অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. লুৎফুল আজীম। এতে আরও বক্তব্য দেন রাজস্ব বোর্ডের কর কমিশনার সামিয়া আখতার ও রওনাক আফরোজ, অতিরিক্ত কর কমিশনার আয়েশা সিদ্দিকা প্রমুখ।