এটা কি রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনী তহবিলের দাতাদের চাপ নাকি নিকি হ্যালির অভিমান? নিজের রাজ্য সাউথ ক্যারোলাইনায় হারের পরও রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দলীয় বাছাইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নিকি হ্যালি। কোনো কারণে কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ট্রাম্প যদি নির্বাচনী দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন, তাহলে একমাত্র বিকল্প হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন তিনি।
কেউ কেউ আবার বলছেন, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছেন নিকি হ্যালি। আর সাউথ ক্যারোলাইনায় জয়ের পর সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চোখ এখন স্পষ্টতই আগামী নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের দিকে। ওই নির্বাচনে তাঁর প্রতিপক্ষ হবেন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।ট্রাম্প ও বাইডেনের লড়াইয়ের আগেই জমজমাট রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন লড়াই। আইওয়া, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নেভাদা, ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডসের পর নিকি হ্যালির নিজের অঙ্গরাজ্যেও জেতেন ট্রাম্প। দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে প্রথম চারটি অঙ্গরাজ্যেই হারেন নিকি হ্যালি। শেষ সাউথ ক্যারোলাইনায় তিনি ট্রাম্পের কাছে ২০ পয়েন্টে হেরেছেন। অথচ, এখানেই তিনি গভর্নর ছিলেন।
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে নিকি হ্যালির সম্ভাবনা এখন সুতায় ঝুলছে। তারপরও তিনি সরে দাঁড়াচ্ছেন না কেন? এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার কাছে নতি স্বীকার না করার আর কোনো কারণ কি থাকতে পারে? অনেকেই ভাবছেন ভবিষ্যতের জন্য নিকির মাঠ প্রস্তুত রাখার কথাটি।স্যান্ডি এলিস নামের ৬৬ বছর বয়সী সাউথ ক্যারোলাইনার বাসিন্দা বলেন, তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। কিন্তু ভবিষ্যতে তাঁর নজর থাকবে নিকি হ্যালির ওপর। নিকি সম্পর্কে তিনি বলেন, তাঁর জন্য সামনে অনেক সময় পড়ে আছে।নিকি হ্যালি বলেন, বেশির ভাগ ভোটার ‘বিশৃঙ্খল’ ট্রাম্প আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে আরেকবার ভোটের লড়াইয়ের বিরোধী। ৭৭ বছর বয়সী ট্রাম্প ও ৮২ বছর বয়সী বাইডেন দুই বয়স্ক ব্যক্তি ইতিমধ্যে তাঁদের সময় পেরিয়ে এসেছেন।
তবে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, হ্যালি এখনো পিছিয়ে যাচ্ছেন না, কারণ, কোনো কারণে ট্রাম্প যদি আইনি লড়াইয়ে আটকে যান বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যায় পড়েন, তখন তিনি সামনে আসতে পারবেন। প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিস্ট্রি অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স বিভাগের অধ্যাপক জুলিয়ান জেলিজার বলেন, নির্বাচনী দৌড়ে হ্যালি থেকে যাওয়ার কারণ ট্রাম্পের বিজয়ের চেয়ে আদালতের বিচারে আটকে যাওয়ার আশঙ্কা।যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান পার্টির প্রাথমিক প্রার্থী বাছাইয়ে নিকি হ্যালিকে হারানোর পর সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, ‘রিপাবলিকান পার্টি এখন যেমন আছে, আমি কখনোই তেমন ঐক্যবদ্ধ দেখিনি।’ পরে ৩০ মিনিট ধরে দেওয়া ওই বক্তব্যে ট্রাম্প একবারও হ্যালির নাম উল্লেখ করেননি। তিনি আক্রমণ করেন বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।
হ্যালি বিভিন্ন দাতামহলের কাছ থেকে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যেতে তহবিল জোগাড়ের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে গত রোববার মার্কিন গণমাধ্যম জানায়, নিকি হ্যালির অন্যতম দাতা বিলিয়নিয়ার শিল্পপতি কোচ ব্রাদার্স তাঁর সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন। তবে হ্যালি বলেছেন, তিনি তৃণমূল পর্যায় থেকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার তহবিল পেয়েছেন। তিনি এ অর্থে তাঁর প্রচার অব্যাহত রাখবেন।ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পলিটিকসের পরিচালক ল্যারি সাবাতো বলেন, নিকি যত দিন তাঁর দাতাদের ধরে রাখতে পারবেন, তত দিন তিনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন। আদালতের রায়ে বা স্বাস্থ্যগত কারণে ট্রাম্প ছিটকে পড়েন কি না, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তিনি। নিকি যে ট্রাম্পকে সরাতে পারছেন না, তা নিশ্চিত হয়ে গেছে। প্রিন্সটনের অধ্যাপক জেলিজার এর সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, হ্যালি আশা করে আছেন যে ট্রাম্প আদালতের নির্দেশে বাদ পড়লে তাঁর পথ খুলে যাবে।
ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টাসহ চারটি অভিযোগের মুখোমুখি। তাঁর প্রথম ফৌজদারি বিচার আগামী রোববার শুরু হচ্ছে। এখন ট্রাম্প যদি নির্বাচন করতে না–ও পারেন, তবু নিকি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাঁর জায়গা পাবেন না। এ ক্ষেত্রে দলের অভ্যন্তরে জটিল প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে।তবে ট্রাম্পের বিরোধিতার কারণে অনেকেই এখন হ্যালিকে অপছন্দ করছেন। তাঁর জন্য পথটি জটিল করছেন ট্রাম্পের পুত্রবধূ। তিনি রিপাবলিকান জাতীয় কমিটির সহসভাপতি হওয়ার পথে।