Skip to content

‘জুজুর ভয় দেখিয়ে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করার চক্রান্ত চলছে’

    ‘জুজুর ভয় দেখিয়ে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করার চক্রান্ত চলছে’ prothomasha.com

    ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জুজুর ভয় দেখিয়ে দেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করার চক্রান্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গত ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা বিনাভোটের সরকারের পক্ষে সাফাই গেয়ে ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী গতকাল বলেছেন, ‘ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত। একটু ফ্যান চাইত।’ শেখ হাসিনা অসংখ্য মিথ্যা কথা বলেন কিন্তু তার এই কথাটা সত্য। এই কথায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের যে চিত্র ফুটে উঠেছিল সেটিই তিনি প্রকারন্তরে বলেছেন।’

    তিনি আরও বলেন, ‘তবে ৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের পর সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছিলো। তলাবিহীন ঝুড়ির অপবাদ ঘুচিয়ে স্বাধীনতার ঘোষকের শাসনামলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিদেশে চাল রপ্তানি করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার বিনাভোটের সরকারের দুর্নীতি, দুঃশাসন, টাকাপাচার, আর আওয়ামী বাজার সিন্ডিকেটের কারণে দেশে আবারো ১৯৭৪ এর অবস্থা বিরাজমান। দেশে এখন নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পেটের ক্ষুধার জ্বালায় শুরু হয়েছে মা তার সন্তান বিক্রি করার হিড়িক।’

    বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘৭ জানুয়ারী ডামি নির্বাচনের পূর্বে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বলে ডামি প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন। গতকালও এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করলে তিনি আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি, বরং ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘যারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন করছে তারা এর জন্য দায়ী, এখানে তাদেরও কিছু কারসাজী আছে।’ ৭ জানুয়ারী ডামি নির্বাচনের পর আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পুনরায় নতুন পৈশাচিকতায় আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য সেটিরই আলামত। এহেন বক্তব্য কান্ডজ্ঞানহীন, সুপরিকল্পিত ও মনোরোগের বর্ধিত প্রকাশ। জুজু’র ভয় দেখিয়ে দেশকে পাশ্ববর্তী দেশের ওপর নির্ভরশীল করার চক্রান্ত। এই প্রথমবারের মতো কচুর মুখী ও নারিকেল আমদানী করলো বাংলাদেশ।’

    রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘চাঁদাবাজীর কারণে দেশীয় পণ্যের দাম বাড়ছে। ভারতের এসব পণ্যের গুণগত মান কম। চাঁদাবাজী নেই বলে দাম কম। সিন্ডিকেটের কারণে বাংলাদেশী এসব কৃষিপণ্যের দাম কিছুটা বেশী। এভাবে চলতে থাকলে কৃষকরা উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। আর এই সুযোগে বাংলাদেশের ওপর পাশ্ববর্তী দেশের কতৃর্ত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।’

    বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত ফলাফলের নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে একদলীয় রাজ্যাভিষেকের পর নতুন করে দেশের নিত্যপণ্যের বাজার, জ্বালানী, ব্যাংক, অর্থনীতি, আইন-আদালত, শাসন-প্রশাসন, বিচার—আচার, টাকা-পয়সা, ব্যবসা বানিজ্য-সর্বত্রই চলছে বেপরোয়া অরাজকতা ও নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খলা। এরা বিশ্বাস করে অশান্তি, হিংসা আর হানাহানী। খুন-খারাবী, নারী-শিশু নির্যাতন, অপহরণ, গুপ্তহত্যা ইত্যাদি অনাচারে মানুষের দিন কাটছে ঘনতমসাবৃত অবস্থায়। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া দেশের জনগণ প্রতিদিন রাজনৈতিক ও নৈতিক বৈধতাহীন ডামি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাদের মন্ত্রী-নেতাদের নির্জলা নগদ মিথ্যা কথাবার্তা, হিংস্র, উদ্ভট, বেসামাল, প্রতারণামুলক বয়ান শুনতে শুনতে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। চীনে একটি কথা প্রচলিত আছে যে ‘চীনের দুঃখ হোয়াং হো নদী’ একইভাবে গণতন্ত্র এবং ভোটার অধিকার হারানো নিষ্পেষিত নিপিড়িত সুশাসন বঞ্চিত জনগণ মনে করে ‘বাংলাদেশের দুঃখ শেখ হাসিনা।’

    সরকার আর মুনাফাখোর বাজার সিন্ডিকেট এখন একাকার- মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লুটেরা সিন্ডিকেট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ছত্রছায়ায় এখন বাজারের উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। সিন্ডিকেট সরকার উদ্ভট কথাবার্তা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। সম্পূর্ণভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির দায়ও চাপাচ্ছে বিএনপির ওপর। গতকাল গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, “দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে সরকার উৎখাতে আন্দোলনকারীদেরও কারসাজি আছে।” তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে সীমাহীন।’

    তিনি আরও বলেন, ‘পবিত্র রমজান আসন্ন। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন সরকারি পদক্ষেপেও অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে কোন কাজে আসছে না। আওয়ামী বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ঢাকার জন্য শেখ হাসিনা বলেছেন, “যারা পেঁয়াজ পচিয়ে পানিতে ফেলে দিচ্ছে। তাদেরকে গণধোলাই দেওয়া উচিত।” জনগণকে আইন হাতে তুলে নিতে প্ররোচিত করে আপনি শেখ হাসিনা নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে পারবেন না। আপনার বক্তব্য ফৌজদারি অপরাধের সমতুল্য। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে পুলিশ, জনগণ নয়। কিন্তু ভোট চুরির কাজে পুলিশকে ব্যবহার করে এই পুলিশের উপর আপনি কমান্ড করার নৈতিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। এখন গণধোলাইয়ের ভয় দেখিয়ে সারাদেশে নিরীহ ব্যবসায়ীদের ওপর নির্যাতন আর চাঁদাবাজি শুরু করবে আওয়ামী লীগ।’

    সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব দীর্ঘদিন যাবৎ কারাগারে ডায়াবেটিস ও লিভারজনিত রোগে ভুগছেন। কারাকতৃর্পক্ষের অবহেলায় সুচিকিৎসা পাচ্ছে না। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সে এখন হাটতেও পারছে না। আমি অবিলম্বে বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব এর সুচিকিৎসার জোর আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় তার কিছু হলে সরকারকেই এর দায় বহন করতে হবে।’