দুধ হলো স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্তন্যগ্রন্থি থেকে উৎপন্ন একপ্রকার সাদা তরল পদার্থ। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য। দুধ নবীজি (সা.)-এর প্রিয় খাবার। তিনি দৈনিক খাবারের তালিকায় দুধ রাখতেন। কারণ দুধ একটি চমৎকার স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। আধুনিক পৃথিবীর চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও এ কথা স্বীকার করেছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, দুধ শরীরের পেশিশক্তি বাড়ায়, হাড় ও দাঁত মজবুত করে। এ ছাড়াও নিয়মিত দুধ পান করলে ত্বকে উজ্জ্বলতা আসে। দুধে রয়েছে ভিটামিন ডি। দুধ পানে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক সুস্থতা ও জীবাণুমুক্ত জীবন গড়তে সক্ষম হয়। তাই মানব জীবনে দুধপানের উপকারিতা অনস্বীকার্য।
কুরআনে পশুর দুধের গুরুত্ব : আল্লাহ তায়ালার সমুদয় সৃষ্ট বস্তু মানবজাতির জন্য রহমতস্বরূপ। প্রতিটি সৃষ্টিতে মানবকুলের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। একইভাবে দুধও আল্লাহ প্রদত্ত একটি নেয়ামত, যা গবাদিপশুর স্তনে আল্লাহ তায়ালা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তিনি কত সুন্দরভাবে দুধকে গরু-ছাগলের স্তনে যত্ন করে রেখেছেন। এ চর্বিজাত দুধ দোহন করে মানুষ পান করে। আর কাঁচা দুধপানে মানবদেহে পুষ্টি জোগায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘গবাদিপশুর ভেতরে তোমাদের জন্য আছে অবশ্যই শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। তাদের পেটে যা আছে তা থেকে আমি তোমাদের পান করাই (দুধ) আর তাতে তোমাদের জন্য আছে বহুবিধ উপকার। তোমরা তা থেকে খাও (গোশত)।’ (সুরা মুমিনুন : ২১)
মেরাজে দুধ দ্বারা আপ্যায়ন : মেরাজের ঘটনা মুসলিম উম্মাহর কাছে বেশ পরিচিত। এ ঐতিহাসিক মেরাজে নবীজি (সা.) পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আদেশপ্রাপ্ত হন। এটি ছিল নবীজির প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা। মেরাজের রজনিতে হজরত জিবরাইল (আ.) নবীজিকে দুধ ও শরাব দ্বারা আপ্যায়ন করেন। কিন্তু নবীজি (সা.) দুধের পাত্রটি গ্রহণ করেন এবং তা পান করেন। এভাবে রাসুল (সা.) মেরাজের রাতে দুধ দ্বারা আপ্যায়িত হলেন এবং নিজের রুচিসম্মত খাবারের প্রতি সম্মতি প্রকাশ করলেন। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মেরাজের রাতে বায়তুল মুকাদ্দাসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল (আ.) আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল (আ.) বললেন, আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন।’ (বুখারি : ৮২)
দুধ হাদিয়া এলে ফেরানো নয় : মুমিনদের মধ্যে একে অপরকে হাদিয়া দেওয়া বা নেওয়া উভয়টি সুন্নত। নবীজি (সা.) সাহাবিদের হাদিয়া দিতেন এবং তাদের দেওয়া হাদিয়া গ্রহণ করতেন। একইভাবে দুধ হাদিয়া এলে তিনি তা ফিরিয়ে দিতেন না। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তিনটি বস্তু ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়। আর সেসব হচ্ছে- বালিশ, সুগন্ধি তেল ও দুধ।’ (তিরমিজি : ৩০২০)দুধপানকালে দোয়া পড়া সুন্নত : ইসলামি শরিয়তে খাওয়া বা পান করার বিশেষ সুন্নত পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- পানি পান করার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা আর পান শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা। তেমনিভাবে দুধপানের ক্ষেত্রেও সুন্নত পদ্ধতির শিক্ষা দিয়েছে ইসলাম। আর তা হলো দুধপান করার পর ‘আল্লাহুম্মা বারিক-লানা ফিহি ওয়াজিদ-না মিনহু’ বলা। তবে অন্যান্য খাবারের মতো দুধ পানের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলবে। (আবু দাউদ : ৩৭৩২)