জাপানের ‘নেকেড মেন’ ফেস্টিভ্যালের আরেক নাম সোমিনসাই উৎসব। কোকুসেকি মন্দিরে পালিত হয় এই উৎসব। এই অনুষ্ঠানে জাপানের শত শত পুরুষেরা ছোট সাদা কাপড় জড়িয়ে সামিল হন। সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষেরা বরফের পানিতে গোসল করে শুদ্ধ হন।তারপর কয়েক ঘণ্টা ‘জাসো জয়সা’বলে স্লোগান দিতে দিতে মন্দিরের চারপাশে দৌড়াতে হয়। এরপরে মন্দিরের পুরোহিত মাঠে ১০০ মন্তপূত লাঠি ছড়িয়ে দেন। এই লাঠি সংগ্রহ করার জন্য চেষ্টা করেন পুরুষেরা। কারণ এই অনুষ্ঠানের রীতি অনুযায়ী, যে ওই লাঠি নিতে পারবে তার সারাবছর ভালো যাবে। কিন্তু ওই লাঠি দখল করা মোটেই সহজ হয় না। কারণ লোকসংখ্যার থেকে লাঠির সংখ্যা থাকে কম। ফলে লাঠি হাতানোর জন্য পুরুষদের মধ্যে মারপিট লেগে যায়। গত শনিবার এই অনষ্ঠান হয়েছে। এইবার নারীরাও অংশ নিয়েছেন। কারণ আগামীবছর থেকে আর এ অনুষ্ঠান হবে না। সূত্র জাপান টাইমস।
কেন বন্ধ হয়ে গেল হাজার বছরের বেশি পুরনো এই উৎসব?
ইন্ডিয়ান টাইমস ও এইসময়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী , জাপানের জনসংখ্যার হার নিম্নমুখী। যুব সম্প্রদায়ের থেকে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। আগামী কয়েক বছরেও অবস্থাতে যে খুবএকটা পরিবর্তন হবে তাও নয়। অথচ এই উৎসবের অংশ অনুযায়ী, মন্দিরে প্রার্থনার পর উৎসবের অংশ হিসাবে পুরুষরা কয়েক ঘন্টা মন্দিরের মাঠের চারপাশে দৌড়াদৌড়ি করেন। তারপর জমাট বাঁধা বরফ জলে স্নান করে নিজেকে শুদ্ধ করে যান মূল মন্দিরের দিকে। এরপর মন্দিরের পুরোহিত মন্দিরের মাঠে ছড়িয়ে দেন ১০০ মন্ত্রপূত লাঠি। সেখানে অপেক্ষায় থাকা পুরষরা দু’ই ভাগ্যবান লাঠির দখল নিতে সংঘর্ষণে লিপ্ত হন। কারণ তাঁদের বিশ্বাস, যাঁরা ওই লাঠি দু’টি পাবেন তাঁদের গোটা বছরটি ভালো কাটবে। তবে ভাগ্যবান লাঠির দখল পাওয়া মোটেই সহজ নয়। ফলে লাঠির দখল নিতে উলঙ্গ পুরুষদের মতে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। এভাবেই রক্তাক্ত শরীরে শেষ হয় জাপানি পুরুষদের নেকেড ফেস্টিভ্যাল বা উলঙ্গ উৎসব। এই উৎসবে অংশ নেন কম বয়সী বা মধ্যবয়সীরা। তবে জাপানে যেহেতু জনসংখ্য়ার হার ক্রমেই কমছে তাই যুব সম্প্রদায়ের সংখ্য়াও কম। সেক্ষেত্রে যাঁরা এখনও উৎসবে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা বয়স্ক। এই উৎসবের রীতিনীতির ফলে তাঁদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। কোনও অঘটনও ঘটে যেতে পারে। এবারেই তাই শেষবারের মতো, পুরুষদের “জাসো, জয়াসা” (অর্থাৎ “অশুভ, চলে যাও”) স্লোগানের মধ্যে দিয়ে শেষ হল বহু পুরাতন এই উৎসব।
বার্ষিক এই অনুষ্ঠান শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোকুসেকি মন্দির কর্তৃপক্ষ। এই উৎসব স্থানীয় বয়স্ক মানুষদের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই উৎসবের কঠোর আচারবিধি বয়স্কদের জন্য পালন করা কঠিন তাই এই উৎসব বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাপানের নেকেড ফেস্টিভ্য়ালের আর এক নাম সোমিনসাই উৎসব। কোকুসেকি মন্দিরে পালিত হয় এই উৎসব। পরের বছর থেকে এই মন্দিরে আর বড় করে পালিত হবে না এই উৎসব। তবে বছরের এই নির্দিষ্ট সময়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠান চলবে।এবারই প্রথমবার এই উৎসবে মহিলাদের অংশগ্রহণের অনুমতি মিলেছিল। আগে কেবল পুরুষদেরই এই উৎসবে সামিল হওয়ার অধিকার ছিল। মহিলাদেরও এই উৎসবে সামিল হওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জানানো হচ্ছিল। সেই আবেদন-অনুরোধ মেনে অবশেষে ৪০ জন মহিলাকে নগ্ন উৎসবে সামিল হওয়ার অনুমতি দিয়েছিল জাপান সরকার।