আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভারতের কৃষকদের আন্দোলন। বিভিন্ন দাবিতে আজ মঙ্গলবার দিল্লিযাত্রার ডাক দিয়েছেন পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তর প্রদেশের হাজার হাজার কৃষক। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় কৃষক আন্দোলন প্রতিরোধের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে একাধিক পরিকল্পনা করেছে বিভিন্ন রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন।
আন্দোলন দমন করতে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকার দমন-পীড়নমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। হরিয়ানা সরকার দুটি বড় স্টেডিয়ামে অস্থায়ী কারাগার তৈরি করেছে। কৃষকেরা মিছিল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তাঁদের আটক করে সেখানে রাখা হবে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ যেন এই আন্দোলনের কারণে অসুবিধার মুখে না পড়েন, সে দিকেও লক্ষ রাখা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।
কৃষকদের আজকের কর্মসূচির বেশ আগেই দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আগামী ১২ মার্চ পর্যন্ত এই ১৪৪ ধারা জারি থাকবে ভারতের রাজধানীতে; অর্থাৎ এ সময়ে জমায়েত করা যাবে না। ফসলের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের (এমএসপি) নিশ্চয়তা দেওয়ার আইন, কৃষকদের জন্য পেনশন, শস্যবিমা ও তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর বাতিলের দাবিতে আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘দিল্লি চলো’ ডাক দিয়েছেন উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা। একাধিক দাবি নিয়ে পথে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। ভারতের দুই শতাধিক কৃষকসংগঠন আন্দোলনে শামিল হবে।
উত্তর প্রদেশের নয়ডা ও গ্রেটার নয়ডার কৃষকেরা ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধির দাবিতে গত ডিসেম্বর মাস থেকে একটানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি প্রতিবাদী কৃষকেরা কিষান মহাপঞ্চায়েতের ডাক দিয়েছিলেন। আজকের কর্মসূচি মূলত সেই সম্মেলনে ঠিক হয়। সিদ্ধান্ত হয়, নিজেদের দাবি আদায়ে তাঁরা মিছিল করে সংসদ পর্যন্ত যাবেন। ফলে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
এর আগে ফসলের ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধির দাবিতে গত বৃহস্পতিবার মিছিল করে সংসদ পর্যন্ত যাওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেন ভারতের উত্তর প্রদেশের কৃষকদের একাংশ। কিন্তু সেদিনও তাঁদের আটকে দেওয়া হয়। উত্তর প্রদেশ থেকে দিল্লিতে ঢোকার সব পথে ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ। ২৪ ঘণ্টার জন্য জারি ছিল এই ১৪৪ ধারা।
ভারতের সংসদে তখন বাজেট অধিবেশন চলায় অধিকাংশ সাংসদ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উত্তর প্রদেশ থেকে দিল্লি ঢোকার পথে কোথাও পাঁচজনের বেশি জমায়েত দেখলেই তা সরিয়ে দেওয়া হবে।
২০২০ সালে কৃষক বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা দেশ। উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোয় ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন হয়েছে। দিল্লির সীমানায় প্রায় এক বছর ধরে ধরনা করেছেন ভারতের কৃষকেরা। সেই আন্দোলনের মোদি সরকার তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এরপর সময়-সময় ভারতের কৃষকসংগঠনগুলো সরকারের কাছে এমএসপির পুরোনো দাবি উত্থাপন করেছে। সেই আন্দোলনের জেরে শেষমেশ পিছু হটে নরেন্দ্র মোদি সরকার। ‘বিতর্কিত’ কৃষি বিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
মোদি সরকারের দাবি ছিল, মূলত তিনটি উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সেই তিনটি কৃষি আইন কার্যকর করা হয়েছিল। প্রথমত, দালালদের আধিপত্য কমিয়ে কৃষকের আয় বাড়ানো; দ্বিতীয়ত, রাজ্যগুলোয় চুক্তিভিত্তিক চাষের ব্যবস্থাকে আইনগত ভিত্তি দেওয়া এবং তৃতীয়ত, কৃষিপণ্য বিপণন নিয়ে যে আইন আছে, তা বাতিল করে আন্তরাজ্য কৃষিপণ্যের অবাধ বাণিজ্যের পথ প্রশস্ত করা।
কিন্তু ভারতের কৃষকসংগঠনগুলো তখন বলেছিল, মজুতদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হবে। দেশের মানুষের স্বার্থ না দেখে কৃষিপণ্য রপ্তানি করা হবে। কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবেন না। বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো কৃষকদের বঞ্চিত করবে এবং বড় বাণিজ্যিক সংস্থা চুক্তির খেলাপ করলে কৃষকের পক্ষে আইনি মোকাবিলা কার্যত অসম্ভব হবে।