বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের কোয়ার্টারের একটি কক্ষ থেকে অন্তরা পানুয়া (২২) নামের বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) এক ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত অন্তরা আইএইচটির ডেন্টাল অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং পটুয়াখালী সদর উপজেলার খলিসাখালী এলাকার অনুকুল চন্দ্র পানুয়ার মেয়ে।
আইএইচটির শিক্ষক অধ্যক্ষ ডা. মানষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, ‘অন্তরা বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির ডেন্টাল অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। আমাদের শিক্ষার্থী যাদের বিয়ে হয়েছে, তারা অনেকেই বাইরে থাকেন। অন্তরাও হোস্টেলে না থেকে বাইরে থাকতো। তবে তিনি কোথায় থাকতো সেটি আমরা জানতাম না। সকালে তার আত্মহত্যার খবর শুনে ঘটনাস্থলে যাই। অন্তরার মরদেহ যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেটি আমাদের আওতাভুক্ত এলাকা না। সেটি শেবাচিম হাসপাতালের কোয়ার্টার। তিনি কিভাবে সেখানে থাকতো তাও জানি না।’
নিহত অন্তরার পাশের কক্ষে থাকা আইএইচটির অপর ছাত্রী সুমাইয়া জানান, তারা আগে যেখানে থাকতেন, সেখান থেকে একদিন আগে কলেজের শিক্ষক তাহেরুল ইসলাম সুমনের মাধ্যমে শেবাচিম হাসপাতালের এই কোয়ার্টারে ওঠেন। দোতলায় তাদের শিক্ষক তাহেরুল ইসলাম সুমন থাকেন।
সুমাইয়া বলেন, ‘আমরা এখানে অল্প কয়েকদিনের জন্য থাকতে এসেছিলাম, নতুন বাসা নিয়ে সেখানে যাব। কিন্তু তার আগেই অন্তরা আজ আত্মহত্যা করল। তিনি আরও বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে অন্তরার রুমের জানালা দিয়ে দেখতে পাই ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দিয়ে অন্তরা ঝুলছে।’ এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষক সুমনকে ওই ভবনে পাওয়া যায়নি। তার ফ্ল্যাটে অবস্থান নেওয়া জেলা আনসার অফিসের এক কর্মকর্তা নিজেকে সুমনের মামা দাবি করে বলেন, ‘সুমনের বদলি হয়েছে, আর সে কারণে সুমন বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছে।’
মোবাইল ফোনে শিক্ষক সুমনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তৃতীয় তলার ফ্ল্যাট খালি থাকায় সেখানে ওই দুই ছাত্রীকে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু উপকার করতে গিয়ে এমন ঘটনা ঘটবে, তা জানতাম না। আর শিক্ষার্থীর বাইরে এ মেয়েদের সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত পরিচয়ও নেই। ফ্ল্যাটে অবৈধভাবে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সবাই বিষয়টি জানেন। হাসপাতালের কোয়ার্টার যাদের নামে বরাদ্দ, তারা সেখানে থাকেন না। ভাড়া দিয়ে দেন। আমিও দোতলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছি মেডিকেল কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আবিদ হাসানের কাছ থেকে।’
এ বিষয়ে আবিদ হাসানের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম জানান, সম্প্রতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোয়ার্টারগুলো পরিদর্শন করেছেন। তখন তারা তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটে কাউকে পাননি, বাইরে থেকে তালাবদ্ধ পেয়েছেন। শেবাচিম হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, ‘তৃতীয় শ্রেণির কোয়ার্টারে আইএইচটির ছাত্রীর অবস্থান এবং আত্মহত্যার বিষয়টি পুলিশের পাশাপাশি আমরাও খতিয়ে দেখব।’
কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিচুর রহমান বলেন, ঘটনাটিকে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে হচ্ছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা খতিয়ে দেখব।