‘ইউএস অ্যাগ্রিমেন্ট’ অ্যাপে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীরা শনিবার দুপুরে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেছেন। সারা দেশের ২০০ ভুক্তভোগীর প্রায় ৩০০ কোটি টাকা উদ্ধার ও প্রতারকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেন শতাধিক নারী-পুরুষ। বক্তারা এ সময় বলেন, প্রতারকেরা উল্টো তাঁদের কয়েকজনের নামে আদালতে মামলা করেছেন। তাঁরা এর প্রতিকার চান। দুপুর ১২টা থেকে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে সাধারণ মসলা ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ৯০ লাখ টাকা খোয়ানো সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন।
ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের আগে এমটিএফই, ই-মুভি প্ল্যানসহ কয়েকটি বিদেশি অ্যাপ দেশে গ্রাহক তৈরি করে এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলেন, ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের গ্রাহকদের বোঝানো হয়, এই অ্যাপে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে। বিদেশ থেকে ব্যাংকে রেমিট্যান্স আকারে প্রতি মাসে মুনাফা আসবে। প্রথম দিকে এমনটি হয়েছে। তা দেখে বিশ্বাস করে একের পর এক বিনিয়োগকারী ঝুঁকেছেন।
এ অ্যাপ চালু হয় ২০১৯ সালে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের পরে আর কাউকে মুনাফা দেওয়া হয়নি। ব্যাংকের জটিলতার কথা বলে সব গ্রাহককে থামিয়ে রাখা হয়েছিল। গত নভেম্বরে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়। প্রতারকেরা আত্মগোপন করেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন রাজশাহী নগরের কাজীহাটা এলাকার রাজু আহম্মেদ নামের এক ব্যক্তি। তিনি ৩০ লাখ টাকা খুইয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় ১৭ জানুয়ারি রাজশাহী নগরের রাজপাড়া থানায় পাঁচ প্রতারকের নামে একটি মামলা করেছেন মোস্তাক হোসেন (৪৫) নামের এক ব্যক্তি। মামলার বাদীও টাকা খুইয়েছেন। মামলার প্রধান আসামি ইউএস অ্যাগ্রিমেন্টের রাজশাহী বিভাগীয় প্রধান রাজশাহী নগরের নওদাপাড়া এলাকার মো. ওয়াহেদুজ্জামান (৩৮)। রাজু আহাম্মেদও তাঁর হাতেই টাকা তুলে দিয়েছেন।
রাজু আরও বলেন, ওয়াহেদুজ্জামানের স্ত্রী মামলার ২ নম্বর আসামি। তিনি এই অ্যাপের রাজশাহী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক। তাঁর নাম ফাতেমা তুজ জহুরা। ফাতেমা উল্টো পাঁচজন ভুক্তভোগীকে বিবাদী করে হয়রানির অভিযোগে ১০৭ ধারামতে রাজশাহীর আদালতে একটি মামলা করেছেন। তাঁরা এ ঘটনার প্রতিকার দাবি করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেন রাজশাহী নগরের শিরোইল এলাকার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা সুফি আবদুল নাঈম। তিনি বলেন, তিনি এ প্রতারকদের হাতে নিজের জীবনের সব সঞ্চয় প্রায় ৯০ লাখ টাকা দিয়েছেন। কয়েক মাস মুনাফা পেয়েছেন। কিন্তু মূল টাকা আর ফেরত পাননি।
নগরের ডিঙ্গাডোবা এলাকার গৃহবধূ সালমা খাতুন দাঁড়িয়েছিলেন এই মানববন্ধনে। তিনি বলেন, ওয়াহেদুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী বাসায় গিয়ে তাঁদের একাধিকবার বুঝিয়েছেন এ অ্যাপে টাকা বিনিয়োগ করতে। এখন আর তাঁদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি (সালমা) শুধু নিজের টাকা দেননি। নিজের এক লাখ টাকাসহ তাঁর খালা ও বোনের মিলে মোট ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি এখন মহাবিপদে পড়েছেন। গিয়াস উদ্দিন রাজশাহী নগরের একজন হলুদ-মরিচের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা ওয়াহেদুজ্জামানের হাতে দিয়েছেন। এখন তাঁর ব্যবসায়ের আর কোনো পুঁজি নেই।
ভুক্তভোগী মোস্তাকের করা মামলায় ওয়াহেদুজ্জামান ও ফাতেমা ছাড়া আরও আসামি করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের মোতালেব হোসেন ভূঁইয়া (৩৫), মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ফারুক হোসাইন ও রাজশাহী জেলা এজেন্ট নগরের বোয়ালিয়াপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মিঠুন মণ্ডলকে (৩৬)। ইতিমধ্যে রাজশাহীতে দায়ের করা মামলার আসামিরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে জন্য ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়েছে পুলিশ।