রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে পৃথক দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় এক ব্যবসায়ী ও এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ দুটি দুর্ঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছেন। একই দিনে দুটি দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা ৬ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন এবং কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। আজ শুক্রবার সোয়া ১টার দিকে রাজবাড়ীর ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জমিদার ব্রিজ এলাকায় গোল্ডেন লাইন পরিবহনের দুটি বাস বাইসাইকেল আরোহী ও মাহেন্দ্র গাড়িকে ধাক্কা দেয়। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এমএম পরিবহনের একটি বাস আরেকটি মোটরসাইকেল আরোহীকে চাপা দেয়।
স্থানীয়রা জানান, গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি বাসের চাপায় আকবর মল্লিক (৬০) নামের এক বাইসাইকেল আরোহী নিহত হন। পরে এমএম পরিবহনের চাপায় রনি মন্ডল (৩০) নামে আরেক মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়। নিহত আকবর মল্লিক রাজবাড়ী সদর থানার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের মুকুন্দিয়া গ্রামের মৃত মোনছের মল্লিকের ছেলে। তিনি গোয়ালন্দে বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। নিহত রনি মন্ডল গোয়ালন্দ উপজেলার গোয়ালন্দ রেল গেইট এলাকার আজাদ মন্ডলের ছেলে।
এ দুটি দুর্ঘটনায় শিল্পী বেগম, কাসেম আলী, আমেনা বেগম ও মাহমুদ নামে চারজন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় ও ফরিদপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা প্রায় ৬ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে তারা।
গোল্ডেন লাইন পরিবহনে থাকা এক যাত্রী জাকির হোসেন বলেন, পরিবহনের চালক এক হাতে মোবাইলে কথা বলছিলেন, আর অন্য হাত দিয়ে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাকে বারবার ফোনে কথা বলতে নিষেধ করলেও তিনি কারো কোনো কথাই শুনছিলেন না। এর মধ্যে জমিদার ব্রিজ এলাকায় আসলে বিকট শব্দ শুনতে পাই। চালক গাড়িটি না থামিয়ে চালিয়ে আসতে থাকেন। এ সময় গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ডে আসলে পুলিশ গাড়িটিকে আটকায়। তবে চালক ও সহকারী চালক দুজনে পালিয়ে যান।
ঘটনাস্থলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারী জবেদা বেগম বলেন, অটো বাইকের জন্য মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় রাস্তার পাশ দিয়ে একজন মোটরসাইকেল নিয়ে গোয়ালন্দের দিক থেকে আসছিলেন। এমন সময় গোয়ালন্দ মোড়ের দিক থেকে হঠাৎ করে একটি বাস এসে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দেয়। তিনি মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে যান। এ সময় আমিসহ আশপাশের মানুষ তাকে উদ্ধার করে একটি ভ্যানে করে হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রনি মন্ডলের মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা অন্তত ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করেন। সড়ক অবরোধ করায় জমিদার ব্রিজ থেকে খানখানাপুর এলাকা পর্যন্ত সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। নিহত রনির আত্বীয় সোবহান বলেন, এমএম পরিবহনের একটি বাস মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রীকে চাপা দিয়ে মোটরসাইকেলটি প্রায় এক কিলোমিটার টেনে নিয়ে যায়। আহত অবস্থায় শিল্পী ও তার স্বামী রনিকে প্রথমে গোয়ালন্দ হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখান থেকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন রনি মন্ডলের মৃত্যু হয়।
আলাদিপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হালিম বলেন, গোল্ডেন লাইন পরিবহন ও এমএম পরিবহনের বাস দুটিকে জব্দ করা হয়েছে। চালক ও সহকারী চালক পালিয়ে গেছে। জনতার দাবির মুখে স্পিড ব্রেকার দেওয়া হচ্ছে। রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পৃথক সড়ক দুঘর্টনার পর স্থানীয়রা সড়কটি অবরোধ করে রাখে। পরে তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উদ্যোগে স্প্রিড ব্রেকার দেওয়ার পর জনতা সড়ক ছেড়ে দেয়।