পরীক্ষামূলক জিন থেরাপির মধ্য দিয়ে শোনার সক্ষমতা অর্জন করেছে জন্মগত শ্রবণপ্রতিবন্ধী পাঁচ শিশু। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। গবেষকদের দাবি, এ পদ্ধতিতে জিন-সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাগুলো কাটানো যাবে। এ-সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যার চিকিৎসায়ও এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে বলে আশা তাঁদের। চীনের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কার্যক্রমটি চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের আওতাধীন পরিচালিত ম্যাসাচুসেটস আই অ্যান্ড ইয়ার হাসপাতাল এবং ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের আই অ্যান্ড ইএনটি হাসপাতালের গবেষকেরা যৌথভাবে এ গবেষণা চালিয়েছেন।
এক থেকে সাত বছর বয়সী ছয় শিশুকে এই পরীক্ষামূলক জিন থেরাপি দেওয়া হয়েছিল। এই ছয় শিশুর ওটিওএফ জিনে মিউটেশন হওয়ার কারণে তাদের শোনার সক্ষমতা ছিল না। কান থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পাঠানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত একটি প্রোটিন ওটিএফ জিন থেকে উৎপন্ন হয়। থেরাপির মধ্য দিয়ে ওই শিশুদের জিন মিউটেশন সংশোধন করা হয়েছে। ওই শিশুরা কোনো কথা শুধু শব্দ আকারে শুনতে পেত। কিন্তু জিন থেরাপি দেওয়ার পর ছয় শিশুর মধ্যে পাঁচ শিশুর উন্নতি দেখা যায়। তাদের শব্দকে বক্তব্য আকারে শনাক্ত করতে পারার সক্ষমতা বেড়েছে। ছয়জনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট শিশুটির (এক বছর বয়সী) মধ্যেও ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে। তবে তার বয়স বেশি কম হওয়ার কারণে নিশ্চিত হওয়ার মতো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যায়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
২৫ জানুয়ারি হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের ওয়েবসাইটে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। আগের দিন ২৪ জানুয়ারি ল্যানসেট সাময়িকীতেও প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ২৬ সপ্তাহ ধরে ওই শিশুদের ওপর জিন থেরাপির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, এ থেরাপির মধ্য দিয়ে চারটি ‘আশাপ্রদ’ ফল পাওয়া যাচ্ছে। পরীক্ষা চালানোর আগে গবেষকদের ওটিওএফ জিনের আকার-সংক্রান্ত একটি কারিগরি জটিলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। কারণ, এ প্রক্রিয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট একটি ভাইরাসের মাধ্যমে কানের ভেতর জিনটিকে প্রবেশ করাতে হয়। ভাইরাসটি জিনটিকে নির্ধারিত কোষের ডিএনএতে ঢোকায়। এরপর এটি প্রয়োজনীয় প্রোটিনের উৎপাদন শুরু করে।
এ ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, ওটিওএফ জিনটির আকার এত বড় যে ভাইরাসটির পক্ষে এটিকে ধরে রাখাটা কঠিন। এ জন্য গবেষকেরা জিনটিকে দুই ভাগ করে দুটি আলাদা ভাইরাসের মাধ্যমে মিশ্রণ তৈরি করে তা কানের ভেতর ঢুকিয়েছেন। এ প্রক্রিয়া কাজ করছে কি না, তা জানতে পরীক্ষা শুরুর জন্য গবেষকদের চার থেকে ছয় সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে। যে ছয় শিশুর মধ্যে পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে, তার মধ্যে পাঁচজনের মধ্যে আশাব্যঞ্জক সাড়া পাওয়া গেছে। তিনজন ২৬ সপ্তাহ পর বক্তব্য শুনতে ও বুঝতে পারছে। আর দুজন কোলাহলপূর্ণ একটি কক্ষে কথা বুঝতে পেরেছে এবং টেলিফোনে আলাপ করতে পেরেছে।
ম্যাসাচুসেটস আই অ্যান্ড ইয়ারের ইটন-পিবডি ল্যাবরেটরিজের জ্যেষ্ঠ গবেষক ঝেং ইয়ি চেন বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে বিভিন্ন ধরনের শ্রবণপ্রতিবন্ধকতার চিকিৎসা উন্নত করার পথ খুলল।’ ঝেং ইয়ি চেন বলেন, শ্রবণশক্তি হারানোর কারণে বিশ্বজুড়ে ১৫০ কোটির বেশি মানুষের ওপর প্রভাব পড়েছে। বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ লাখ মানুষের কানে না শোনার কারণ ওটিওএফ জিনের মিউটেশন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ গবেষণার কাজ শেষ হয়। এ ধরনের চিকিৎসায় জিন থেরাপি ব্যবহারের ঘটনা এটাই প্রথম। তবে এ নিয়ে আরও কয়েকটি গবেষণার কাজ চলছে। আগামীকাল শনিবার এই গবেষক দল এবং আরও চারজন মিলে অ্যাসোসিয়েশন ফর রিসার্চ ইন অটোল্যারিঙ্গোলজির বার্ষিক সভায় গবেষণাটির ফলাফল উপস্থাপনের কথা রয়েছে।