Skip to content

৪৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম সঞ্চয় ভারতীয়দের

    ভারতের জ্বালানি আমদানি ব্যয় ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াতে পারে prothomasha.com

    ভারত একসময় সঞ্চয়কারীদের দেশ হিসেবে পরিচিতি ছিল। এই অঞ্চলের মানুষ আয়ের বড় একটি অংশ ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য জমিয়ে বা আলাদা করে রাখেন; সে জন্য দরকার হলে ভোগব্যয় কাটছাঁট করতে কসুর করেন না তাঁরা। ভারতীয়দের এই রীতিতে পরিবর্তন এসেছে; কিছুটা একটা ঘটেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশটির মানুষের নিট পারিবারিক সঞ্চয় এখন ৪৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

    ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতীয়দের সঞ্চয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অথচ ২০২২ সালেও ভারতীয়দের সঞ্চয়ের হার ছিল জিডিপির ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, সঞ্চয় এভাবে কমে যাওয়া নাটকীয় বিষয়।একই সময়ে ভারতের মানুষের পারিবারিক ঋণ অনেকটা বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ভারতীয়দের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশে উঠেছে—১৯৭০ সালের পর যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ভোগ ব্যয় মেটাতে ভারতীয়রা এখন ক্রমবর্ধমান হারে ঋণের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন। এই বাস্তবতায় তাঁদের সঞ্চয় অনিবার্যভাবে কমছে। তাঁরা যত ঋণ করছেন, তত বেশি অর্থ ঋণ পরিশোধেও ব্যয় করতে হচ্ছে। ফলে সঞ্চয়ের জন্য বিশেষ কিছু থাকছে না।

    মতিলাল অসওয়াল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের অর্থনীতিবিদ নিখিল গুপ্ত বিবিসিকে বলেন, ভারতের ক্রমবর্ধমান পারিবারিক ঋণের বড় একটি অংশ বন্ধকহীন। এই ঋণের অর্ধেকের বেশি ব্যবসায়িক। ২০২২ সালে ভারতের বন্ধকহীন ঋণের পরিমাণ অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের সমপরিমাণ ছিল; যদিও চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ছিল। নিখিল গুপ্ত আরও বলেন, ভোগের জন্য ঋণ করা, যেমন ক্রেডিট কার্ড, দীর্ঘস্থায়ী ভোগ্যপণ্য, বিয়ে, স্বাস্থ্যগত জরুরি অবস্থা—এসব কাজে ভারতীয়রা যত ঋণ নিয়েছেন, তা দেশটির মোট পারিবারিক ঋণের ২০ শতাংশের কম; যদিও এই খাতের প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। বিশ্লেষকেরা বলেন, ভারতীয়রা যে এভাবে কম সঞ্চয় করে বেশি ঋণ নিচ্ছেন বা ব্যয় করছেন, এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় যে ভোক্তাদের মধ্যে একধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। একশ্রেণির ভারতীয়র মনে এই আশা তৈরি হয়েছে যে ভবিষ্যতে তাঁদের আয়রোজগার ভালোই বাড়বে। আবার এমনো হতে পারে, তাঁরা বর্তমান নিয়ে চিন্তিত। ভবিষ্যতে কী হবে না হবে তা নিয়ে অতটা ভাবছেন না।

    অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে ভারতীয়দের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে নিখিল গুপ্ত বলেন, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয় যে ঠিক কী কারণে ভারতীয়দের ঋণ বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, সমস্যা হলো ভারতের মানুষের ঠিক কী কারণে ঋণ করছেন সে বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যান যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ তাঁরা কী ধরনের কাজ করছেন, কত মানুষ ঠিক কী পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন, কোন উদ্দেশ্যে তাঁরা এই অর্থ ব্যবহার করছেন, কীভাবে তাঁরা এই ঋণ পরিশোধ করছেন—এসব তথ্য জরুরি বলে তিনি মত দেন।

    তবে এগুলোর মধ্যে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে মনে করেন নিখিল গুপ্ত। মতিলাল অসওয়ালের আরেক অর্থনীতিবিদ তানিশা লাধিয়া বলেন, বিষয়টি এমন নয় যে ভারতের পরিবারগুলোর ঋণের বোঝা বাড়ছে। বরং বাস্তবতা হলো ভারতের অনেক পরিবার ঋণের জগতে পা রাখতে শুরু করেছেন। এটা ভালো, একজন মানুষের বেশি ঋণ নেওয়ার চেয়ে অনেক মানুষ কম করে ঋণ নিলে সমাজে তার প্রভাব অনুভূত হয়। এদিকে গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় মানুষের সঞ্চয় কমে যাওয়া ও ঋণ করা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানায়। মন্ত্রণালয় বলে, মানুষ মূলত নিম্ন সুদহারের সুবিধা নিচ্ছে—মহামারির পর নিম্ন সুদে বাড়ি, গাড়ি কিনতে ও শিক্ষা বাবদ তাঁরা এই ঋণ নিচ্ছেন।

    অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আরও বলা হয়, এই যে অনেক মানুষ বাড়ি ও গাড়ি কিনছেন তা অর্থনৈতিক চাপের লক্ষণ নয়, বরং ভোক্তাদের আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল বড় অর্থনীতি। সেই সঙ্গে পশ্চিমারা যেভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে, তাতে ভারতের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ফলে ভারতীয়দের মনে আশাবাদ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ভারতীয়দের মধ্যে একধরনের পরিবর্তন আসছে তা একরকম পরিষ্কার।