একজন নারীর মা হওয়ার সক্ষমতা তাঁর বয়স এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীর দেহে ডিম্বাণুর সংখ্যা কমতে থাকে। একই সঙ্গে কমতে থাকে তাঁর মা হওয়ার সম্ভাবনা। মা হওয়ার সঠিক বয়স কোনটা? কত বয়স পর্যন্ত একজন নারী মা হতে পারেন? কোন বয়সে মা হওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ? চলুন জেনে নেওয়া যাক—
বয়ঃসন্ধির শুরুতে একজন কিশোরীর দেহে তিন থেকে পাঁচ লাখ ডিম্বাণু থাকতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিম্বাণুর সংখ্যা কমতে থাকে। একজন নারীর বয়স যখন ৩৭ বছর, সংখ্যাটা কমে তখন ২৫ হাজারে এসে দাঁড়ায়। ৫১ বছর বয়সে পৌঁছতে পৌঁছতে তা নেমে হয় এক হাজার বা তারও কমসংখ্যক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই প্রাকৃতিক উপায়ে (অর্থাৎ কোনো ধরনের চিকিৎসাপ্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া) মা হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে। ৩০ বছর বয়স হওয়ার আগে একজন নারীর প্রাকৃতিক উপায়ে মা হওয়ার সম্ভাবনা যেখানে থাকে ৮৫ শতাংশ, ৩০ বছর বয়সেই তা নেমে আসে ৭৫ শতাংশে। ৩৫ বছর বয়সে পৌঁছে মা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৬৬ শতাংশ, ৪০ বছর বয়সে মাত্র ৪৪ শতাংশ। বেশি বয়সে গর্ভধারণ করতে চাইলে অনেক সময় তা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই চিকিৎসাপ্রযুক্তির সহায়তা নিতে হয়। তবে বয়স যত বাড়ে, প্রযুক্তি সফল হওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু ততই কমে। তাই ৭০ বছর বয়স পেরোনোর পর মা হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বিরল।
৩৫ বছরের পর মা হওয়ার অর্থ হলো আপনি এমনিতেই ‘একটু বেশি বয়সী’ মা হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণদের তালিকায় ঢুকে যাচ্ছেন। তাই এই বয়সে মা হওয়ার ভালো সম্ভাবনা থাকলেও ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় রাখুন। এই বয়সী মায়েদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এমনকি প্রসবের কাছাকাছি সময়ে গিয়েও গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হতে পারে। তা ছাড়া বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে সন্তানের জিনগত সমস্যার ঝুঁকিও বেশি থাকে। বেশি বয়সে মা হলে মায়ের নিজেরও কিছু শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে, যেমন গর্ভকালীন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রি-এক্লাম্পসিয়া। আবার মায়ের নানাবিধ জটিলতার কারণে অপরিণত অবস্থায় গর্ভের সন্তানের জন্ম হতে পারে।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মাতৃত্বের সম্ভাবনা যেমন কমে, তেমনি আবার বেশি বয়সে সন্তান গর্ভে এলে মা এবং সন্তানের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। তবে আপনি যে বয়সেই মা হতে চান না কেন, চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকুন। মাতৃত্বজনিত জটিলতা যেকোনো বয়সেই হতে পারে। তাই সব বয়সী অন্তঃসত্ত্বা নারীরই বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। আর মা হওয়ার পরিকল্পনা করলে তার তিন মাস আগে থেকেই ফলিক অ্যাসিড গ্রহণ শুরু করা আবশ্যক।