কলেজটিতে ১২ জন শিক্ষক ও চার জন কর্মচারী আছেন।আছে দ্বিতল ভবনও। এলাকায় বেশ নামডাক ও পরিচিতি রয়েছে কলেজটির। তবে শিক্ষার্থী মাত্র একজন। এই একজনই চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। গত মঙ্গলবার ফলাফল ঘোষণা করলে দেখা যায় সেই কলেজের একজন ছাত্রী তবুও পাস করতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা পৌরসভার মুণ্ডুমালা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজে। ২০০২ সালে স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানটির শুরুতে বেশ নামডাক ছিল। লেখাপড়ার মানও ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান তলানিতে ঠেকেছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ায় কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি চলছে ‘ভারপ্রাপ্ত’ দিয়ে। কলেজে ঠিকমতো আসেন না শিক্ষকরাও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘এলাকায় নামডাক থাকায় চলতি বছর কলেজটিতে আমার মেয়েকে ভর্তি করালাম। কিন্তু এমন রেজাল্ট দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। কোনো উপায় থাকলে মেয়েকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবো।’এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ ২২ বছর ধরে বেতন ভাতা পান না শিক্ষকরা। তাই ১২ জন শিক্ষকের মধ্যে গড়ে ৪ থেকে ৫ জন নিয়মিত অফিস করেন। বাকিরা অন্য জায়গায় চলে গেছেন। মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারের (এমপিও) জন্য অপেক্ষা করে করে আমরা ক্লান্ত। নিয়মিত শিক্ষক না আসায় অভিভাবকরা শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে চান না। চলতি বছর মানবিক বিভাগ থেকে একজন পরীক্ষা দিয়েছিল। কী কারণে পাস করতে পারেনি সেটা বুঝতে পারছি না। তবে এ বছর কলেজে ১১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।’
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘মুণ্ডুমালা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাত্র একজন পরীক্ষার্থী ছিল, তবু ফেল করেছে। বিষয়টি দুঃখজনক। আমি নতুন যোগদান করেছি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দেখতে বলবো।’জানা গেছে, মুণ্ডুমালা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ এইচএসসি পরীক্ষায় রাজশাহী বিভাগের ১২টি কলেজের কেউ পাস করেনি। এই ১২ কলেজে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৪৬ জন। তাদের সবাই ফেল করেছেন।
শতভাগ ফেল করা কলেজগুলো হলো- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের চকঝগড়ু হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, শফিউর রহমান আইডিয়াল কলেজ, বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিজবলাইল ইংলিশ কলেজ, গাবতলীর বাগবাড়ি মহিলা কলেজ, নাটোরের গুরুদাসপুরের দুর্গাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নাটোর সদরের বেগম খালেদা জিয়া কলেজ, নাটোরের নলডাঙ্গার সারকুতিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাগাতিপাড়ার তমালতলা মহিলা কলেজ, নওগাঁর মান্দার চককামদেব আদর্শ কলেজ, সিরাজগঞ্জ সদরের ছঙ্গাছা মহিলা কলেজ ও ছতলানতলি মোরগ্রাম টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৬ জন শিক্ষার্থী ছিল বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিজবলাইল ইংলিশ কলেজে। সাত জন শিক্ষার্থী ছিলেন বাগবাড়ি মহিলা কলেজে। অন্য কলেজগুলোর মধ্যে একটিতে ছয় জন, একটিতে চার জন, পাঁচটিতে দুজন করে এবং তিনটি কলেজে একজন করে পরীক্ষার্থী ছিলেন।
শতভাগ ফেল করা এসব কলেজের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এদের বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। শুধু তালিকাটা আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে পাঠাতে পারি। তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।’উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ফলাফলে রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন। এ বছর বিভাগের আট জেলার ৭৪১টি কলেজের পরীক্ষার্থীরা ২০৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসেন। এবার রাজশাহী বোর্ডের ৩৫টি কলেজের শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।