এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হলেন গুগলের সুন্দর পিচাই। ১৯৭২ সালের ১০ জুন তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাইয়ে জন্ম সুন্দর পিচাইয়ের। ২ দিন আগে ৫২ বছর বয়সে পা দিয়েছেন। বাবা ছিলেন একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। মা স্টেনোগ্রাফার। চেন্নাইয়ে দুই কক্ষের একটি অ্যাপার্টমেন্টে বড় হয়েছেন। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ঘুমাতেন মেঝেতে।আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার জন্য ছিল না বিমান টিকিটের টাকা। বাবার প্রায় এক বছরের বেতনের টাকায় কেনা হয় ছেলের যুক্তরাষ্ট্রের বিমানের টিকিট।
সুন্দর পিচাইয়ের গুগলের সিইও হওয়ার জার্নিটা সহজ ছিল না। আজকের অবস্থানে আসতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। নিজেই জানিয়েছেন, তাঁর বাবার এক বছরের বেতনের অর্থেই যুক্তরাষ্ট্রগামী বিমানের টিকিট কাটা হয়েছিলেন। তিনি আমেরিকার স্ট্যানফোর্ডে যেন পড়াশোনা করতে পারেন, সে জন্য ফ্লাইটের টিকিট কাটা হয়। সেই সুন্দর পিচাইয়ের এখন মোট সম্পদের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ হাজার ৩৪২ কোটি রুপি।
বিসনেজ টুডের খবরে বলা হয়েছে, ইউটিউবে ডিয়ার ক্লাস অব টোয়েন্টি টোয়েন্টিতে নিজের জীবনসহ নানা ইস্যুতে কথা বলেছেন সুন্দর পিচাই। জীবনে সফলতার মূলমন্ত্র জানিয়েছেন। জীবনে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করেছিল প্রযুক্তির প্রতি তাঁর আবেগ এবং একটি মুক্ত মন। তিনি সেখানে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘উন্মুক্ত হোন, ধৈর্যশীল হোন, আশাবাদী হোন।’ তাঁর দাবি, ‘যদি কেউ এটি করতে পারেন, তবে ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে, আপনি যা হারিয়েছেন তার জন্য নয়, আপনি যা পরিবর্তন করেছেন, তার জন্য মনে রাখবে। আমি আশাবাদী, আপনারা তা হবেন।’
অ্যালফাবেটের সিইও সুন্দর পিচাই বলেছেন, ‘আমি প্রযুক্তির খুব বেশি অ্যাক্সেস ছাড়াই বড় হয়েছি। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত আমাদের কোনো টেলিফোন ছিল না। গ্র্যাজুয়েশনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে না আসা পর্যন্ত আমার কম্পিউটারেও নিয়মিত অ্যাক্সেস ছিল না। টেলিভিশন যখন বাসায় এল তখন শুধু একটিই চ্যানেল ছিল।’
পিচাইয়ের শিক্ষাজীবন
সুন্দর পিচাই আইআইটি খড়গপুর থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেন। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস পদার্থবিজ্ঞান এবং প্রকৌশল ইঞ্জিনিয়ারিং করার পর ২০ বছরেরও বেশি গুগল কাজ করেছেন। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুল থেকে এমবিএ করেছিলেন।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল সুন্দর পিচাই প্রথম গুগলপ্লেক্সে সাক্ষাৎকার দেন। একই দিনে কোম্পানিটি বিনামূল্যের ই–মেল পরিষেবা জিমেইল (Gmail) চালু করে। কোম্পানিটিতে শুরুর দিকে Google’s Toolbar-এ প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করতেন তিনি। পিচাইয়ের সবচেয়ে বড় সাফল্য গুগল ক্রোম। গুগলের নিজস্ব এই ব্রাউজার তৈরি কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।
কোম্পানির সঙ্গে তাঁর কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি গুগলের সহপ্রতিষ্ঠাতা সের্গেই ব্রিন এবং ল্যারি পেজের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন এবং তাঁদের বোঝাতে সক্ষম হন যে গুগলের একটি নিজস্ব ব্রাউজারের প্রয়োজন আছে।
ক্রোম ওএস তৈরির পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন সুন্দর পিচাই। এই সার্চ ইঞ্জিনটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনগুলোর একটি। এ ছাড়াও গুগল প্লাস, ম্যাপস, সার্চ, কমার্স অ্যান্ড অ্যাডভার্টাইজিং ছাড়াও কোম্পানিটির নানা পরিষেবা গড়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন পিচাই। পরে ২০১৫ সালের আগস্টে সুন্দর পিচাইকে গুগলের সিইও হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। অক্টোবরে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০১৭ সালে তিনি গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেটের বোর্ড অব ডিরেক্টরসে যোগ দেন। ২০১৯ সালে অ্যালফাবেটের সিইও হিসেবে নিযুক্ত হন এই ভারতীয়কে।