কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের ‘কোথায় আলো’ কবিতার শুরুতেই গেয়েছেন, ‘কোথায় আলো, কোথায় ওরে আলো। বিরহানলে জ্বালো রে তারে জ্বালো।’ মানুষের কারণে নয়, এবার শক্তিশালী সৌরঝড়ের ফলে উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে উত্তর মেরুতে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের আকাশ। আজ রোববার পর্যন্ত রাতের আকাশে সৌরঝড়ের এই উজ্জ্বল আলো দেখা যাবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সৌরঝড়ের কারণে তৈরি হওয়া প্রাকৃতিক এই আলোকচ্ছটায় সবাই মুগ্ধ হলেও বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক পাওয়ার গ্রিড, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও সংযোগ ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের কার্যক্রমে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএস ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
সৌরঝড়ের কারণে স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পরিচালনায় কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্পেসএক্সের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংক। স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক এ বিষয়ে খুদে ব্লগ লেখার সাইট এক্সে (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, ‘অনেক চাপ তৈরি হয়েছে, যদিও এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা দেওয়া যাচ্ছে।’ সৌরঝড়ের কারণে বিভিন্ন দেশের আকাশে যে উজ্জ্বল বেগুনি, সবুজ, হলুদ ও গোলাপি রঙের আলো দেখা যাচ্ছে, তাকে বলা হচ্ছে নর্দার্ন লাইট বা উত্তরের আলো। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, চীন, ইংল্যান্ড, স্পেনসহ নানা দেশে দেখা যাওয়া এই আলো বিজ্ঞানীদের কাছে ‘অরোরা বোরিয়ালিস’ নামে পরিচিত। ১৬১৯ সালে এই শব্দের নামকরণ করেন বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই। তিনি রোমান ভোরের ঈশ্বর অরোরার নামে নামকরণ করেন।
সৌরঝড়ের কারণে স্বাভাবিক যে আলোকচ্ছটা তৈরি হয়, তার চেয়ে এবারের আলোক মাত্রা অনেক বেশি। এর আগে ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র সৌরঝড়ের ঘটনা ঘটে ১৮৫৯ সালে। নাসা জানিয়েছে, গত বুধবার থেকে সূর্য শক্তিশালী সৌরশিখা তৈরি করেছে। এর মধ্যে অন্তত সাতটি প্লাজমা বিস্ফোরণ ঘটেছে। প্রতিটি অগ্ন্যুৎপাতের মতো বিস্ফোরণ করোনাল ম্যাস ইজেকশন হিসেবে পরিচিত। এ ঘটনায় সূর্যের বাইরের বায়ুমণ্ডল, যা করোনা নামে পরিচিত, সেখানে কোটি কোটি টন প্লাজমা ও শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র তৈরি হয়। সৌরঝড়ের কারণে সৃষ্ট অগ্নিশিখার জন্য পৃথিবীর ব্যাসের ১৬ গুণ বেশি সানস্পট বা সূর্যদাগের যুক্ত বলে মনে করা হয়। সূর্য যখন তার ১১ বছরের চক্রের শীর্ষে পৌঁছায় তখন সৌরঝড় দেখা যায়।