Skip to content

সম্পদের সাগর, ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি টাকা তুলেছেন, বিক্রি সাততলা বাড়িও

    সম্পদের সাগর, ব্যাংক থেকে ১৩ কোটি টাকা তুলেছেন, বিক্রি সাততলা বাড়িও prothomasha.com

    দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান শুরুর দুই সপ্তাহ পর সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ সপরিবারে গোপনে দেশত্যাগ করেন। দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে জব্দের আগপর্যন্ত সময়ে দুদকের তালিকাভুক্ত কয়েকটি ব্যাংক থেকে প্রায় ১৩ কোটি টাকা তুলে নেন তিনি। এ ছাড়া তিনি ভাটারা এলাকার একটি সাততলা বাড়ি বিক্রিও করেন। গতকাল রবিবার সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।

    এদিকে দুদকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানকে নোটিস দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ মে পাঠানো নোটিসে বেনজীর আহমেদকে ৬ জুন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানকে ৯ জুন দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে তারা হাজির না হলে কমিশনের অনুমোদন নিয়ে দ্রুত সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিস জারি করা হবে।

    দুদকের তথ্যমতে, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় গত ১৮ এপ্রিল। অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে তার ব্যাংকের হিসাবের লেনদেনের তথ্য চেয়ে গত ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা ইউনিটে চিঠি দেওয়া হয়। পরদিন ২৫ এপ্রিল স্থাবর ও অবস্থাবর সম্পদের তথ্য চেয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), সিটি করপোরেশন, ভূমি অফিস, রেজিস্ট্রি অফিস, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়। এরপরই তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের অনেক তথ্য দুদকে পৌঁছেছে।

    এসব তথ্য পাওয়ার পরই দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের ৬২১ বিঘা জমি,   ঢাকার চারটি ফ্ল্যাট এবং ৩৩ ব্যাংক হিসাব গত ২৩ মে ও ২৬ মে   ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কোর্টের দুটি পৃথক আদেশে জব্দ করে। এর মধ্যে গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী, তিন মেয়ে ও এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা জমি এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দেওয়া হয়। আর ২৬ মে বেনজীরের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেয়। একইদিন বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসা করার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র ও সাভারের জমি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়।

    দুদকের একজন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে জব্দের আগপর্যন্ত সময়ে বেনজীর আহমেদ কয়েকটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছেন। দুদকের টিম হিসাব করে দেখেছে টাকার পরিমাণ প্রায় ১৩ কোটি। কোনো কোনো ব্যাংক থেকে টাকা তোলা হয়েছে তার বিস্তারিত বলা যাবে না। এটা প্রাথমিক হিসাব। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তার ব্যাংকিং লেনদেনের পুরো তথ্য পাওয়া যায়নি। পুরো তথ্য পেলে কী পরিমাণ অর্থ তুলেছেন তা জানা যাবে। বেনজীর আহমেদ ব্যাংক থেকে যে পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন, সেগুলো কোথায় রেখেছেন, অবৈধপন্থায় বিদেশে পাচার করেছেন কি না, তাকে অর্থ পাচারে কারা সহযোগিতা করেছেন তাদের খুঁজে বের করবে দুদক।

    তিনি আরও জানান, বেনজীর আহমেদ ভাটারা এলাকার একটি সাততলা বাড়ি বিক্রি করেছেন বলে দুদকের কাছে তথ্য এসেছে। বাড়িটি এত তাড়াতাড়ি বিক্রি করা সম্ভাবনা কম। তাছাড়া বাড়িটি করতে একটি ব্যাংক থেকে লোনও নেওয়া হয়েছে। বাড়িটি অন্য সম্পদের সঙ্গে জব্দ হয়ে যেতে পারে এমন ধারণা থেকে বাড়িটি নামমাত্র মূল্যে অন্য কারও নামে হস্তান্তর করা হয়ে থাকতে পারে। আমাদের টিম অনুসন্ধান করে দেখবে বাড়িটি সঠিক মূল্যে বিক্রি হয়েছে কি না, যিনি বাড়িটি কিনেছেন তিনি কীভাবে টাকা পরিশোধ করেছেন, বাড়ি ক্রয়ের অর্থের উৎস বৈধ কি না, বাড়ি বিক্রির টাকার কোথা থেকে পরিশোধ এবং গন্তব্যের শেষ কোথায়। এসব বিষয় অনুসন্ধান করতে গেলে যাদের সম্পৃক্ততা আছে তাদের বিষয়টি সামনে আসবে এবং দুদক বেনজীর চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করতে পারে। পরবর্তীকালে তাদের দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামতে পারে সংস্থাটি।দুদকের তথ্যমতে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন একটি প্রকাশিত হয়। এরপর কমিশন গত ১৮ এপ্রিল বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। অভিযোগ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।