স্বামী সব সময় সন্দেহ করত, স্ত্রী শান্তনা অন্য কারও সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছে। এ সন্দেহের জেরে গৃহবধূ শান্তনা বেগমকে (২৮) হত্যার পর লাশ চার টুকরা করে গুমের চেষ্টা করেছিল তাঁর স্বামী নয়ন মিয়া। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত সোমবার রাতে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া মহল্লার সেতু নার্সারি থেকে শান্তনার খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে মস্তকহীন ও দুই হাতের কবজি কাটা অবস্থায় শান্তনার বিবস্ত্র দেহ পাওয়া যায়। পরে প্রায় ১৫০ গজ দূরে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় লাশের দুই হাত ও মাথা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল সকালে মোবাইল ট্র্যাক করে নয়নকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিনুর কবির। তিনি বলেন, অনৈতিক সম্পর্কে সন্দেহের জের থেকেই এ নির্মম হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় নিহতের বোন পারুল বেগম মামলা করেছেন। নয়নকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে সে এখনও স্বীকারোক্তি দেয়নি।
পুলিশ জানায়, শান্তনার আগেও একটি বিয়ে হয়েছিল। তাঁর প্রথম স্বামী জহুরুলের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। তাদের প্রতিবেশী ছিল নয়ন। সাত মাস আগে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শান্তনা। নয়ন তাঁকে ফুসলিয়ে সাভারের বিরুলিয়ার দত্তপাড়ায় সোহেলের বাড়িতে নিয়ে আসে। সেখানে তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। জহুরুলের ঘরে শান্তনার ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। এ ছাড়া ঘাতক নয়নেরও আগের স্ত্রী এবং তিন সন্তান আছে। পেশায় রাজমিস্ত্রি নয়ন টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার মর্শামোড়া গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে।
এএসপি শাহিনুর কবির বলেন, বিরুলিয়ায় বসবাসের শুরু থেকেই শান্তনা এবং নয়নের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগে থাকত। নয়ন সব সময় শান্তনাকে সন্দেহ করত যে, তার স্ত্রী বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত। শান্তনা তিন দিন আগে তাঁর মাকে ফোন করে জানান, নয়ন সব সময় তাঁকে সন্দেহ এবং মারধর করে। তোমরা এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলো না, তাহলে সে আমাকে মেরে ফেলতে পারে। কিন্তু মাকে ফোন করার বিষয়টি নয়ন জানতে পেরে শান্তনাকে মারধর করে। এ সময় শান্তনা রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে নয়নও তাঁর পেছনে পেছনে যায়। তারা দত্তপাড়া এলাকার সেতু নার্সারির পাশ দিয়ে ঘোরাফেরা করে। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়েছি, নয়নই শান্তনাকে হত্যা করেছে। হত্যার আলামত হিসেবে একটি দা উদ্ধার করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর মাথাটি দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তিকে কেউ যাতে না চিনতে পারে, এ জন্য তাঁর জামাকাপড় সব খুলে ফেলা হয়েছে। মাথা ও হাতের দুই কনুই কেটে আলাদা করা হয়েছে, যাতে লাশ শনাক্ত করা না যায়।
সাভার মডেল থানার ওসি জুয়েল মিঞা জানান, আজ বুধবার ঘাতক নয়নকে আদালতে পাঠানো হবে।
এদিকে গৃহবধূ শান্তনা বেগমের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
আন্নি ও তার প্রেমিক মিলে খুন করে সুমনকে
শেরপুরে নিখোঁজের ৮ দিন পর কলেজছাত্র সুমন মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত সোমবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ সুপার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাংবাদিক ও নিহতের স্বজনের উপস্থিতিতে পৌর শহরের সজবরখিলা মহল্লার ফুরকান মিয়ার বাড়ির সবজি ক্ষেতে পুঁতে রাখা লাশটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই সুরতহাল করে মরদেহ পাঠানো হয় জেলা হাসপাতাল মর্গে।
গত ৪ নভেম্বর রাতে শেরপুর পৌর শহরের কসবা বারাকপাড়া নিমতলা মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে শেরপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সুমন নিখোঁজ হয়। ওই রাতেই ছেলের খোঁজে সুমনের বাবা সদর থানায় জিডি করেন। এক পর্যায়ে গত রোববার শেরপুরের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সুমনের বাবা নজরুল। আন্নি শেরপুর শহরের বাগরাকসা কাজিবাড়ি পুকুরপাড়ের বাসিন্দা শিক্ষক মো. আজিমউদ্দিনের মেয়ে।
নিহতের অন্য সহপাঠীরা জানায়, সুমনের সঙ্গে একসময় আন্নির প্রেমের সম্পর্ক ছিল। অনেক দিন আগে আন্নির সঙ্গে সুমন সম্পর্ক ছিন্ন করে। এক পর্যায়ে আন্নি ক্ষোভে রবিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় এবং সুমনকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী, ৪ নভেম্বর রাতে সুমনকে ফোন করে আন্নি জরুরি কাজের কথা বলে শেরপুর সরকারি কলেজের সামনে আসতে বলে। সুমন সেখানে এলে তাকে আন্নি, রবিনসহ আরও কয়েকজন মিলে মারধর করে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায়। এর পর থেকে সুমনের আর হদিস মিলছিল না।
শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম জানান, গত সোমবার রাতে ময়মনসিংহ থেকে রবিনকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার বিষয়টি পরিষ্কার হয়। রবিন স্বীকার করেছে, আন্নির পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুমনকে শ্বাসরোধে হত্যা করে উঠানে সবজি ক্ষেতে মাটিচাপা দিয়েছে।