Skip to content

শ্রমঘন শিল্পে শ্রমিকসংকট, চিন্তায় উদ্যোক্তারা

    শ্রমঘন শিল্পে শ্রমিকসংকট, চিন্তায় উদ্যোক্তারা prothomasha.com

    চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে অবস্থিত বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রথম পোশাক কারখানা হিসেবে উৎপাদন শুরু করেছে খাইশি লিনজেরি বাংলাদেশ লিমিটেড। চীনা মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠান শতভাগ রপ্তানিমুখী। প্রতিষ্ঠানটি এখন পর্যন্ত দক্ষ-অদক্ষ মিলিয়ে ৭০০ শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে সীমিত পরিসরে পণ্য উৎপাদন করছে। তবে কারখানাটির সব কটি ইউনিট চালু হলে মোট ১১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

    একইভাবে বেপজার (বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে কেপিএসটি নামে জুতার কাঁচামাল তৈরির একটি কারখানাও উৎপাদন শুরু করেছে। এটিও চীনা মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ৮ মিলিয়ন বা ৮০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগে বছরে ৩০ মিলিয়ন বা তিন কোটি জোড়া জুতার কাঁচামাল তৈরি করা। কিন্তু তারা এখনো নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী নারী শ্রমিক না পেয়ে চিন্তিত বলে জানা গেছে।

    কেপিএসটির মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর ইসলাম  বলেন, ‘আমাদের কারখানায় এখন স্বল্প পরিসরে উৎপাদন হচ্ছে। কারখানা চালাতে পুরুষ শ্রমিক পাওয়া গেলেও নারী শ্রমিক পেতে কষ্ট হচ্ছে।’ এই শিল্পনগরে শ্রমঘন শিল্পে বিনিয়োগ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা, কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবাসন ও গণপরিবহন-সংকটের কারণে ঠিকমতো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না, যা তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর এলাকায় আবাসন ও গণপরিবহন-সংকটের কারণে এখানে চট্টগ্রাম শহরসহ দূরের শ্রমিকেরা কাজ নিতে চাইছেন না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো দক্ষ শ্রমিকের সংকটে পড়েছে।

    মিরসরাইয়ে ৩৩ হাজার ৮০৫ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে এরই মধ্যে উৎপাদনে গেছে সাতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের ৩টি। সেখানে বিশেষ করে শ্রমঘন প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকসংকটে পড়েছে। জানতে চাইলে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের খাইশি লিনজেরি বাংলাদেশ লিমিটেডের মানবসম্পদ কর্মকর্তা মো. জামান উল্ল্যাহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা হিসেবে আমরাই প্রথম উৎপাদনে গিয়েছি। এই কারখানায় আমরা দক্ষ-অদক্ষ মিলে ৭ হাজার শ্রমিক নিয়োগ দেব। তবে কারখানার সব কটি ইউনিট চালু হলে ১১ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তবে আবাসন ও গণপরিবহন-সংকটের কারণে এখানে শ্রমিক পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এলাকায় মাইকিংসহ নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।’

    খাইশি লিনজেরি বাংলাদেশের পরিচালক শিয়াও হং শি বলেন, ‘রপ্তানিমুখী পোশাক তৈরির বিভিন্ন খাতে আমরা ১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করব। এরই মধ্যে আমাদের নারীদের পোশাক তৈরির একটি ইউনিট উৎপাদনে এসেছে। তবে এখানে শ্রমিকসংকট চিন্তায় ফেলেছে আমাদের। শ্রমিকসংকট নিরসনে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বেপজার সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তারা সহযোগিতার মনোভাব দেখিয়েছে। আশা করি, এ সংকট কাটিয়ে দ্রুতই পুরোদমে উৎপাদনে যাব আমরা।’

    এ নিয়ে  সঙ্গে কথা বলেন মিরসরাই বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ এনামুল হক। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ও বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে পোশাকসহ বেশ কিছু কারখানা উৎপাদনে গেছে। এর মধ্যে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করা দু-একটি প্রতিষ্ঠান শ্রমিক-সংকটের বিষয়টি আমাদের জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে শ্রমিক আবাসন সমস্যা নিরসন ও পরিবহন চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বিআরটিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, দ্রুতই এই সংকটের সমাধান হবে।’

    বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (বেপজা) ১ হাজার ১৩৮ একর জায়গার ওপর ৫৩৯টি শিল্প প্লটের আলাদা একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। সেখানে ইতিমধ্যে জুতার কাঁচামাল, পোশাক ও ফোম তৈরির তিনটি কারখানা উৎপাদনে গেছে। শিল্পকারখানা করতে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ নিয়েছে ১৫০টি প্লট।