বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়ে এসেছেন বরেণ্য নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। কথা বলেছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে, চেয়েছেন বিচারও। এর আগেও, সরকারের নানা অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে দেখা গেছে এই নির্মাতাকে। সরকার পতনের পর ভেঙে পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও। দেশ জুড়ে তৈরি হয় বিশৃঙ্খলা। সেসময়ও সবাইকে এক হয়ে তা প্রতিহত করার আহ্বান জানান ফারুকী।
তারই ধারাবাহিকতায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এবার কথা বললেন বিগত সরকারের আমলে গুম, খুন, গণহত্যাসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে। বিচারের দাবি জানিয়ে গতকাল সোমবার এক ফেসবুক পোস্টে এই নির্মাতা লিখেছেন, ‘একবার ভাবেন মাসের পর মাস একটা মানুষকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। কেউ জানে না সেটা। একদিন সকালে উঠে দানবদের সর্দারের মনে হল, মেজাজটা ভালো না। যাই বন্দীদের মধ্যে একটাকে ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলি। তারপর মেরে শীতলক্ষ্যায় লাশটা ফেলে দিল। ঘরে ফিরে যে যুবকের সন্তানকে ভাত মেখে খাওয়ানোর কথা, সে হয়ে গেল মাছেদের খাবার। শীতলক্ষ্যার শান্ত জলে কান পাতলে আজীবন শোনা যাবে সেই হতভাগ্য পিতার কান্না। এটা আমার বাল্যবন্ধু সাজেদুল ইসলাম সুমনের গল্প। এ রকম অজস্র সুমনের গল্পই এক। আমরা সবাই ছিলাম একেকজন সুমন।’
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা, আপনি আপনার হাত থেকে এই নিষ্ঠুরতার দাগ মুছতে পারবেন না। অমানুষ জিয়াউল, তোমার হাত থেকে এই দাগ মুছবে কীভাবে? এ রকম শত শত মানুষের গল্প আছে, একই রকম বেদনার। দিনের পর দিন এই রকম ঠান্ডা মাথায় খুন, অত্যাচার কোনো সুস্থ লোকের পক্ষে সম্ভব না। দিজ আর সাইকোপ্যাথস। সুতরাং, অনেক কিছুর ভিড়ে আমরা যেন ভুলে না যাই আলাপের আসল প্রসঙ্গটা। অ্যাটেনশন ঘুরিয়ে দেওয়া, যখন যে কনভারসেশন হওয়ার কথা সেটা না হয়ে অন্য কনভারসেশন চালু করে দেওয়া, এটা আধুনিককালে ফ্যাসিস্টদের অনেক টেকনিকের একটা।’
শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আসল প্রসঙ্গটা হল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। কেন হয়েছে? একটা ফ্যাসিস্ট শক্তি ১৫ বছর মানুষ মেরেছে, গুম করেছে, যাকে গুম করেছে তার বাসায় গিয়ে তার মেয়েকে জড়িয়ে মায়াকান্না করেছে, মানুষজনকে উঠতে-বসতে তাচ্ছিল্য করেছে, আয়নাঘর বানিয়েছে, কথা বললেই পিটিয়েছে, ভোটের নামে মশকরা করেছে, ব্যাংক লুটপাট করতে দিয়েছে, শেষ ৭ দিনে ৪০০ মানুষ খুন করেছে, আরও খুন করার জন্য সেনা-পুলিশদের চাপ দিয়েছে, শেষে সারাদেশের মানুষের ঘৃণা সঙ্গে নিয়ে দেশ ছেড়ে গেছে।’
সবশেষে ফারুকী লিখেছেন, ‘গণহত্যা এবং সব প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য একটা বিশেষ আদালত তৈরি করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে এটা যেন প্রভাবমুক্ত ন্যায় বিচার হয়। তাতে যার যা অপরাধ, সে ওই পরিমাণ সাজা পাবে। আর যে অপরাধী না, সে খালাস পাবে। এর মধ্যদিয়েই বাংলাদেশ পাপমুক্ত হবে। ৭১-এর যুদ্ধাপরাধিদের বিচার আমরা করেছি। আর নাকের ডগায় ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হবে না? এই বিচার করতে হবে, যাতে আর কেউ ক্ষমতায় গিয়ে ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার সাহস না করে, সে যে দলেরই হোক। রিফর্মের শুরু হবে এখান থেকেই।’