রিজিক মহান আল্লাহর অন্যতম নেয়ামত। গুনাহের কারণে আল্লাহ তাআলা বান্দার রিজিক কমিয়ে দেন। রিজিকে বরকত আসার জন্য মুমিনের তাকওয়া অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে রিজিকে সংকীর্ণতা নেমে আসবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আর যদি জনপদগুলোর অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও জমিন থেকে বরকতগুলো তাদের ওপর খুলে দিতাম; কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত, তার কারণে আমি তাদের পাকড়াও করলাম।’ (সুরা আরাফ: ৯৬)
গুনাহে লেগে থাকলে রিজিক কমে
গুনাহের কারণে মুমিন বান্দাকে অনেক সময় দুনিয়ায় শাস্তি ভোগ করতে হয়, যার ফলে তার ওপর বড় বিপদাপদ, অভাব-অনটন, অসুস্থতা ইত্যাদি চেপে বসতে পারে। প্রিয়নবী (স.)-এর হাদিসে এ ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। হজরত সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ: ৪০২২)
প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে যারা আল্লাহর ওপর ঈমান আনেনি তাদের এত সম্পদ কোথা থেকে এলো? এর প্রথম জবাব হলো- রিজিকে বরকত আসার উদ্দেশ্য শুধু টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া নয়; রিজিকের বরকত কখনো উভয় জাহানের হতে পারে। যেমন মুমিনরা দুনিয়ার পাশাপাশি পরকালীন সওয়াব পাবেন। আর পরকালীন প্রতিদান দুনিয়ার তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু যারা আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে না, তারা তাদের ভালো কাজের প্রতিদান এবং পাপ না করার ফল দুনিয়ায়ই পেয়ে যায়। তারা দুনিয়ায় যা অর্জন করছে তা মুমিনের পরকালীন প্রতিদানের তুলনায় কিছুই নয়।
আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীনতা রিজিক কমায়
মুমিন যখন আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল বা উদাসীন হন, তখনও রিজিকের বরকত উঠিয়ে নেওয়া হয়। উদাসীনতার ফলে একের পর এক অহেতুক বাসনা সৃষ্টি হয়, ফলে গুনাহ বেড়ে যায় এবং তা বরকত উঠে যাওয়ার কারণ হয়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদের আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন না করে। আর যারা এরূপ করে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুনাফিকুন: ৯)তাই সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের মোহে পড়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। বরং আল্লাহর দেখানো পথেই চলতে হবে।
সুদ
রিজিক কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো সুদ। সুদখোর সর্বাবস্থায় আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় থাকে। রাসুল (স.) সুদখোর, সুদদাতা ও সুদের সাক্ষী ও দলিল লেখককে অভিশাপ দিয়েছেন। এবং বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী। নবীজি (স.) বিদায় হজের ভাষণে সব ধরনের সুদকে নিষিদ্ধ করেছেন। মহান আল্লাহ মুমিনদের সুদ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের যে সুদ বাকি আছে তা ছেড়ে দাও, যদি তোমরা ঈমানদার হও। যদি তোমরা এমন না করো তাহলে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হও।’ (সুরা বাকারা: ২৭৮-২৭৯) আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ সুদকে হ্রাস করেন এবং সদকাকে বর্ধিত করেন। (সুরা বাকারা: ২৭৬)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা বলেন, সুদ সম্পদের বরকত নষ্ট করে দেয়। রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘যাদের মাঝে ব্যভিচার ও সুদ বিস্তার লাভ করলো, তারা নিজেদের উপর আল্লাহর আজাব নামিয়ে নিলো।’ (মুসনাদে আহমদ: ৩৮০৯; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৪৯৮১)
অকৃতজ্ঞতা
রিজিক কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো অকৃতজ্ঞতা। আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া না করা। আল্লাহ অকৃতজ্ঞদের পছন্দ করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি বড়ই কঠোর’ (সুরা ইবরাহিম: ৭)। আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া যেমন ইবাদতের মাধ্যমে করা হয়, তেমনি তাঁর দেওয়া নিয়ামতকে তাঁর দেওয়া বিধান মোতাবেক পরিচালনার মাধ্যমেও করা যেতে পারে। আল্লাহর নিয়ামত শুধু টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়িই নয়, বরং মানুষ নিজেই আল্লাহর নিয়ামত। দুনিয়ার বুকে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর নেয়ামত। হাজারটা জীবনের তাঁর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা সম্ভব নয়। তবে আমাদের ব্যক্তিজীবন সাজানোর মাধ্যমে সর্বদা আল্লাহর দরবারে নত হয়ে থাকা উচিত।
জাকাত না দেওয়া
জাকাত না দিলেও রিজিক কমে যায়। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, একবার মহানবী (স.) আমাদের কাছে এলেন। অতঃপর বললেন, যারা নিজের ধন-সম্পদের জাকাত বন্ধ করে দেবে, তাদের জন্য আসমান থেকে বৃষ্টি বন্ধ রাখা হবে। এমনকি চতুষ্পদ জন্তু না থাকলে আদৌ বৃষ্টি হবে না।’ (হিলইয়াতুল আওলিয়া: ৩/৩২০; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)।
ব্যভিচার
রিজিক কমে যাওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো- অশ্লীলতা ও ব্যভিচার। ব্যভিচারের কারণে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে জাতির মাঝে ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে, তাদের দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে পাকড়াও করা হয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৭৮১২; মেশকাত: ৩৫৮২)আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুনাহমুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। তাঁর শোকরগুজার এবং কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়ার তাওফিক দান করুন। মুমিনের দুনিয়া-আখেরাতের জীবন বরকতময় ও নেয়ামতপূর্ণ করুন। আমিন।