পেনশন কর্মসূচিগুলোর প্রতি জনগণকে আগ্রহী করে তুলতে সারা দেশে সর্বজনীন পেনশন মেলা আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রথম দফায় মেলা হবে বিভাগীয় পর্যায়ে। সে অনুযায়ী আগামীকাল শুক্রবার প্রথম মেলা বসছে রাজশাহী বিভাগে। মেলা হবে রাজশাহীর হাজি মুহাম্মদ মুহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে এ মেলার উদ্বোধন করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান কবিরুল ইজদানী খান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা গতকাল বুধবার বলেন, বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম মেলাটি রাজশাহীতে হচ্ছে। পরে অন্য বিভাগগুলোতেও হবে। তিনি জানান, মেলায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শতাধিক স্টল থাকবে। এ ছাড়া কর্মশালারও আয়োজন থাকছে মেলায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। সেদিন থেকেই তা সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রথম দিন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে ৮ হাজার মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করলেও পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে চাঁদা দিয়েছিলেন মাত্র ১ হাজার ৭০০ জন। চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য চার ধরনের পেনশন স্কিম রয়েছে। এগুলো হলো প্রগতি, সুরক্ষা, সমতা ও প্রবাসী। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘প্রবাসী’ ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য ‘সমতা’।
এদিকে আগামী ১ জুলাইয়ের পর স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা ও তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে যাঁরা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁদের ‘প্রত্যয়’ নামের একটি পেনশন কর্মসূচির আওতায় আসতে হবে। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ১৩ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
পেনশন কর্মসূচি উদ্বোধনের পর প্রথম এক মাসে গ্রাহক হয়েছিলেন ১২ হাজার ৮৮৯ জন। পরের মাসে গ্রাহক হয়েছিলেন ১ হাজার ৮৩১ জন। প্রথম ৩ মাসে ১৫ হাজার ৮৫৪ জন ছিলেন মোট চাঁদা দাতা। এই সংখ্যা পাঁচ মাস পর্যন্ত এক হাজার থেকে দেড় হাজার করে বাড়ছিল। তবে ষষ্ঠ মাস থেকে চাঁদাদাতার প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে।
পেনশন কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত আট মাসে চার ধরনের পেনশন কর্মসূচিতে গ্রাহক হয়েছেন ৫৯ হাজার ৫৭০ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮ হাজার ৭২৯ জন গ্রাহক হয়েছেন সমতা স্কিমে, আর সবচেয়ে কম ৬০২ জন গ্রাহক হন প্রবাস স্কিমে। এ ছাড়া সুরক্ষায় ১৮ হাজার ৫৭০ ও প্রগতিতে ১১ হাজার ৬৬৯ জন গ্রাহক হয়েছেন। সব গ্রাহকের কাছ থেকে চাঁদা জমা পড়েছে ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সবচেয়ে বেশি চাঁদা এসেছে প্রগতি স্কিমে, যার পরিমাণ ২২ কোটি ২৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া সুরক্ষায় ১৫ কোটি ৩২ লাখ, সমতায় ৪ কোটি ২৭ লাখ ও প্রবাসে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা চাঁদা জমা পড়েছে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনগুলো নিজেরাও পেনশন নিয়ে কাজ করছে। কর্তৃপক্ষ তাদের প্রচারাভিযানে খুশি। পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পেনশন কর্মসূচি নিয়ে আমরা শুরু থেকে আশাবাদী ছিলাম। এখন আরও বেশি আশাবাদী। আর তহবিলে টাকা জমা হওয়ার পর বিনিয়োগ করতে দেরি করছি না। এ পর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে ৪০ কোটি টাকার বেশি। ট্রেজারি বন্ডে সর্বশেষ বিনিয়োগের বিপরীতে সুদ পাওয়া যাবে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ।’