জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। বিশ্বকাপের আগে দলের সমন্বয় ঠিক করতে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে বাংলাদেশ।
বার্তাটা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন নাজমুল হোসেন। বাংলাদেশ অধিনায়ক আজ শুরু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজটাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজ বলতে চান না। সিরিজটা আক্ষরিক অর্থেই জেতার জন্য খেলতে চান তাঁরা। তবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে শুধু জয়ই এই সিরিজে যথেষ্ট হবে না বাংলাদেশ দলের জন্য। জয়ের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি দলের কিছু শূন্য স্থানও পূরণ করা দরকার। সে জন্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই পাঁচ ম্যাচ ছাড়াও বিশ্বকাপের আগে যুক্তরাষ্ট্রে আরও তিনটি ম্যাচ পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ ম্যাচগুলোকে বলতে পারেন দলের কিছু ক্রিকেটারের জন্য বিশ্বকাপের ‘অডিশন’।
কে হবেন বিকল্প ওপেনার
দুজনই বাঁহাতি ওপেনার, দুজনই অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে দুজনেরই। দুজনের একজন পারভেজ হোসেন। যিনি জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ১টি, ২০২২ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি। আরেকজন তানজিদ হাসান। টি-টোয়েন্টি অভিষেক না হলেও ১৫টি ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন এরই মধ্যে।
তবে দুই ওপেনারই আছেন দারুণ ছন্দে। পারভেজ ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। চট্টগামের এই ওপেনার ১৩ ম্যাচে ৩টি শতক ও ২টি অর্ধশতকে করেছেন ৬২৩ রান, স্ট্রাইক রেট ৮৯। তানজিদ এবারের বিপিএলের চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ১২ ম্যাচে তাঁর ৩৮৪ রান এসেছে ১২৫ স্ট্রাইক রেটে। ছিল একটি শতক ও দুটি অর্ধশতক।
জিম্বাবুয়ে সিরিজটা তাঁদের দুজনের জন্যই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নেওয়ার পরীক্ষা। লিটন দাসের সঙ্গে তাঁদেরও দেখতে চাইবে টিম ম্যানেজমেন্ট। এদিকে চট্টগ্রামে দলের সঙ্গে থেকে চোট কাটিয়ে সেরা ছন্দে ফেরার চেষ্টা করছেন লিটনের ওপেনিং সঙ্গী হিসেবে টিম ম্যানেজমেন্টের প্রথম পছন্দ সৌম্য সরকার। কাল তিনি ফিল্ডিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিংও করেছেন। সব ঠিক থাকলে জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ দুই ম্যাচে সৌম্যকে দেখা যেতে পারে।
কী আছে আফিফের ভাগ্যে
এক সিরিজে দলে আছেন তো পরের সিরিজে নেই। চন্ডিকা হাথুরুসিংহে প্রধান কোচ হয়ে আসার পর এ রকম অনিশ্চয়তার মধ্যেই আছেন আফিফ। সাকিব আল হাসান থাকায় মিডল অর্ডারে একজন বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য জায়গা বের করতে পারছেন না শ্রীলঙ্কান এই কোচ। গত ডিসেম্বরের নিউজিল্যান্ড সফরে সর্বশেষ খেলেছেন আফিফ। নতুন কেন্দ্রীয় চুক্তিতে তিনি নেই। শ্রীলঙ্কা সিরিজের দল সাজানো হয়েছিল আফিফকে ছাড়াই।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে আবার দলে ফিরেছেন তিনি। সাকিব সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচ খেলছেন না। মিডল অর্ডারে সে জায়গায় আফিফকে দেখা যেতে পারে। তবে সাকিব ফিরলে বিশ্বকাপের সেরা ১৫-তে আফিফের জায়গা হবে কি না, সন্দেহ। সিরিজের প্রথম তিনটি ম্যাচ তাই গুরুত্বপূর্ণ আফিফের জন্য।
পারবেন তো সাইফউদ্দিন?
কাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের নেটে স্ল্যাব বসিয়ে বোলিং মেশিনের সামনে ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দূর থেকে তা দেখছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন ও কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। সাইফউদ্দিনের লেগের দিকে উড়িয়ে মারা এক শট দেখে দূর থেকে নাজমুল যে ভঙ্গি করলেন, তাতে মনে হলো তিনিই ব্যাটিং কোচ। লেগের দিকে না খেলে সোজা খেলার বার্তা দিচ্ছিলেন সাইফউদ্দিনকে। কোচ ও অধিনায়কের মতো সাইফউদ্দিনের পারফরম্যান্সের দিকে তাকিয়ে আছেন নির্বাচকেরাও।
পেস বোলিং অলরাউন্ডারের ভূমিকায় সাইফউদ্দিন ভালো খেলা মানেই দলের ছবিটা বদলে যাওয়া। লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ম্যাচের শুরু ও শেষের দিকের বোলিংয়ে বিকল্প বাড়াবে তাঁর উপস্থিতি। কাল ম্যাচ–পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুলও বলছিলেন, ‘সাইফউদ্দিনের জন্য এটা ভালো সুযোগ। লোয়ার মিডল অর্ডারে তাসকিন, তানজিম সাকিব, রিশাদ, এমনকি শরীফুল—সবাই কিন্তু ব্যাটিং করতে পারে। সমন্বয়ের দিক থেকে আমরা ভালো জায়গায় আছি। সে যদি দলে সুযোগ পায়, তাহলে অবশ্যই দলের জন্য ভালো হবে।’
নাসুম, তাইজুলের পর তানভীরেরও পরীক্ষা
নাসুম আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও তানভীর ইসলামের মধ্যে কে টি-টোয়েন্টির জন্য আদর্শ, সে জট যেন খুলছেই না। গত বছর পর্যন্ত নাসুম ছিলেন বাঁহাতি স্পিনে সাকিবের একমাত্র বিকল্প। পরে সে তালিকায় যোগ দেন তাইজুল।গত ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি ক্যাপ পরিয়ে দেওয়া হয় তানভীরকে। তবে ২ ম্যাচে ১ উইকেট নেওয়া তানভীরকে বাদ দিয়ে শ্রীলঙ্কা সিরিজের দলে ফেরানো হয় তাইজুলকে। তাইজুল অবশ্য কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। আজ শুরু জিম্বাবুয়ে সিরিজে আবার তাইজুলের জায়গায় ফিরেছেন তানভীর। নিজেকে বিশ্বকাপে সাকিবের বিকল্প হিসেবে প্রমাণের জন্য ৩টি ম্যাচ পাচ্ছেন ২৭ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার।