Skip to content

যে কারণে মোদিতে আস্থা নেই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের

    যে কারণে মোদিতে আস্থা নেই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের prothomasha.com

    দুই মেয়াদে গেল দশ বছর ধরে ভারতের ক্ষমতায় থাকা বিজেপি, দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়েই। ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ১৮টিতেই ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এরমধ্যে এককভাবে ক্ষমতায় রয়েছে ১২টিতে। এরমধ্যে ভারতের উত্তরাঞ্চলে একচেটিয়া দাপট গেরুয়া শিবিরের। রয়েছে বিপুল জনসমর্থন। সেখানকার বেশিরভাগ রাজ্যই ক্ষমতাসীনদের দখলে। অন্যদিকে, সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দক্ষিণাঞ্চলে। এ অঞ্চলের কোনো রাজ্যই নেই বিজেপির নিয়ন্ত্রণে। দশ বছর ধরে কেন্দ্রের ক্ষমতায় থাকলেও, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মন জয় করতে যেন পুরোপুরি ব্যর্থ মোদি শিবির। ধারণা করা হচ্ছিল, এবারের লোকসভা নির্বাচনে কিছুটা হলেও আগের চেয়ে ভাল ফল করবে বিজেপি। তবে, এখন পর্যন্ত যে নির্বাচনী ফল নিয়ে যে আভাস, তাতে সে আশায় গুড়েবালি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

    বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের ভোটারদের চাওয়া-পাওয়া উত্তরাঞ্চলের মানুষের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। ভারতের উত্তরাঞ্চল অনেক বেশি গ্রামীণ ও জনবসতিপূর্ণ। অন্যদিকে, অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত দিক দিয়ে তুলনামূলক উন্নত দক্ষিণের মানুষ মনে করে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের অবদানকে কখনোই স্বীকার করেনা মোদি সরকার। দক্ষিণের চেয়ে উত্তরের দরিদ্র অঞ্চলকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে বিজেপি। এমনকি বছরের পর বছর ধরে উন্নয়ন প্রকল্পেও বৈষম্যমূলকভাবে তহবিল বরাদ্দ দিয়ে আসছে ক্ষমতাসীনরা।

    শুধু তাই নয়, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই রাজনীতির মধ্যে ধর্মকে টেনে এনে উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের মানুষের এক ধরনের বিভেদ এবং উত্তেজনা তৈরির চেষ্টাও করতে দেখা গেছে মোদিকে। এতে, দেশ জুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেও, দক্ষিণের রাজ্যগুলোতে আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন মোদি। বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচনে লোকসভায় দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের লক্ষ্য ক্ষমতাসীন বিজেপির। আর এতে সফল হলে, হিন্দুকেন্দ্রিক সংবিধান সংশোধনের যথেষ্ট সুযোগ পাবে দলটি। সেইসঙ্গে, ভারতজুড়ে হিন্দুত্ববাদ প্রতিষ্ঠায়ও গেরুয়া শিবির সফল হবে বলেও মত তাদের।

    লোকসভার ৫৪৩ আসনের মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ দক্ষিণাঞ্চলের পাঁচ রাজ্যে। গেলবার এ অঞ্চলে বিজেপি ২৯টি আসনে জয় পেলেও, এবার তাদের লক্ষ্য এর চেয়ে বেশি আসনে জয়। আর সেটি সম্ভব হলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনও সহজ হবে দলটির জন্য। তবে, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চল থেকে বিজেপির এত আসন পাওয়ার সম্ভাবনা এবার খুবই কম। কেননা এ অঞ্চলে আঞ্চলিক দলগুলোর প্রতি মানুষের সমর্থন অনেক বেশি। গেল কয়েক দশক ধরেই আঞ্চলিক দলগুলো এখানে আধিপত্য বিস্তার করে আসছে। এছাড়াও, দক্ষিণাঞ্চলের বাইরেও বিজেপিকে এবার কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হতে পারে বলেও মত অনেকের।

    দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে তামিলনাড়ুতে ভাল ফলের আশা করছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। রাজ্যটিতে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণেই এ বিষয়ে আশাবাদী দলটি। যদিও, অনেকেই মনে করেন এ রাজ্যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি কখনই সমর্থন করেনা ভোটাররা। তামিলনাড়ুতে ন্যায়বিচার ও সমঅধিকার আন্দোলনের দীর্ঘ ইতিহাস থাকায় ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলোকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকেন ভোটাররা। আর তাই, নির্বাচনে এখানে ভাল ফল করার বিষয়ে বিজেপি যে স্বপ্ন দেখছে তা সফল হবেনা বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর ক্ষমতা কমানো কিংবা কেন্দ্রের হাতে ক্ষমতা নেওয়ার চেষ্টা অঞ্চলটিতে মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা স্থানীয়দের।