যুক্তরাষ্ট্ররে আটলান্টা থেকে কানাডায় ছেলে তাশফিন হোসেন তপুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন টিভি নাটকের জনপ্রিয় অভিনেতা জামাল উদ্দিন হোসেন। গেল সেপ্টেম্বরে সেখানে গিয়ে আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। দ্রুত তাকে ভর্তি করা হয় স্থানীয় একটি হাসপাতালে। প্রায় ২৪ দিন অসুস্থতার সঙ্গে সংগ্রাম করে মৃত্যুকে আপন করে নিয়েছেন এই অভিনেতা। কানাডার স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরেই অভিনয়ে অনিয়মিত জামাল উদ্দিন হোসেন। তার শেষ জীবন কেটেছে আমেরিকায়। ২০০৬ সাল থেকে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন তিনি ও তার স্ত্রী অভিনেত্রী রওশন আরা হোসেন। ৮১ বছর বয়সী এই অভিনেতার ছেলে-মেয়ে দুজনই কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বাস করার কারণে তারা দুজনও দুই দেশ মিলিয়ে থাকতেন। মাঝে মধ্যে আসতেন বাংলাদেশে।
২০১৯ সালে দেশের একটি টিভি চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামাল উদ্দিন হোসেন বলেছিলেন তার ইচ্ছের কথা। জানিয়েছিলেন, কণ্ঠশিল্পীদের প্রতি তার প্রচুর দুর্বলতা রয়েছে। বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীত। আর পরজনমে তিনি কণ্ঠশিল্পী হতে চান বলেও জানান।
সাক্ষাৎকারে অভিনেতার কাছে জানতে চাওয়া হয় দীর্ঘ অভিনয়জীবনে কোনো আফসোস রয়েছে কিনা। উত্তরে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘জীবনে যা চেয়েছি মনে হয় তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। ধনী না হলেও সম্মান নিয়ে চাকরি করেছি। ২০১৩ সালে ২১শে পদক পেয়েছি। আর কি থাকতে পারে? তবে পরজনমে কণ্ঠশিল্পী হতে চাই। আমার প্রচুর দুর্বলতা কণ্ঠশিল্পীদের প্রতি। বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীত।’
মঞ্চে তার শেষ অভিনয়ের কথা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, ‘নিউইর্য়ক সিটিতে থাকাকালীন সময়ে দেখেছি অনেকগুলো নাটকের দল সেখানে রয়েছে। তাদের সমন্বয়ে “নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনাসম্বল” নামে প্রতিবছর একটা করে নাটক করতাম। গত ১১ বছরে ১১টা নাটক করেছি। এ ছাড়াও ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব ও “মুক্তধারার” বই মেলায় আমরা স্বামী-স্ত্রী যৌথভাবে “বেলাশেষে” নাটক করেছি। মঞ্চে ২০১৫-১৬তে নিউইয়ার্কে নাটক করেছি।’
এই সময়ের নাটকের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই অভিনেতা বলেন, ‘এখনকার মঞ্চ নাটকের স্ক্রিপ্টগুলো আরও উন্নত হওয়া দরকার। অনেক ব্যবধান আমাদের সময় আর এখনকার সময়ের মঞ্চ নাটকে। অনেক ভালো লাগে মঞ্চ নাটক। ছোট ছোট গ্রুপগুলো অনেক ভালো করছে। যদিও তেমন মঞ্চ নাটক দেখা হয় না। অনেক নির্দেশকের বয়স হয়ে গেছে। অনেকেই ব্যস্ত প্যাকেজ নাটক নিয়ে। গ্রুপ থিয়েটারের সেই উৎসাহ উদ্দীপনা অনেক কমে গেছে। কিছু ভালো কাজ যে হচ্ছে না তা নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথায়, “ভালো জিনিস যত কম হয়, ততই ভালো।”’
অভিনয়জীবনের শুরুতে জামাল উদ্দিন যুক্ত ছিলেন নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে। একটা সময় নাট্যদলটি ছেড়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসাম্বল’। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন এই অভিনেতা।উল্লেখ্য, নাট্যজগতে অনবদ্য ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালে একুশে পদক লাভ করেন জামাল উদ্দিন হোসেন। তার নির্দেশিত আলোচিত মঞ্চ নাটকের মধ্যে ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘রাজা রাণী’, ‘বিবি সাহেব’, ‘যুগলবন্দি’ ইত্যাদি।