Skip to content

মেঘনার পাতারচর এলাকা থেকে অপহৃত চার জেলে উদ্ধার

    মেঘনার পাতারচর এলাকা থেকে অপহৃত চার জেলে উদ্ধার prothomasha.com

    ভোলার মেঘনা নদীর পাতারচর এলাকা থেকে অপহৃত চার জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে জেলেদের একটি পক্ষ জলদস্যুদের ধাওয়া দিলে ওই চারজনকে ফেলে রেখে তারা চলে যায়।উদ্ধার চারজন হলেন ইউসুফ মাঝি, শেখ ফরিদ, হেলাল মাঝি ও দিদার মাঝি। তাঁদের বাড়ি ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার সীমান্তে রামগতির তেলিয়ারচর ও চরজহিরুদ্দিন এলাকায়। গত শুক্রবার পূর্ব মেঘনায় মাছ ধরার জন্য তাঁরা আসেন। তখন জলদস্যুরা ওই চারজনকে অপহরণ করে বঙ্গেরচর এলাকায় নিয়ে আসে।

    এ সম্পর্কে ইলিশা নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বিদ্যুৎ কুমার বড়ুয়া বলেন, জলদস্যুরা ওই চারজনের হাত-পা বেঁধে নৌকার খোন্দলের মধ্যে ফেলে হোগলাবনে আড়াল করে রেখেছিল। তাঁদের পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণও আদায় করেছে জলদস্যুরা। তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার আগেই জেলেরা মেঘনা নদীর বঙ্গেরচর ও ভোলারচরের মধ্যবর্তী পাতারচরে জলদস্যু বাহিনীকে ধাওয়া করেছিল। তখন দস্যুরা অপহৃত চার জেলেকে ফেলে পালিয়ে যায়।

    অপহৃত চারজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের জিম্মি করে পরিবারের কাছ থেকে ৯৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে দস্যুরা। এ ছাড়া নৌকা থেকে চারটি টর্চলাইট, চারটি গ্যাসের চুলা, গ্যাসের সিলিন্ডার, চারটি মুঠোফোন, জাল, মাছসহ প্রায় লাখ টাকার মালামাল লুট করা হয়েছে। বাদশা, সংগ্রাম, মহসিন মাঝি, শহীদ মাঝি প্রমুখ অপহরণের সঙ্গে জড়িত। গতকাল সকালে দস্যুদের কথাবার্তা থেকে তাঁরা এসব নাম জানতে পেরেছেন।

    ডুবোচর দখল নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব
    মেঘনা নদীতে ডুবোচর দখল নিয়ে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। চর দখল করে অবৈধভাবে জাল পেতে মাছ ধরা হয়। সাধারণ জেলেদের অভিযোগ, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বঙ্গেরচর ও ভোলারচর এলাকার মধ্যবর্তী মেঘনার ডুবোচর দখল করে অবৈধ পিটানো জাল পাতে। এসব জালে একবারে এক থেকে দেড় লাখ টাকার মাছ পাওয়া যায়। সাধারণ জেলেদের মারধর করে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

    স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছায়েদ আলী জমাদার। আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওহাব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা বাসু শিকদার ও নাছির খাঁ। গতকাল দিনে ও রাতে বঙ্গেরচর ও ভোলারচর এলাকার মধ্যবর্তী মেঘনা নদীতে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। গতকাল সকালের দিকে ওহাব আলী, বাসু শিকদার ও নাছির খাঁর পক্ষ বঙ্গেরচরে বোমা ফাটিয়ে ও গুলি ছুড়ে ডুবোচর দখলে নেয়। পরে বিকেলের দিকে ছায়েদ আলীর পক্ষ পুনরায় ওই ডুবোচরের দখল নেয়।

    ছায়েদ আলী জমাদার বলেন, ‘আমাদের জেলেরা গতকাল বঙ্গেরচর ও ভোলারচর এলাকার মধ্যবর্তী মেঘনায় মাছ শিকার করতে যান। তখন বাসু শিকদার, ওহাব আলীর ছেলে সাদ্দাম, নাছির খাঁসহ ৫০ থেকে ৬০ জন সন্ত্রাসী তাঁদের জাল পাততে দেয়নি; ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়। এ সময় তারা বোমাবাজি ও গুলি ছোড়ে। পরে বিকেলে যখন তারা লোকজন নিয়ে সেখানে জালপাততে যায়, তখন ওই জলদস্যুরা অপহৃত চার জেলেকে রেখে পালিয়ে যায়।

    তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ওহাব আলী বলেন, বঙ্গেরচর ও ভোলারচরে আমাদের পৈতৃক জমি ছিল। ওই জমি ভেঙে আবার জেগে উঠেছে।  সেখানে আমার কৃষকেরা আবাদ করতে যান। গত ১০ বছরের মধ্যে আমি বা আমার ছেলে চরের ধারেকাছে যাইনি। শত্রুতা করে এখন আমাকে দস্যু সাজানো হচ্ছে। বরং দস্যুতা করেন ছায়েদ আলী। তিনি ডুবোচর দখল করে মাছ ধরাচ্ছেন।’দস্যুবাহিনী লালন-পালনের অভিযোগ অস্বীকার করে বাসু শিকদার বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হেরে গেছেন। এরপর গত ২৩ মে আমাদের জাল ফেলার স্থান দখল করে নেন ছায়েদ আলী জমাদার ও তাঁর লোকজন। গতকাল সকালে আমাদের জেলেরা পুনরায় মেঘনার ওই ডুবোচর দখল করে মাছ শিকার করেন। কিন্তু বিকেলে তাঁরা অস্ত্রশস্ত্রসহ আবার হামলা চালিয়ে ওই ডুবোচরের দখল নেন। জেলেদের কে বা কারা অপহরণ করেছে, তা জানি না।’