মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম প্রধান কাজ। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ১৫ মাস ধরে ৯ শতাংশের ওপরে। এ জন্য ডলারের দাম কৃত্রিমভাবে আটকে রাখা ও ছয়-নয় সুদহার চালু রাখাকে দায়ী করা হয়।সুদের হার কম থাকায় একদিকে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঋণ নিয়েছেন, অন্যদিকে এক বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ৯৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। আবার ডলারের দামও এরই মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের যা করণীয় ছিল, তা নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কতটা করেছে, এ প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এই সময়ে উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারতও নীতি সুদের হার যতটা বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, বাংলাদেশ নীতি সুদহার ততটা বাড়ায়নি। ফলে দেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি রয়ে গেছে। এর চাপ পড়েছে সাধারণ নাগরিকদের ওপর। বিশেষ করে নির্দিষ্ট আয়ের নাগরিকেরা কষ্টের মধ্যে আছেন।বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর তথ্যে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরো অঞ্চল ও ভারতের মতো বাংলাদেশেও ২০২১ সালের জুন মাসের পর থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার দিকে লক্ষ রেখে ২০২২ সালের শেষ থেকেই নীতি সুদহার বাড়াতে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়া প্রতিটি দেশই দ্রুত নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ করেছে ধীরগতিতে। এ ছাড়া বাংলাদেশ ছাড়া অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো দ্রুত অধিক হারে নীতি সুদহার ততক্ষণ পর্যন্ত বাড়িয়েছে, যতক্ষণ না মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি কমে নীতি সুদহারের কাছাকাছি আসা কিংবা আরও নিচে না নামা পর্যন্ত নীতি সুদহারের লাগাম টেনেছে।একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে খুবই ধীরগতিতে। গত বছরের জুলাইয়ে ঋণের সুদের ৯ শতাংশ সীমা প্রত্যাহারের পর থেকে নীতি সুদহার বাড়াতে শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক ধাপ বাড়ানোর পর তারা থেমে যায়, পরে আবার বৃদ্ধি করে। ফলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আসছে নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কতটা পদক্ষেপ নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, এটাই এখন দেখার বিষয়।
সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন সুদহার ৯-৬ শতাংশে ও ডলারের দাম আটকে রাখা হয়েছিল। আবার এক বছরে ৯৬ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না, দুর্ভোগে আছেন দেশের মানুষ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তাদের এতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। অন্য দেশগুলো যেভাবে দ্রুত সুদহার বাড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে, বিলম্বে হলেও বাংলাদেশ ততটা করতে পারেনি। নীতি সুদহার ১০ শতাংশ পর্যন্ত তুলতে পারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে ঋণের সুদহার আরও বাড়ে। টাকা ব্যাংকে আসে, ঋণ কম বিতরণ হয়। এতে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমে আসেকেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ডলারের দামের পাশাপাশি এর সঙ্গে বাজারের শৃঙ্খলা ও সরবরাহ ব্যবস্থা জড়িত, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে নেই। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে যা পদক্ষেপ নেওয়ার, তা নেওয়া হয়েছে। সামনে এমন পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।