যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাংলাদেশি ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংকে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার রেখে মারা গেছেন। তিনি কোনো ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার রেখে যাননি। গচ্ছিত অর্থ নিয়ে বিপাকে পড়েছে ফ্লোরিডা সিটি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। মৃত ব্যক্তি হিসাব নম্বর খোলার সময় কোনো বাংলাদেশি পরিচয়ও ব্যবহার করেননি। কেউ তাঁর ওয়ারিশ প্রমাণ করতে পারলে এ অর্থ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাঁকে পাঠিয়ে দেবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের এক পর্যায়ে সুমন আল রেজা নামে এক ব্যক্তিকে এ কথাগুলো বলেন কথিত ফ্লোরিডা ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয় দেওয়া অলিভিয়া বিল্লি নেন্সি মোহাম্মদ। পুরোটাই ছিল তাঁর ছল। এমন প্রলোভনে তিনি রেজার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কথিত ওই ব্যাংক কর্মকর্তা মার্কিনি বলে পরিচয় দিলেও আসলে তিনিও বাংলাদেশি। গতকাল বুধবার রাতে সোহেল আহম্মেদ অপু নামে ওই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাঁকে মিরপুরের মধ্য পাইকপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এক মাসের বেশি সময়ের অভিযানে অভিনব এ প্রতারণা চক্রের আরও দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি চনপাড়া বস্তি থেকে প্রথমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তলোনকারী মো. আকাশ গ্রেপ্তার হন। ওই দিনই তাঁর দেওয়া তথ্যে কল্যাণপুর বস্তি থেকে উত্তর সিটি করপোরেশেনে মাস্টার রোলের কর্মচারী মো. ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার হন মূল হোতা অপু। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এসে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। এ চক্রের অন্য সদস্যদেরও খুঁজছে সিআইডি।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার একটি মামলা করে ভুক্তভোগী সুমন আল রেজা। সেখানে তিনি চারজনের নাম উল্লেখ করেন। তারা হলেন– প্রতারণা চক্রের মূলহোতা মার্কিন ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয়ধারী অলিভিয়া বিল্লি নেন্সি মোহাম্মদ, কথিত আইনজীবী মিস্টার জনসন, কথিত ফ্রিডেক্স কোম্পানির ম্যানেজার জেকঅফ ও তাদের সহযোগী কেট কে লোর্ভাস। সিআইডি মামলার তদন্তে নেমে জানতে পারে– তারা কেউ মার্কিন ব্যাংক কর্মকর্তা নন। তারা দেশের অভ্যন্তরের একটি প্রতারক চক্র।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার (দক্ষিণ) বিভাগ এ ধরনের প্রতারক চক্রের আরও চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই চারজনের সঙ্গেও অপুর যোগাযোগ ছিল। এ চক্র আরেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ৯৮ লাখ টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, চক্রের ফাঁদে পড়ে ভুক্তভোগী রেজা খুইয়েছেন ৭২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ডলারভর্তি লাগেজের অপেক্ষায় তিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে ৩০ ঘণ্টা অপেক্ষায়ও ছিলেন। পরে প্রতারণার মামলা করেন।
সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, এ চক্রের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও টাকা লেনদেনের ধরন দেখে পিলে চমকে যাওয়া অবস্থা। চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দোকান ও অফিস ভাড়া নেওয়ার কথা বলে মালিকদের সঙ্গে চুক্তিপত্র করে। পরে ওই চুক্তিপত্র নিয়ে এলাকা থেকে সটকে পড়ে। সেই অফিস ভাড়ার চুক্তিপত্র দেখিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে। এ পর্যন্ত চক্রের লাইসেন্স করা প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারি-বেসরকারি মিলে ৩৫টি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট রয়েছে। এসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে পাঁচটিতে ছয় কোটি টাকা লেনদেনর তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাকি অ্যাকাউন্টগুলোর এখনও ব্যবহার হয়নি।
সূত্র জানায়, এসব অ্যাকাউন্টের কোনোটিই তাদের নামে করা নয়। প্রতারণার টাকা এসব ভুয়া হিসাব নম্বরে আসার পরই কয়েকজন তা তুলে ব্যক্তিগত হিসাব নম্বরে সরিয়ে নেয়। প্রতারক চক্রটি মিরপুর এলাকায় বেশি সক্রিয়। অপুর ডাচ্বাংলা ব্যাংকে দুই মাসে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।