মা শব্দটির মধ্যে পৃথিবীর সকল আবেগ নিহিত। সেই সব আবেগ ফুটিয়ে তুলতে চলচ্চিত্র সবচেয়ে বড় মাধ্যম। দেশ-বিদেশের চলচ্চিত্রকারেরা মাকে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে সাবলীলভাবে উপস্থাপনা করেছেন। সেগুলোর অধিকাংশই দর্শকনন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছে। মাকে নিয়ে নির্মিত সেরকম ৫টি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের কথা জানাব সংক্ষিপ্ত পরিসরে। শুরুটা করা যাক দেশ থেকে।
মাকে নিয়ে নির্মিত তুমুল জনপ্রিয় সিনেমার নাম—আম্মাজান। ছবির পরিচালক ছিলেন কাজী হায়াত। সন্তানের সামনে মায়ের সম্ভ্রমহানি ও তারই প্রতিশোধ নেশায় মত্ত থাকা সন্তানের গল্পে নির্মিত হয়েছে এই সিনেমা। এতে প্রধান চরিত্রের অভিনেতা ছিলেন মান্না। আর মায়ের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন শবনম। মান্নার লিপে আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া ‘আম্মাজান আম্মাজান’ গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি আশাতীত ব্যবসা করে।
বলিউডের ‘মাদার ইন্ডিয়া’ মাকে নিয়ে নির্মিত এক মহাকাব্যিক সিনেমা। এটি পরিচালনা করেন মেহবুব খান। রাধা নামে এক দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামের নারীকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এর গল্প। স্বামীর অনুপস্থিতিতে সে কীভাবে ছেলেদের লালন-পালন করে এবং ধূর্ত-ধনদাতার বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই করে—সেটাই দেখানো হয়েছে। এতে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন নার্গিস। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে মুক্তি পায় এটি।
বাবাহীন এমাকে আগলে রেখে অরোরা খুঁজে ফেরে সত্যিকারের ভালোবাসা। এদিকে এমাও বড় হয়ে জড়িয়ে পড়ে জটিল এক সম্পর্কে, নিজেও অর্জন করে মাতৃত্বের স্বাদ। তাদের চারপাশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলেও একান্ত গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে এই মা-মেয়ে দুজনেই এগিয়ে আসে একে অপরের সাহায্যে। মা-মেয়ের ত্রিশ বছরের এই গল্প নিয়েই ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় টার্মস অব এনডিয়ারমেন্ট। ছবির পরিচালক জেমস এল. ব্রুকস। ১৯৮৫ সালে হলিউডে মুক্তি পায় জীবনীভিত্তিক ছবি মাস্ক। ছেলের অসুখের সঙ্গে মায়ের লড়াই চোখে পড়বে সত্য ঘটনার এই ছবিতে। কানের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারটা গিয়েছে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা শেরের ঝুলিতে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় কুঁকড়ে যাওয়া মানবতার করুণ গাথা সবচেয়ে ভালোভাবে তুলে এনেছিলেন ইতালীয় নির্মাতা ভিত্তোরিও ডি সিকা। আলবার্তো মোরাভিয়ার লেখা ‘টু উইমেন’ উপন্যাসকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন। যুদ্ধের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া এক মা শত্রুশিবিরের লালসা থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রাম-এর সব কিছুই এতে উঠে আসে। মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সোফিয়া লরেন। এই চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় তাকে এনে দিয়েছিল অস্কারসহ মোট ২২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। আজও সেলুলয়েডে সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রামের অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে অমর হয়ে আছে ১৯৬০ সালের এই সিনেমাটি। এ ছাড়া মাকে নিয়ে অসংখ্য সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সেগুলোতে সন্তানের প্রতি মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসার চিত্র ফুটে উঠেছে।