পৃথিবীর চারপাশ ঘিরে রয়েছে মহাশূন্য। আর এই মহাশূন্য থেকে যত দূরে যাওয়া যাক না কেন, দেখা মিলতে থাকে নানা ধরনের মহাজাগতিক বস্তু। মহাবিশ্বের এমন কোনো গভীরতম শূন্য বা খালি জায়গায় যাওয়ার সুযোগ পেলে আপনি কী করবেন? অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে—মহাশূন্যের শূন্যতা আসলে কী? এই প্রশ্নের উত্তর বহু শতাব্দী ধরে মানুষ খুঁজছে। ১৬ শতকে জার্মানির ম্যাগডেবার্গ শহরের মেয়র অটো ভন গুয়েরিক প্রথম শূন্যতা বিষয়টি জানার চেষ্টা করেন। এ জন্য তিনি একটি ভ্যাকুয়াম পাম্পও উদ্ভাবন করেন। পরীক্ষার সময় ভ্যাকুয়াম পাম্পে থাকা গোলক দুটির ভেতর থেকে সব বাতাস বের করে দেন ভন গুয়েরিক। এরপর সেই গোলক দুটি টেনে আলাদা করার জন্য দুটি ঘোড়ার দলের সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু গোলক দুটি এতটাই শক্তভাবে লেগে যায় যে ঘোড়ার দলগুলো তা টেনে আলাদা করতে পারেনি।
মার্কিন জ্যোতির্বিদ পল সাটার জানান, ভন গুয়েরিকের সেই পরীক্ষার পর দার্শনিক ও বিজ্ঞানীরা মনে করতেন মহাশূন্যের বিস্তীর্ণ এলাকা ইথারে পরিপূর্ণ। ইথারের কারণে সত্যিকারের শূন্যতা তৈরি হয় না। তবে ইথারের কারণে আলো তরঙ্গের মাধ্যমে দূরে চলে যায়। আঠারো শতকের শেষের দিকে পদার্থবিদ অ্যালবার্ট মাইকেলসন ও এডওয়ার্ড মোর্লে আলোর গতি নিয়ে একটি পরীক্ষা করেন। ইথারের মাধ্যমে আলোর গতি পরিবর্তনের চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু সেই পরীক্ষা পরে ব্যর্থ হয়। ফলে বিজ্ঞানীরা শেষ পর্যন্ত ইথারের ধারণা থেকে সরে আসেন।
জ্যোতির্বিদদের তথ্যমতে, পৃথিবী থেকে অনেক দূরে মহাশূন্যের চারপাশে প্রচুর চার্জযুক্ত কণা ও হাইড্রোজেন পরমাণু ঘুরে বেড়াচ্ছে। আন্তনাক্ষত্রিক স্থানের ঘনত্ব মানুষের তৈরি ভ্যাকুয়াম চেম্বারের তুলনায় শতকোটি গুণ কম হলেও মহাশূন্য শতভাগ খালি বা শূন্য নয়। মহাবিশ্বের খালি জায়গায় পৌঁছানোর জন্য আমাদের মহাজাগতিক শূন্যতায় যেতে হবে। সবচেয়ে বড় শূন্যস্থানের গভীরতায় পৌঁছাতে হলে আমাদের কাছের ছায়াপথ থেকে কয়েক লাখ আলোকবর্ষ দূরে যেতে হবে।
মহাশূন্যের শূন্যস্থান এতটাই খালি যে সেখানে কোনো ডার্কম্যাটারের অস্তিত্ব নেই। সত্যিকার অর্থে সেখানে শূন্যতার দেখা মেলা কঠিন। মহাশূন্যজুড়ে হালকা ওজনের নিউট্রিনো কণা আর মহাবিশ্বের প্রথম দিন থেকে চলে আসা বিকিরণের দেখা মেলে। মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড নামে পরিচিত এই বিকিরণ মহাবিশ্বের সব বিকিরণের ৯৯ শতাংশের জন্য দায়ী। এই বিকিরণ থেকে পালানো অসম্ভব।