নাম তাঁর ভরত জৈন। বয়স ৫৪। বাস করেন ভারতের অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইয়ে। চার দশকের বেশি সময় ধরে ভিক্ষা করছেন তিনি, অর্থাৎ এ ‘পেশা’য় তাঁর হাতেখড়ি কৈশোরে। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ টার্মিনাস রেলওয়ে স্টেশন কিংবা আজাদ ময়দানের মতো স্থান তাঁর ‘কর্মস্থল’। রোজ একটানা ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা ভিক্ষা করে ভরতের ‘রোজগার’ হয় দুই থেকে আড়াই হাজার রুপি। ‘কাজ’-এর মাঝখানে বিরতি তো নেনই না, ‘ছুটির দিনে’ বাড়িতে অলস দিনযাপনও করেন না। এতটা ‘অধ্যবসায়ী’ এই ভিখারির মোট সম্পদ কত, জানেন? সাড়ে সাত কোটি রুপি বা প্রায় এক মিলিয়ন মার্কিন ডলার! ভরতের সম্পদের মধ্যে আছে দুই বেডরুমের একটা ফ্ল্যাটও। কেবল এই ফ্ল্যাটের মূল্যই ১ কোটি ২০ লাখ রুপি। ফ্ল্যাটটিতে তাঁর সঙ্গে থাকেন বাবা, ভাই, স্ত্রী ও দুই ছেলে। ছেলেদের একটা আশ্রমভিত্তিক স্কুলে পড়িয়েছেন ভরত।
এত এত সম্পদের কারণেই ভরতকে বলা হয় ‘দুনিয়ার সবচেয়ে ধনী ভিখারি’। তবে ভরতের পরিবারের অন্যরা কিন্তু এত ‘মর্যাদা’ থাকা সত্ত্বেও তাঁর পেশা নিয়ে ভীষণ নাখোশ। এমন অসম্মানের কাজটা তাঁরা ছেড়ে দিতে বলেছেন বহুবার। কে শোনে কার কথা! ভরতের ভাষ্য, তিনি অভাবের তাড়নায় ভিক্ষা করেন না; বরং তিনি ভিক্ষাবৃত্তি উপভোগ করেন। তাই এই জীবনধারা থেকে বেরিয়েও আসতে চান না। ভরতের পরিবারের অন্য সদস্যরা একটা স্টেশনারি দোকান চালান। দোকান কিন্তু ভরতেরও আছে। তাও আবার একটি নয়, দুটি। দোকানভাড়া থেকে তাঁর মাসিক আয় ৩০ হাজার রুপি। অর্থাৎ ভিক্ষাবৃত্তিই তাঁর একমাত্র পেশা নয়। তবু তিনি ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে চান না। এত আছে, তবু ভিক্ষা করছেন। ভরত কি তাহলে লোভী? নাহ্, নিজেকে ‘লোভী’ মানতেও নারাজ ভরত; বরং ‘উদার’ বলেই দাবি করেন। কেননা তিনিও যে ‘দান-খয়রাত’ করেন, মন্দিরে টাকা দেন! সবচেয়ে সম্পদশালী ভিখারি হিসেবে নিজেকে নিয়ে তিনি রীতিমতো গর্বিত।
ভারতে কিন্তু আরও বেশ কজন ‘ধনী ভিখারি’ আছেন। ‘সাম্ভাজি কালে’ নামের এক ভিখারির মোট সম্পদ দেড় কোটি রুপি, ‘লক্ষ্মী দাস’ নামের আরেকজনের সম্পদ এক কোটি রুপি। ধারণা করা হয়, ভারতের ভিখারিদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি রুপি। তবে এসব ধনী ভিখারিকে দেখে কিন্তু বোঝার উপায় নেই যে তাঁরা আদতে কতটা ধনী। সম্পদশালী ব্যক্তিকে তো আর কেউ ভিক্ষা দিতে চাইবেন না! তাই ‘পেশা’র সঙ্গে মানানসই রূপেই থাকেন তাঁরা।
ভারতে ভিক্ষাবৃত্তি অবৈধ। দেশটির সরকার ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে নিয়েছে নানা উদ্যোগ। কখনো ভিখারিদের জরিমানা করা হয়, কখনো আবার করা হয় গ্রেপ্তারও। পুনর্বাসনের প্রক্রিয়াও চলে। এত প্রচেষ্টার পরও ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেন অনেক মানুষ। তাঁরা খেটেখুটে রোজগার করার চেয়ে ভিক্ষা করতেই বেশি পছন্দ করেন। আর রোজগারও তো মন্দ নয়! কেউ কেউ আবার ভিখারিদের চক্রের হোতা, অন্য ভিখারিদের শাসন–শোষণও করেন! আর ওই ভিখারিদের ‘আইডল’ ভরত জৈন!